
সূচি পত্র
১.কিয়ামতের আলামতঃছোট লোকেরা সমাজের কর্ণধর হওয়া
২. কিয়ামতের আলামতঃ মূর্খ ইবাদতকারী ও গুনাহগার ক্বারীদের প্রবনতা
৩. কিয়ামতের আলামতঃমসজিদ সমূহ জাকজমক পূর্ণ করা হবে মুলত হেদায়েত হতে খালি হয়ে যাবে
৪. কিয়ামতের আলামতঃ আল্লাহর কুদরাত অস্কীকার করে বাস্তবাদীতে বিশ্বাসী হওয়া
৫. কিয়ামতের আলামতঃ ধনিরা গরীবের সাহায্যের স্থলে জুলুম করবে
৬. কিয়ামতের আলামতঃ ধর্ম কর্ম ইত্যাদি লোকদেখানো প্রবনতা বেড়ে যাবে
৭. কিয়ামতের আলামতঃ অত্যাচারী ও দূর্নীতিবাজদের নেতৃত্ব দিবে
৮. কিয়ামতের আলামতঃ আল্লাহ ওয়ালা ও ঈমানদারদের প্রতি অসদ আচারন করবে
৯. কিয়ামতের আলামতঃ অযোগ্য ব্যক্তিকে ভোট ও অন্যন্ন মিথ্যা শাক্ষী প্রদান
১০. কিয়ামতের আলামতঃ যাকাত আদায় করতে মনে কষ্ট অনুভাব হওয়া বা লুকোচুরী করা
১১. কিয়ামতের আলামতঃ মিথ্যা প্রচার মাধ্যম সমূহ
১২. কিয়ামতের আলামতঃ মাতা পিতার অবদ্ধতা, মেয়েদের অশ্যালীন চাল চলন
১৩. কিয়ামতের আলামতঃ গরীব রাতা রাতী ধনী হয়ে সম্পদের পাহাড় গড়া ও অপব্যবহার করা
১৪ কিয়ামতের আলামতঃ অনুপুযুক্ত ব্যক্তিকে পদতিক বা পদান্নতী করা
১৫. কিয়ামতের আলামতঃ উপযুক্ত ইমাম পাওয়া যাবে না
১৬. কিয়ামতের আলামতঃ যৌতুকের লোভে বিয়ের প্রবনতা
১৭. কিয়ামতের আলামতঃ আত্বীয়তা সম্পর্ক বিছিন্নতার প্রবনতা
১৮. কিয়ামতের আলামতঃ বদ দ্বীন লোকের থেকে ইলম ত্বলবের প্রবনতা বৃদ্ধী হওয়া
১৯. কিয়ামতের আলামতঃ ইসলাম অপরিচিত মানুষের আয় কমে যাওয়া দালান কোঠায় হিড়িক উসৃস্খলা বৃদ্ধ সন্তানাদি নিয়ে দুশ্চিন্তা ইত্যাদিী
২০. কিয়ামতের আলামতঃ রশালু কথা বার্তা আর কজের তিক্ততা
২১. কিয়ামতের আলামতঃ যুবতীদের অবাদে মেলা মেশা ও সহ শিক্ষার প্রবনতা
২২. কিয়ামতের আলামতঃ দ্বীনকে তামাশার বস্তু রুপে গন্য করা হবে
২৩. কিয়ামতের আলামতঃ ছোট বড় সমববেশে আসল আল্লাহ ওয়ালাদের অনুপস্থিতি
২৪. কিয়ামতের আলামতঃ মসজিদে প্রবেশ করে কোন আমল না করে বের হয়ে যাওয়া
২৫. কিয়ামতের আলামতঃ ছেলে—ছেলে মেয়ে—মেয়ের সহিত অবৈধ প্রবনতা
২৬. কিয়ামতের আলামতঃ ইরাকের সৎ লোকদের সিরিয়ায় ওসিরিয়ার অন্য লোকদের ইরাক প্রত্যাবর্তন
২৭. কিয়ামতের আলামতঃ মসজিদের মধ্যে দুনিয়াবী আলাপ চারিতা
২৮. কিয়ামতের আলামতঃ ঈমান দ্বীন রক্ষা করতে ভাল লোকেরা দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াইত
২৯. কিয়ামতের আলামতঃ উত্তর সুরীদের কে সঠিক ভাবে মিরাস প্রদান না করা
৩০. কিয়ামতের আলামতঃ পতিবেশী খারাপ হওয়া আত্বীয় সম্পর্ক বিছিন্ন করা ও দ্বীনের জন্য নিবেদিত প্রান না হওয়া
৩১. কিয়ামতের আলামতঃ ও গুনাহ।গাল মন্দ করা , অসৎ চরিত্রবান হওয়া
৩২. কিয়ামতের আলামতঃপ্রচলিত পুলিশ বাহিনীর লাঠি ও নারীদের নগ্নতা
৩৩. কিয়ামতের আলামতঃ নামাজ তরক করা,আমানত খেয়ানত করা, ছোট লোকদের নেতৃত্ব ইত্যাদি
৩৪. কিয়ামতের আলামতঃ ওয়াদা খেলাফী, ব্যবষায়ী কাজে মহিলদের সম্পৃক্ততা,ঘুষের প্রবনতা নেতৃত্বস্থানীয় লোকেরা মিথ্যাবাদি হওয়া ইত্যাদি
৩৫. কিয়ামতের আলামতঃ উলামায়ে কেরামকে কঠিন ভাবে হত্যা করা হবে
৩৬. কিয়ামতের আলামতঃ উলামায়ে কেরামের নিকট স্বর্ণ হতে মৃত শ্রেয় মনে হবে
৩৭. কিয়ামতের আলামতঃ শাষক গোষ্ঠী জালেম ও স্বৈরাচারী হওয়া
৩৮. কিয়ামতের আলামতঃ ফেৎনার সময় হক ও সুন্নাতের উপর অটল লোকদের কে ৫০ জন শহীদের সওয়াব প্রদান করা হবে
৩৯. কিয়ামতের আলামতঃ ভাল মানুষ গুলো চলে গিয়ে মন্দ মানুষের আবাশ স্থল হবে এ পৃথিবী
৪০. কিয়ামতের আলামতঃ এই নশ্বর পৃথিবীতে হকের উপর অবিচল থাকতে পারবে কারা?
৪১. কিয়ামতের আলামতঃকিয়ামতের আগ মূহুর্তে যখন আহলে হক না থাকবে তখন একাধিক জিবনেই শ্রেয় হবে
৪২. কিয়ামতের আলামতঃ কিয়ামতের পূর্বে মুহুর্তে শাষক গোষ্ঠি অত্যাচারী হলে উম্মাতের করনীয় কি হবে
৪৩. কিয়ামতের আলামতঃ কিয়ামতের পূর্বে ভ্্রান্ত মতবাদ হতে দূরে থেকে ছহীহ দ্বীনের উপর অবিচল থাকার নির্দেশ
৪৪. কিয়ামতের আলামতঃ ফেৎরনার সময় উম¥তে মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করা হতে বিরত থাকার নবীর নির্দেশ
৪৫. কিয়ামতের আলামতঃকিয়ামতের আগে ফেৎনার যুগে অল্প আমাল ও নাজাতের উসিরলা হবে
৪৬. কিয়ামতের আলামতঃ মসজিদে উচু আওয়াজে কথা বলা,পাপিরা সমাজের কর্ণধর হওয়া
৪৭. কিয়ামতের আলামতঃ প্রাচুর্যের ে¯্রাত বয়ে যাওয়া
৪৮ কিয়ামতের আলামতঃ পাহাড় স্বস্থান হতে সরে যাবে.
৪৯. কিয়ামতের আলামতঃ অত্বধিক ভুমিকম্প হওয়া
৫০. কিয়ামতের আলামতঃ দিন কাল খাট হওয়া, আসমানী ইলম উঠে যাওয়া,গুম হত্যা বেড়ে যাওয়া
৫১. কিয়ামতের আলামতঃ হজ্ব উমরা আদায় করার উপর বিভিন্ন বাধা বিপত্তি বেড়ে যাওয়া
৫২. কিয়ামতের আলামতঃ হজরে অসওয়াদ উঠিয়ে নেয়া হবে, যা হবে একে বারে শেষ মুহুতে
৫৩. হযরত শাহ নিয়ামতুল্লাহ (রহঃ) এর ভবিশ্যৎ বানী সমূহ
৫৪. ৮৪৭ বছর পূর্বেকার অর্থাৎ ৫৭ হিজরি সনের আরো কিছু ভবিষ্যৎ বাণী
৫৫. হযরত ইমাম মাহদী (রা.) এর পরিচিতি
৫৬. আল্লাহর নবীর নির্দেশ যে, তোমরা কালো পতাকা বাহীদের সহিত মিলে যাও
৫৭. বরফে ঘিরা পথ অতিক্রম করে যারা অগ্রসার,তাদের মহিত মিলিত হবার নির্দেশ
৫৮. ফেৎনার ঢল
৫৯. নবী হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামের পরিচয়
৬০. ন্যায় পরায়নতার বরকত
৬১. দাজ্জালের পরিচয়
৬২. দাজ্জাল ও বিছানের বাগান
৬৩. দাজ্জালের আবাসস্থলঃ
৬৪. কিয়ামতের আলামতঃ পৃথিবীতে গরমের মাত্রা বেড়ে যাওয়া
৬৫. কিয়ামতের আলামতঃ ইয়াহুদীদের গরগদ গাছের চাষাবাদ
৬৬. কানা দাজ্জাল ও বেঈমান মুনাফিক
৬৭. কানা দাজ্জাল আর বর্তমান প্রেক্ষাপটঃ
৬৮. কিয়ামতের আর ইয়াজুজ—মাজুজ
ভূমিকা
حامدا و مصليا و مسلما اما بعد
আল্লাহ পাক যে দিন এই নশ্বর দুনিয়া তৈরী করেছেন তার আজ থেকেই এই দুনিয়ার ধংষের সিদ্ধান্ত করে রেখেছেন তাই বলেনঃكل من عليها فان । অর্থ এই দুনিয়াতে যা আছে সবই ধংসশীল كل شيئ هالك الا وجهة আল্লাহর সত্বা ব্যতিত সবই ধংসশীল বিধায় সেই কঠিন প্রলয় কিয়ামত করার আগেই আল্লাহ তায়ালা তার কিছু পূর্বাভাস সংগঠিত করবেন যার দ্বারা জ্ঞানী ও বুদ্ধীমান লোকেরা শিক্ষা গ্রহন শেষ গোছায়ে নিবে
কিয়ামতের পূর্ব আবাষ (আলামত) অনেকই আছে তম্মধ্যে কতিপয় আলামত এই ক্ষুদ্র পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিষেশ ভাবে হাদীসে বর্ণিত কিয়ামতের আলামত এর মধ্যে অনেক কথার ব্যাখ্যা যুগের সাথে আমাদের কালচারের সাথে সমন্বয় করে তুলে ধরার দরকার ছিল । কিন্তু যেহেতু অনেকের মধ্যে ঐ সব কথা বোঝ করার যোগ্যতা নাই ,উপব্দি করে তার থেকে ক্ষান্ত করলাম।তার বাস্তব জ্ঞানী গুণী ও শৃজনশীলগণ অবশ্যই তা বুঝতে সক্ষম হবেন।
কিয়ামত (সেই মহা প্রলয়) তো অবশ্যই আল্লাহ পাক কায়েম করবেন ياايها الناس اتقوا ربكم ان زلزلت الساعة شيئ عظيم অর্থঃ হে তামাম দুনিয়ার লোকেরা তোমরা তোমাদের রব (প্রতি পালক) কে ভয় কর। অবশ্যই সেই মহা প্রলয় মারাত্বক ভয়াবহ।
তবে আমাকে ও আপনাকে অবশ্যই লক্ষ করে চলতে হবে যেন আমার ও আপনার আচরন ও কার্জ কালাপ কিয়ামত কায়েম হবার কারন আর মাধ্যম না হয়। নতুবা কঠিন সাজার সম্মুখিন হওয়া লাগবে যার থেকে এড়াবার কোন সুযোগ থাকবে না। সে জন্যই পুস্তিক খানা উম্মাতের সামনে পেশ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি ।
গ্রহন যোগ্য কিতাবাদি থেকে বাছাই করে সামান্যকিছু কথা এখানে প্রকাশ করার চেষ্টা করছি।
তবে যেহেতু আমার ইলমের পরিধি একে বারেই অতি সামান্য সে কারনে এতে অনিচ্ছাকৃত ভাবে ভুল ত্রুটি থেকে যেতে পাবে। (আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করবেন)তাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখে আমাকে অবহিত করাইলে আশা করি আগামী সংষ্করনে যথা সাধ্য শুধরিয়ে দিব। ان شاء الله العزيزআমি দুয়া করি আল্লাহ পাক আমাকে ও প্রিয় পাঠক কে ও সকল উম্মত কে কিয়ামতের সেই আলামত থেকে বাচিয়ে ঈমান ও আমালের হেফাজত করে চলবার তৌফিক দান করেন। এবং সকলের কাছে দুয়ার ভিক্ষারী, যেন আল্লাহ তায়ালা এ অধম কে স্বীয় অনুগ্রেহে ক্ষমা করে দিয়ে কবুল করে নেন। এবং উম্মতের খাতিরে ইসলামের সহিত আল্লাহর দ্বীনের জন্য নিবেদিত প্রান হয়ে জিবন উৎসর্গ করতে পারি। আমীন!
দুয়ার ভিক্ষুক
মুহিববুল হক গফারালাহু
ফাজেলে দারুল উলুম হাটহাজারী
মুকীম হালিয়া
ইসলামপুর(ভবানীপুর)মাদ্রাসা,কাঠী
গোপালগঞ্জ
যাদের জন্য উৎসর্গ
এই ক্ষুদ্র পুস্তিকা খানা আক্কায়ে নামধার তাজদারে মদীনা স্যাইয়িদুল মুরসালীন, খাতিমুল আম্বিয়া শাফিউল মুজনিবীন,সাহিবুশ শাফায়াত হযরত মুহাম্মাদুর রসূলল্লাহ ﷺ এর উপর এবং তার সকল উম্মতের উপর উৎসর্গ করিলাম । হে মহান ক্ষমতাবান আল্লাহ সকল ক্ষমতার এক মাত্র উৎস অনুগ্রহ করে কবুর করুন।
মুহিব্বুল হক
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لوليه والصلاة والسلام على اهلها اما بعد
আজ ২৪ জিলকদ ১৪৩২ হি. বেলা ১১:১৫ মি. পবিত্র হজ্জ সফরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা الامارات প্লেনে সফর হচ্ছে। সফরের মধ্যে কিয়ামতের ভয়ংকর প্রলয়ের ধ্বংস সম্পর্কে কুরআন, হাদীসে বর্ণিত পূর্ব আলামাত (পূর্বাভাস) সম্পর্কিত কথা ছহীহভাবে উম্মাতের সামনে পেশ করার চেষ্টা করেছি। আল্লাহ্ আমার লিখনী টুকু কবুল করুন। হজ্জের সফর সহজ করে দেন এবং গোটা উম্মাৎ ও মানব জাতিকে হেদায়াত দান করেন। কিয়ামত কায়েম হওয়ার কারণ সমূহ নাফরমানি ও গুনাহ হতে বাঁচার তৌফিক দান করেন, آمين এখন আরব আমিরাত প্লেনে চলন্ত অবস্থায় আকাশ ও জমিনের মাঝে বসে লিখছি। আল্লাহ্ তুমি কবুল কর।
قال الله تعالى : يا ايها الناس اتقوا ربكم ان زلزلة الساعة شيئ عظيم يوم ترونها تذهل كل مرضعة عوما ارضعت وتضع كل ذات حمل حملها وترى الناس سكرى وماهم بسكرى ولكن عذاب الله شديد(সূরায়ে হজ্জ)
আল্লাহ্ বলেন: হে লোক সকল তোমরা তোমাদের প্রভূকে ভয় কর, নিশ্চয় কিয়ামতের সে মহা প্রলয় মারাত্মক কঠিন। যে দিন তোমরা সে কিয়ামত দেখবে সে দিন সমস্ত স্তন্যদাত্রী মা নিজের বাচ্চাকে দুধ পান করাতে ভুলে যাবে, প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলা তার নিজ গর্ভপাত করে ফেলবে এবং তুমি লোকদের দেখলে নেশা গ্রস্ত (মাতাল) বলে মনে করবে। মূলত: তারা নেশাগ্রস্ত নয়; বরং এটা তাদের উপর আল্লাহ্ পাকের কঠিন আযাব। কুরআন হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী কিয়ামতের আলামাত তিন প্রকার:
প্রথম আলামত: রসুলুল্লাহ্ (স:) এর ওফাত, হযরত ওমর (রা:) এর শহীদ হওয়া, তাতারীদের যুদ্ধ ও মানব হত্যার করুণ কাহিনী ইত্যাদি। এ আলামাত গুলি ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়ে গেছে।
۞কিয়ামতের আলামতঃছোট লোকেরা সমাজের কর্ণধর হওয়া۞
দ্বিতীয় আলামাত: এ পর্যায়ের আলামাত সমূহ পর্যায়ক্রমে সংগঠিত হতে থাকবে এবং দিন দিন তার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। যেমন, রসুলুল্লাহ্ (স:) ইরশাদ করেন: لكع بن لكع لا تقوم الساعة حتى يكون اسعد الناس بالدنيا (رواه احمد)অর্থাৎ কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত হীনমন্যতার সন্তান সেও হীনমন্যতার হয়েও জনপ্রিয়তা অর্জন না করবে। রসূল আকরাম (স:) বলেন: অচিরেই এমন যুগ আসছে যে তাদের মধ্যে দ্বীনের উপর ছবরকারী জ্বলন্ত অঙ্গার মুঠির মাঝে বহনকারীর ন্যায় হবে। (তিরমিযি)
۞কিয়ামতের আলামতঃ মূর্খ ইবাদতকারী ও গুনাহগার ক্বারীদের প্রবনতা۞
عن انس رضـ يكون فى اخر الزمان عباد جهال وقراء فقة (رواه ابونعيم والحاكم)
অর্থাৎ হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত যে, শেষ জামানায় আবেদগণ জাহেল হবে। অর্থাৎ কোন রূপ যাচাই বাছাই না করে জাহালাত বা মূর্খতার সাথে ইবাদত বন্দেগী করবে। কুরআন পড়নে ওয়ালা ফাসেক হবে। যেমন বর্তমান দুনিয়াতে অনেক নামকরা ক্কারী আছেন যারা প্রকাশ্যে অনেক গুনাহে লিপ্ত।
۞কিয়ামতের আলামতঃমসজিদ সমূহ জাকজমক পূর্ণ করা হবে মুলত হেদায়েত হতে খালি হয়ে যাবে۞
عن انس رضـ لا تقوم الساعة حتى تيبا هى الناس فى المساجد (رواه احمد)
হযরত আনাস (রা:) থেকে বর্ণিত: কিয়ামতের পূর্বে লোকেরা মসজিদের ব্যাপারে গর্ব করতে থাকবে। অর্থাৎ মসজিদ সমূহ অত্যন্ত জাঁক—জমকপূর্ণ বানানো হবে। নিজেদের মসজিদকে সুন্দর রূপে প্রকাশ করার জন্য দামী পাথর, মূল্যবান লাইটিং, উন্নত কার্পেট ইত্যাদি দ্বারা সজ্জিত করা হবে এবং পরস্পরের মধ্যে অহংকার ও গর্ব করতে থাকবে; কিন্তু মসজিদের মূল লক্ষ্য হেদায়াত অর্থাৎ আখেরাতের চিন্তা, ফিকির লোপ পেতে থাকবে। এ অবস্থাটা কিয়ামতের আলামত বলে গণ্য।
۞কিয়ামতের আলামতঃ আল্লাহর কুদরাত অস্কীকার করে বাস্তবাদীতে বিশ্বাসী হওয়া۞
عن ابن مسعود وانس رضـ من اقترت الساعة انتفاخ الا هلة وان برى الهلال قبلا اى ساعة مابطلع فيقال للدين (رواه الطبرانى)
হযরত ইবনে মাসউদ ও আনাস (রা:) থেকে বর্ণিত: কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে নতুন চাঁদ মোটা হয়ে উদয় হবে তখন লোকেরা ১ম তারিখের চাঁদকে বলতে থাকবে যে এটা দ্বিতীয় তারিখের চাঁদ। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক যে চাঁদকে চিকন বা মোটা করে উদয় করতে পারেন তা অস্বীকার করে বলতে থাকবে যে, এটা দুই দিনের চাঁদ, যা কিয়ামতের একটি আলামাত।
۞কিয়ামতের আলামতঃ ধনিরা গরীবের সাহায্যের স্থলে জুলুম করবে۞
عن المرداس الاسلمى رضـ من اقترا الساعة كثرة المطر وقلة النبات وكثرة القراء والعباد وقلة الفقهاء وكثرة الامراء وقلة الاسناء (رواه الطبرانى)
হযরত মিরদাদ আসলামী (রা:) হতে বর্ণিত: কিয়ামত নিকটবর্তীকালীন সময়ে বৃষ্টি অনেক বেশী হবে; কিন্তু গাছপালা (ফসলাদি) কম হবে। কুরআন পড়নে ওয়ালা অনেক হবে এবং ইবাদত গুজারও অনেক হবে; কিন্তু দ্বীনের ফাকাহাত অর্থাৎ অন্তরঙ্গভাবে দ্বীনের প্রতি আগ্রহ ও ইসলামের চেতনাবান ব্যক্তিবর্গ অত্যন্ত কম হবে। ধনী লোকের সংখ্যা অনেক হবে; কিন্তু আমানতদার লোকের সংখ্যা একেবারে কম হবে। অর্থাৎ ধনী হওয়া সত্বেও অন্যের মালের প্রতি লোভ—লালসা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অন্যের খেয়ানত ও জুলুম করতে করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। এটা কিয়ামতের একটি আলামাত।
۞কিয়ামতের আলামতঃ ধর্ম কর্ম ইত্যাদি লোকদেখানো প্রবনতা বেড়ে যাবে۞
عن ابى هريرة رضـ لا تقوم الساعة حتى يكون الزهد رواية والورع تصنعا (رواه ابونعيم)
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত: কিয়ামত নিকটবর্তীকালীন সময়ে মানুষের ধর্ম—কর্ম, সাধনা ইত্যাদি লোক দেখানো হবে এবং তাকওয়া পরহেজগারী লৌকিকতাপূর্ণ হয়ে যাবে। অর্থাৎ অনেক লোক এ রকম হবে যে, তারা ত্যাগ, সাধনা, পরহেজগারী, কুরবানী, মুজাহাদা সব করবে ঠিক; কিন্তু তা রিয়া—ছুময়া আর লৌকিকতাপূর্ণ হবে। এটি কিয়ামতের একটি আলামাত।
۞কিয়ামতের আলামতঃ অত্যাচারী ও দূর্নীতিবাজদের নেতৃত্ব দিবে۞
عن ابن مسعود رضـ ان من اعلام الساعة واشراطها ان يسود كل قبيلة منافقوها وكل سوق فجادها (رواه الطبرانى)
হযরত ইবনে মাসউদ (রা:) হতে বর্ণিত আছে যে, সমাজ, গোষ্ঠী ও এলাকার নেতৃত্ব দিবে তাদের মুনাফেক নাফরমান লোকেরা। অর্থাৎ সমাজের ভাল লোকদের হাতে তাদের নেতৃত্ব থাকবে না; বরং সমাজের দূর্নীতিবাজ, দুষ্ট প্রকৃতির লোক জন নেতৃত্ব দিবে। এটা কিয়ামতের আলামাতের মধ্যে অন্যতম।
۞কিয়ামতের আলামতঃ আল্লাহ ওয়ালা ও ঈমানদারদের প্রতি অসদ আচারন করবে۞
عن ابن مسعود رضـ : ان من اعلام الساعة ان يكون المؤمن فى القيلة اذل من التقد (والتقدم صغار الغنم)— (رواه الطبرانى)
হযরত ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত আছে যে, কিয়ামতের আলামাতের মধ্যে এটাও একটি যে, সমাজের মধ্যে ঈমানদার ব্যক্তিকে একটা ছাগলের বাচ্চা থেকেও তুচ্ছ মনে করা হবে, যা বর্তমানে আমাদের নোংড়া সমাজে ১০০% বিদ্যমান। অর্থাৎ দ্বীনদার লোক ও ওলামায়ে কেরাম, দাড়ি—টুপি ওয়ালা ব্যক্তি বর্গের সাথে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য মূলক আচরণ করা হবে।
۞কিয়ামতের আলামতঃ অযোগ্য ব্যক্তিকে ভোট ও অন্যন্ন মিথ্যা শাক্ষী প্রদান۞
عن ابن مسعود رضـ تعين المرأة زوجها على التجارة وقطع الارحام ونشو القلم وطهور الشهادة بالزور وكتمان شهادة بالحق رواه بخارى وغيره (نشو القلم كتابة عن كثرة الكتبة وقلة العلماء يعنى يكتفون بعلم الخط ليخالطوا الحكام
হযরত ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত: কিয়ামত নিকটবর্তীকালীন সময়ে ব্যবসা—বাণিজ্যের অনেক প্রসার হবে। এমনকি এক পর্যায়ে সে প্রসারতায় স্ত্রী তার স্বামীকে বাণিজ্যিক কাজে সহায়তা করবে এবং আত্মীয়তা সম্পর্ক বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। কলমের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের প্রবণতা দেখা যাবে। সত্য সাক্ষী গোপন করা হবে। (কলম প্রকাশ পাবার অর্থ হল, হক্কানী উলামায়ে কেরাম, খোদা ভীরু, ওলামায়ে আখেরাত হ্রাস পেতে থাকবে, যার দরুণ লিখনীকে জীবিকার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হবে। এটাকে রাজা—বাদশা বা ধনী ব্যক্তিদের নিকট পেঁৗছিয়ে ধন—দৌলত গ্রহণ করত: পার্থিব সুখ শান্তির পিছনে হণ্যে হয়ে ঘুরতে থাকবে, যা ইসলাম ধ্বংসের একটি বড় কারণ হবে।
۞কিয়ামতের আলামতঃ যাকাত আদায় করতে মনে কষ্ট অনুভাব হওয়া বা লুকোচুরী করা ۞
عن ابى هريرة رضـ من اشراط الساعة ان تتخذ الامانة مغنما والزكاة مغرما ويتعلم لغير الدين (رواه الترمذى)
হযরত আবু হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত: কিয়ামতের আলামতের মধ্যে এটাও একটি যে, আমানতকে গণিমত মনে করা হতে থাকবে। অর্থাৎ কেউ কারো কাছে আমানত হিসেবে কিছু রাখলে তখন আমানত গ্রহীতা উক্ত আমানতের মালকে গণিমতের মাল মনে করে ব্যবহার করতে থাকবে, মালের মালিককে তা ফেরত দেয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করবে না। ঝাকাত আদায় করাকে জরিমানা মনে করবে। অর্থাৎ যাকাত দিয়ে খুশি ও আনন্দ উপভোগ না করে বরং মনোকষ্টে ভূগবে। ইবাদত পালন করে যে রূপ খুশি হওয়া চাই তা থাকবে না; বরং চাপ মনে করে অসšু‘ষ্ট হবে। ইলম শিক্ষা করা হবে; কিšু‘ দ্বীনের জন্য নয় বরং পার্থিব আয় উপার্জনের উদ্দেশ্যে ইলম হাসিল করা হবে। যেমন, সার্টিফিকেট অর্জন করলে চাকুরি পাওয়া যায়, এরূপ উদ্দেশ্যে ইলম অর্জন করবে। এ গুলো কিয়ামতের আলামাত।
۞কিয়ামতের আলামতঃ মিথ্যা প্রচার মাধ্যম সমূহ۞
عن ابن مسعود رضـ من اشراط الساعة ان يتمثل الشيطان فى صورة الرجل فياتى القوم فيحدثهم الحديث من الكذب فيتفرقون فيقول الرجل منهم سمعت رجلا اعرف وجهه ولا ادرى ما اسمه يحدث (رواه مسلم فى مقدمة صحيح)
হয়রত মাসউদ(রাঃ) হতে বর্ণিত,এটাও কিয়ামতের আলামাত যে, শয়তান মানুষের আকৃতি ধারণ করে মানুষের মাঝে প্রবেশ করবে এবং বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা, প্রতারণা মূলক কথাবার্তা বলবে। তারপর মানুষের থেকে পৃথক হয়ে যাবে (কিন্তু তাকে কেউ চিনবে না) অত:পর শ্রোতাদের মধ্য হতে কেউ কেউ বলবে যে, হ্যঁা তাকে দেখলে তো চিনি; কিন্তু তার নাম জানি না, তার পরিচয় জানি না। তার কাছ থেকে এমন এমন কথা শুনেছি। অর্থাৎ কিয়ামতের পূর্বে এমন সময় আসবে যখন এ ধরনের কিছু আজগুবি লোকের আত্ম প্রকাশ হবে যারা সত্য—মিথ্যা মিলিয়ে কথা—বার্তা বলে মানুষকে ধেঁাকা দিতে থাকবে। এ ধরণের কথা—বার্তা বলার মধ্যে তাদের লক্ষ্য বস্তু হবে দুনিয়া উপার্জন করা।
۞কিয়ামতের আলামতঃ মাতা পিতার অবদ্ধতা, মেয়েদের অশ্যালীন চাল চলন۞
عن ابى ذر رضـ اذا اقترب الزمان لان يربى الرجل جروا خير له ان يربى ولدا له ولايوقر كبير ولا يرحم الصغير يكثر اولاد الزنا حتى ان الرجل يغشى المرآة على قارعة الطريق يلبون جلود الضأن على قلوب الذباب امثلهم فى ذالك الزمان المداهن (رواه الحاكم وغيره) ومعنى يلبون الضأن انهم يلينون القول ويحسنون الفعل رياء
হযরত আবু জর(রাঃ) হতে বর্ণিত, অর্থাৎ যখন কিয়ামতের সময় নিকটবর্তী হবে তখন (কোন কোন লোকের জন্য) সন্তানাদি লালন পালন করা অপেক্ষা ছাগলের বাচ্চা পালন করা উত্তম মনে হবে। কারণ তখন সন্তানাদি পিতা—মাতার এমন নাফরমান অবাদ্ধ হবে যে, সন্তানাদি পালন করার থেকে ছাগলের বাচ্চা পালন করা তাদের পক্ষে উত্তম জীবন মনে হতে থাকবে। তখন বড়দেরকে সম্মান করা হবে না এবং ছোটদেরকে স্নেহ করা হবে না। জারজ সন্তান বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এর অর্থ হল এই যে, হয়ত তখন স্বামী—স্ত্রীর মধ্যকার জীবনে এমন সব আচরণ হবে যাতে তাদের মাঝে তালাক হয়ে যায়; কিন্তু তারা দাম্পত্ত জীবন যাপন করেই যেতে থাকবে। আর এভাবে সন্তানাদি অবৈধ হতে থাকবে। এমনকি মানুষ এক পর্যায়ে জিনা করার জন্য রাস্তার মাঝে পুরুষ মহিলাকে চেঁপে ধরবে। কেউ দেখছে বা নিষেধ করবে, তার ন্যূনতম পরওয়া করবে না। কোন কোন মানুষ তার কথার ভাষা ন¤্র করবে ও কাজ—কর্ম সুন্দর করবে; কিন্তু তাদের এ সবের উদ্দেশ্য হবে লোক দেখানো। অর্থাৎ ইখলাছ বলতে কিছুই থাকবে না। সে সময় ঐ রূপ ব্যক্তিকে সমাজের মধ্যে সব চেয়ে বড় বুঝর্গ বা ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন বলে মনে করা হবে। আসলে সে হবে বড় ‘মুদাহিন’। মুদাহিন বলা হয় তাকে যে জানা সত্ত্বেও এবং হক কথা বলার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হক কথা বলবে না, শুধুমাত্র এ জন্য যে, লোকে কি বলবে!
۞কিয়ামতের আলামতঃ গরীব রাতা রাতী ধনী হয়ে সম্পদের পাহাড় গড়া ও অপব্যবহার করা۞
عن عمر رضـ واذا رأيت الحفاة العراة العالة رعاء الشاء يتطاولون فى البنيان فانتظر الساعة (رواه البخارى ومسلم)
হযরত ইবনে উমর(রাঃ) হতে বর্ণিত,যখন তুমি দেখবে যে, (সমাজের মধ্যে) যারা খালি পায়ে ছিল, বস্ত্রহীন ও গরীব ছিল, যারা ছাগল চরাত (এক কথায় যারা নিম্ন পর্যায়ের লোক ছিল) তাদেরকে দেখবে যে, বড় বড় সুউচ্চ দালান—কোঠা তৈরী করার ব্যাপারে খুব প্রতিযোগীতা করছে তখন তোমরা কিয়ামত কায়েম হবার অপেক্ষা করতে থাক।
۞কিয়ামতের আলামতঃ অনুপুযুক্ত ব্যক্তিকে পদতিক বা পদান্নতী করা۞
عن ابى هريرة رضـ اذا وسد الا مر الى غير اهله فانتظر الساعة (رواه البخارى)
হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ)হতে বর্ণিত,যখন কোন উপযুক্ত পদে অনুপযুক্ত লোককে নিয়োগ দেয়া হবে, তখন কিয়ামত কায়েম হবার অপেক্ষা করতে থাক।
۞কিয়ামতের আলামতঃ উপযুক্ত ইমাম পাওয়া যাবে না ۞
عن سلامة بنت الحران رضـ من اشراط الساعة ان يتدافع اهل المسجد لا يجدون اماما يصلى بهم (رواه الامام احمد وابوداؤد)
হযরত দানামাহ বিনতে হাররান(রা)হতে বর্ণিত,এটাও কিয়ামতের আলামাত যে, লোকেরা মসজিদের মধ্যে ধাক্কা ধাক্কি করতে থাকবে ইমামতির জন্য; কিন্তু ইমামতি করার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি খঁুজে পাওয়া যাবে না। অথার্ৎ বাস্তবিক পক্ষে ইমাম হবার জন্য মৌলিকভাবে উপযুক্ত ব্যক্তি খঁুজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
۞কিয়ামতের আলামতঃ যৌতুকের লোভে বিয়ের প্রবনতা۞
عن ابى امامة رضـ لا تقوم الساعة حتى يعمد الرجل الى النطية فيتزوجها على معيشة ويترك بنت عمه لا ينظر اليها (رواه الطبرانى) ومعناه ان يتزوج الرجل دنية الاصل نعناها ويترك بنت عمه الاصيلة لفقرها
কিয়ামত নিকটবর্তীকালীন সময়ে মানুষ বিয়ে করবে তো বিয়ে করাটাকে তার জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করবে। আর এর জন্য সে ধনীদের বেছে বেছে বিয়ে করবে। যদিও সে নিম্ন স্তরের লোক হউক না কেন, তখন তার নিকটবর্তী লোক যেমন, চাচাত বোন গরীব হওয়ার কারণে তাকে বিয়ে করা হতে বিরত থাকবে। আর অন্য নিচু বংশের (দ্বীন হারা) মেয়েকে শুধুমাত্র পয়সার লোভে বিয়ে করবে। কারণ পয়সা ওয়ালা মেয়ে বিয়ে করলে সেখান থেকে সম্পদ পাবে তা দিয়ে তার সংসার চালাবে। এটা কিয়ামতের আলামাত। যেমন, বর্তমানে যৌতুক প্রথা অর্থাৎ ছেলে ও তার বাপ—মা আসায় বসে আছে যে, ছেলেকে বিয়ে করায়ে তার শ্বশুর বাড়ি হতে টাকাকড়ি বা অন্য সব সম্পদ আদায় করবে। চাই তা যৌতুক নাম দেয়া হোক বা অন্য কিছু হোক।
۞কিয়ামতের আলামতঃ আত্বীয়তা সম্পর্ক বিছিন্নতার প্রবনতা۞
عن ابن مسعود رضـ ان امارات الساعة ان تقطع الارحام يؤخذ المال بغير حقه ويسفك الدماء ويشتكى ذوالقربة قرابته لا يقود عليه شيئ . ويطوف السائل لا يوضع فى يده شيئ (رواه ابن ابى شيبة)
হযরত ইবনে মাসউদ(রাঃ)হতে বর্ণিত,কিয়ামতের একটি আলামাত হল Ñ আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে। অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ আত্মসাত করা হবে। অন্যায়ভাবে রক্তপাত করা হতে থাকবে। আত্মীয়—স্বজন পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকবে এ মর্মে যে, সে তার কাছে মাল পাবে; কিন্তু সে দিচ্ছে না। ভিক্ষুক ভিক্ষা চাইতে থাকবে; কিন্তু তার হাতে কেউ পয়সা দিবে না।
۞কিয়ামতের আলামতঃ বদ দ্বীন লোকের থেকে ইলম ত্বলবের প্রবনতা বৃদ্ধী হওয়া۞
عن امامة الحمجى رضـ ان من اشراط الساعة ان يلتمس العلم عند الاصاغر (رواه الطبرانى)
হযরত আবু উমামাহ(রাঃ)হতে বর্ণিত,কিয়ামতের আলামত সমূহের মধ্যে ইহাও একটি যে, ইলমে দ্বীন তলব করা হবে সমাজের ছোট ছোট মানুষের কাছ থেকে। অর্থাৎ যাদের সমাজের মধ্যে কোন স্থান নেই, আবার তাকওয়া পরহেজগারীতে শূণ্য এমন সব লোকদের থেকে ইলম তলব করা হতে থাকবে। যার দ্বারা তখন ইলম ও আমল সত্যই খালি হয়ে ফাঁকা হয়ে থাকবে। আর এটাই হবে প্রতারণা ও ধেঁাকা।
۞কিয়ামতের আলামতঃ ইসলাম অপরিচিত মানুষের আয় কমে যাওয়া দালান কোঠায় হিড়িক উসৃস্খলা বৃদ্ধ সন্তানাদি নিয়ে দুশ্চিন্তা ইত্যাদিী ۞
عن ابى موسى رضـ لا تقوم الساعة حتى يجعل كتاب الله عارا ويكون الاسلام غريبا حتى تبدو الشحناء بين الناس وحتى يقبض العلم ويهرم الزمان وينقص عمر البشر وينقص السنون والثمرات ويؤتمن التهماء ويلهم الامناء ويصدق الكاذب ويكذب الصادق ويكثر الهرج وهو القتل وحتى تبنى الغرق اى القصور فتطاول وحتى تحرن ذوات الاولاد اى لعقوق اولادهن وتفرح العواقر ويظهر البغى والحد والشح ويهلك الناس ويكثر الكذب ويقل الصدق حتى تختلف الامور بين الناس ويتع الهوى ويقضى بالظن ويكثر المطر ويقل الثمر ويقبض العلم غيضا ويفيض الجهل فيضا ويكون الولد غيظا والشنا قيضا ويقوم الخطباء بالكذب فيجعلون حقى لشرار امتى فمن صدقهم بذالك ورضىبه لم يرح رائحة الجنة (رواه الطبرانى سنده جيد)
হযরত আবু মুদা(রাঃ)হতে বর্ণিত,কিয়ামত নিকটবর্তীকালীন সময়ে কিতাবুল্লাহ্ অর্থাৎ আসমানী ইলম শিক্ষাকে লজ্জাস্কর বস্তু বলে গণ্য করা হবে। ইসলাম অপরিচিত হতে থাকবে অর্থাৎ মানুষ ইসলাম অনুযায়ী চলবে না। এক পর্যায়ে ইসলাম চিনবেও না। মানুষের মধ্যে কার্পন্যতা প্রকাশ পেতে থাকবে। ইলমে দ্বীন (তার হাকীকত অর্থাৎ তার গভীরে যাওয়া এবং সে অনুযায়ী চলা ইলমের চর্চায় নিবেদিতপ্রাণ হওয়া সবই) উঠায়ে নেয়া হতে থাকবে। যুগ যামানা বার্ধক্যের শিকার হবে। অর্থাৎ মানুষ যেমন বার্ধক্যে পেঁৗছলে তার কার্যকারিতা বাকি থাকে না, যতই চিকিৎসা করা হোক না কেন আরোগ্য তেমন একটা দেখা যায় না। তেমনি শেষ যুগে মানুষকে ভাল করার বা সুন্দর করার যতই চেষ্টা করা হোক না কেন তার ভাল হওয়ার আশা খুব একটা করা যায় না। মানুষের আয়ু হ্রাস পেতে থাকবে, বছর কাল কমতে থাকবে, ফল—ফলাদি কমতে থাকবে, যারা দোষী, কুরুচিপূর্ণ তাদের কাছে আমানত রাখা হতে থাকবে। আমানতদার ব্যক্তিদেরকে দোষারোপ করা হতে থাকবে। মিথ্যাবাদীকে সত্য বলে ধারণা করা হতে থাকবে। যেমন, বর্তমান সমাজে সমস্ত মিডিয়াকে মিথ্যা দিয়ে সাজানটাই বীরত্বের প্রকাশ করা হচ্ছে। আর বাস্তব সত্যকে চাপা দিয়ে রাখার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। সমাজের মধ্যে আপোষে হত্যাকাণ্ড বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এক পর্যায়ে (সমাজের মধ্যে) বড় বড় দালান—কোঠা উঁচু বিল্ডিং ও বাংলো তৈরী করার হিড়িক পড়ে যাবে এবং প্রতিযোগীতামূলকভাবে এ সব বৃদ্ধি পেতে থাকবে, যাদের সন্তানাদি আছে তারা এ সব সন্তানাদি নিয়ে মারাত্মকভাবে দু:শ্চিন্তায় বিভোর হয়ে পড়বে, কেননা ঐ সব সন্তানাদি তারা পিতা—মাতার অবাদ্ধ হয়ে চলবে। আর এটাই পিতা—মাতার পেরেশানি, দু:খ—যাতনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আবার যারা অবাদ্ধ তারা অবাদ্ধতার মধ্যে আনন্দ উপভোগ করতে থাকবে এবং জিনা বেভিচারি হিংসা, বিদ্বেষ মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং এ সব কিছু মানুষের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। মিথ্যার প্রচারণা বাড়তে থাকবে। সত্য বলার হার কমতে থাকবে। এমনকি মানব সমাজে জীবন ব্যবস্থা বিক্ষিপ্ত বিক্ষিপ্ত হতে থাকবে। কোন ব্যাপারে কোন কাজেই মানুষ নিয়ম শৃংখলায় আনতে সক্ষম হবে না। অর্থাৎ যতই নিয়ম শৃংখলায় আনতে চাইবে ততই যেন এলোমেলো অবস্থা বাড়তে থাকবে। খাহেশাতের পায়রবী হতে থাকবে। কোন শালিস বিচারে ফায়সালা মামলা মুকাদ্দামা দেয়া হবে তো নিজের ধারণার উপর ভিত্তি করে করা হবে। অর্থাৎ মূল ঘটনা যাচাই বাছাই করা ব্যতিতই মন গড়া সিদ্ধান্ত নেয়া হতে থাকবে। বৃষ্টি বেশি হতে থাকবে; কিন্তু ফসলাদি ও ফলন কম হতে থাকবে। ইলমের প্রবাহ হবে সংকীর্ণ হারে আর মূর্খতা প্রবাহ হতে থাকবে একেবারে বন্যার ে¯্রাতের ন্যায়। সন্তানাদি হওয়া পিতা—মাতার জীবনের জন্য সংকীর্ণতার কারণ হবে এবং সন্তানাদির এ দূরাবস্থার দরূণ পিতা—মাতার মান—মর্যাদা, সম্মান ও প্রশংসা ইত্যাদি হ্রাস পেতে থাকবে। অর্থাৎ সন্তানাদির এ সব অসদাচরণে পিতা—মাতা সমাজে অশান্তি ও অসম্মানিত হতে থাকবে। খতিবগণ খুতবা দিবেন অর্থাৎ বয়ান করবেন তো মিথ্যার মিশ্রণে অর্থাৎ মিথ্যা মিশ্রণে যা মনে চায় বয়ান করবেন। অত:পর আমার উম্মতের দুষ্ট প্রকৃতির লোকদের কাছে আমার হক্ক সমূহ দেয়া হবে আমার রেখে যাওয়া এই দ্বীন জালেম অত্যাচারীর পক্ষে খুতবা দেয়া হতে থাকবে। সুতরাং যারা ঐ সমস্ত বয়ানীদের (বক্তাদের) কথা বিশ্বাস করবে ও তাদের ঐ সমস্ত কথার প্রতি সন্তুষ্ট হবে, মনে রেখ তারা বেহেস্তের খুশবু পর্যন্ত পাবে না।
۞কিয়ামতের আলামতঃ রশালু কথা বার্তা আর কজের তিক্ততা۞
عن سعيد ابن ابى وقاص رضـ لا تقوم الساعة حتى تخرج قمو ياكلون بالسنتهم كما تأكل البقر بألسنتها (رواه الامام احمد وغيره) ومعناه يمدحون الناس نفاقا ليتوصلوا الى اخذ اموالهم
হযরত ছা’আদ বিন ওয়াক্কাস(রাঃ)হতে বর্ণিত, কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত এ রকম সম্প্রদায় বহি:প্রকাশ না ঘটবে, যারা তাদের জবান দিয়ে না খাইবে, যেমন গরু তাদের মুখ দিয়ে খায়। অর্থাৎ তাদের মুখ অনের প্রশংসায় পঞ্চ মুখ হবে, উদ্দেশ্য হবে প্রশংসিত ব্যক্তি হতে তার মাল খাওয়া, অর্থাৎ জীবনটা নিফাকে ভর্তি হবে। মূল কথা তারা মুখের ভাষা ও কথাকে জীবিকার উপকরণ হিসেবে গ্রহণ করবে। আর এটাই হল কিয়ামতের আলামাত।
۞কিয়ামতের আলামতঃ যুবতীদের অবাদে মেলা মেশা ও সহ শিক্ষার প্রবনতা۞
عن ابن عمر رضـ لاتقوم الساعة حتى يتفاسد الناس تسافد البهائم فى الطرق (رواه الطبرانى)
হযরত ইবনে ওমর(রাঃ)হতে বর্ণিত,কিয়ামতের নিকটবর্তীকালীন সময়ে অনেক লোক রাস্তা ঘাটে ঐ রকমভাবে ফাসাদ ও নষ্টামি করতে থাকবে যেমনভাবে চতুষ্পদ জীব—জন্তু রাস্তা ঘাটে চলার পথে ফাসাদ ও নষ্টামি করতে থাকে। ভাবার্থ স্পষ্ট অথার্ৎ বেহায়াপনা অশ্লিলতা ও নগ্নতা এবং নোংড়ামী করবে।
عن حذيفة لاتقوم الساعة حتى يعز الله ثلاثا درهما من حلال وعلما مستفادا واذا فى الله عزوجل (رواه الديرمى) يعنى غير هذه الثلاثة حتى لاتكاد توجد
হযরত হুযাইফা(রাঃ)হতে বর্ণিত,কিয়ামতের পূর্ব মুহুর্তকালীন সময়ে আল্লাহ্ পাক তিনটি বস্তু অতি সম্মানিত করবেন; কিন্তু তার সংখ্যা হবে একেবারে নগন্য, প্রায় না পাওয়ার সম্ভাবনাই হবে বেশি। ১) হালাল দেরহাম অর্থাৎ হালাল উপার্জন যা তালাশ করে পাওয়া একেবারে কঠিন হয়ে যাবে। ২) উপকারি ইলম অর্থাৎ যে ইলম দ্বারা উপকৃত হওয়া যাবে তার সংখ্যাও একেবারে নগন্য হবে। তবে কিছুটা যা থাকবে তা দুনিয়ায় পার্থিব উপার্জনের উপকরণ হিসেবে গ্রহণ করা হবে। ৩) শুধুমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন, অর্থাৎ বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব থাকবে; কিন্তু তা হবে পার্থিব স্বার্থ হাসিলের জন্য আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য হবে না। তাই এই তিনটি নিয়ামত হিসেবে গণ্য হবে এবং এটা কিয়ামতের আলামাত।
۞কিয়ামতের আলামতঃ দ্বীনকে তামাশার বস্তু রুপে গন্য করা হবে ۞
عن عبد الله بن زينب الجندى رضـ اذا رأيت الصدقة كتمت وغلت واستوجر على الغزو واخرب العامة وعمر الخراب ورأيت الرجل يتمرس بامانيته وفى رواية بدنيته كما يتمرس البعير بالشجر فانك والساعة كهاتين (رواه عبد الرزاق والطبرانى) يتمرس اى يتلعب
হযরত আব্দুল্লাহ বিনতে যয়নাব জুনদী(রাঃ)হতে বর্ণিত,যখন তুমি দেখবে ছদকা আদায় না করে ইত্যাদি লুকিয়ে রাখা হবে এবং খেয়ানত করা হবে এবং ইসলামী জিহাদ (যুদ্ধ) ইত্যাদি করা হবে বটে; কিন্তু উদ্দেশ্য হবে ব্যবসা। অর্থাৎ পবিত্র জিহাদ করাকে জীবিকার উপকরণ হিসেবে গ্রহণ করা হবে। আবাদ স্থানকে বিরাণ করা হবে এবং বিরাণ স্থানকে আবাদ করা হবে এবং তুমি দেখবে যে, লোকেরা আমানতকে বা দ্বীনকে খেলনার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করবে। অর্থাৎ দ্বীনকে খেল তামাশাগিরির বস্তু হিসেবে গ্রহণ করবে, যেমন উট গাছ পালাকে ভোগ্যপণ্য ও খেলনার সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করে থাকে ঐ ভাবে দ্বীনকে ব্যবহার করবে তখন তুমি কিয়ামত কায়েম হওয়াকে ঐ রকম নিকটবর্তী মনে কর যেমন, এই দুই অঙ্গুলি।
۞কিয়ামতের আলামতঃ ছোট বড় সমববেশে আসল আল্লাহ ওয়ালাদের অনুপস্থিতি ۞
عبد الله بن بشر رضـ اذا اجتمع عشرون رجلا او اكثر او اقل فلم يكن فيهم من يهاب فى الله فقد حضر الامر (رواه البيهقى وابن عساكر)
হযরত আব্দুল্লাহ বিন বিশির (রাঃ)হতে বর্ণিত যে, যখন তুমি দেখবে বিশ জন বা ততোধিক বা ওর থেকে ও কম লোক জন একত্রিত হয়েছে কিন্তু তন্মধ্যে এমন এক জন লোকও থাকবে না যাকে শুধুমাত্র আল্লাহ্র ব্যাপারে ভয় করা যায়। অর্থাৎ যখন কোন আল্লাহ্ ওয়ালা ব্যক্তি থাকবেন না বরং উপস্থিত লোকদেরকে ভয় করা হবে ঠিক কিন্তু তা হবে পার্থিব ব্যাপারে। কিন্তু আল্লাহ্ ওয়ালাদেরকে যে ভয় করা হয় এক মাত্র আল্লাহ্র মুহাব্বাতে সে রকম এক জন লোক ও থাকবে না। তখন বুঝে নাও যে, কিয়ামত অতি সন্নিকটে।
۞কিয়ামতের আলামতঃ মসজিদে প্রবেশ করে কোন আমল না করে বের হয়ে যাওয়া ۞
عن ابن مسعود رضـ من اشراط الساعة ان يمر الرجل بالمسجد فلا يركع ركعتين (رواه ابو داؤد)
হযরত ইবনে মাসউদ(রাঃ)হতে বর্ণিত, ইহাও কিয়ামতের আলামাত যে, মানুষ মসজিদে প্রবেশ করবে (বা মসজিদ দিয়ে পথ অতিক্রম করবে) কিন্তু দুই রাকাত নামাযও সে পড়বে না। অর্থাৎ মসজিদের হক হল যে, মসজিদে প্রবেশ করলেই কম পক্ষে ২ রাকাত নামায পড়া। (বা তার সম মানের আমল তাসবীহ তাহলীল পড়া) কিন্তু দেখা যাবে যে, অনেকে মসজিদে ঢুকল ঠিক কিন্তু কোন আমল করা ছাড়াই মসজিদ থেকে বের হয়ে চলে গেল। আর এটাই হল কিয়ামতের আলামাত।
۞কিয়ামতের আলামতঃ ছেলে—ছেলে মেয়ে—মেয়ের সহিত অবৈধ প্রবনতা۞
عن ابى رضـ تكون فى آخر الأمة عند اقتراب الساعة اشياء فمنها: نكاح الرجل امرأته او امته فى دبرها وذالك مما حرم الله ورسوله ويمقت الله عليه ورسوله ومنها نكاح الرجل وذالك مما حرم الله ورسوله ويمكت الله عليه ورسوله ومنها نكاح المرأة المرأة وذالك مما حرم الله رسوله ويمكت الله عليه ورسوله وليس له الله صلاة مااقاموا على ذالك حتى يتوبوا الى الله توبة نصوحا . (رواه الدارقطنى)
হযরত উবাই(রাঃ)হতে বর্ণিত, আখেরী (শেষ) উম্মাতের মধ্যে কিয়ামতের পূর্ব মুহুর্ত সময়ে কয়েকটি( মারাত্মক ঘৃণিত) কাজ সংঘটিত হতে থাকবে। তন্মধ্যে একটি হল, স্বামী তার স্ত্রী বা বাঁদির সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হবে পিছনের রাস্তা দিয়ে (মল দ্বারে) অথচ উহা আল্লাহ্ ও তাঁর রসুল (স:) হারাম করে দিয়েছেন এবং এ অপকর্মের দরুণ আল্লাহ্ ও তাঁর রসুল সেই মানুষের উপর মারাত্মকভাবে নারাজ হন। দ্বিতীয় হল, পুরুষ পুরুষের সাথে অবৈধ যৌন মিলনে লিপ্ত হবে অথচ আল্লাহ্ ও তাঁর রসুল (স:) এটাকে হারাম করে দিয়েছেন এবং এর দরুণ আল্লাহ্ ও তাঁর রসুল তাদের উপর মারাত্মকভাবে নারাজ হন। তৃতীয় হল, মেয়ে লোক অপর মেয়ে লোকের সাথে অবৈধ যৌন মিলনে লিপ্ত হবে। অথচ উহা আল্লাহ্ ও তাঁর রসুল হারাম করে দিয়েছেন এবং উহার কারণে আল্লাহ্ ও তাঁর রসুল তাদের উপর কঠিনভাবে নারাজ হন, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের ঐ সব অপকর্মের উপর স্থির থাকবে অর্থাৎ ঐ গুনাহের কাজে নিমজ্জিত থাকবে, তাদের নামায ইত্যাদি কোন আমলই কবুল হবে না।তবে যখন তারা খালেসভাবে তওবা করে নিবে তখন তাদের আমলও কবুল হবে এবং আল্লাহ্ তায়ালা তাদেরকে মাফ করে দিবেন।
۞কিয়ামতের আলামতঃ ইরাকের সৎ লোকদের সিরিয়ায় ওসিরিয়ার অন্য লোকদের ইরাক প্রত্যাবর্তন۞
عن ابى أمامة رضـ لا تقوم الساعة حتى يتحول شرار اهل الشام إلى العراق وخيار اهل العراق إلى الشام (رواه ابن ابى شيبة)
হযরত আবু উমামাহ(রাঃ)হতে বর্ণিত, কিয়ামতের নিকটবর্তীকালীন সময়ে সিরিয়ার অসৎ লোকেরা ইরাকের দিকে ফিরে যাবে এবং ইরাকের সৎ ও ভালো লোকেরা সিরিয়ার দিকে প্রত্যাবর্তন করে যাবে। অর্থাৎ তখন ইরাক ফেৎনা ও ফাসাদ এর স্তুপ হবে।
۞কিয়ামতের আলামতঃ মসজিদের মধ্যে দুনিয়াবী আলাপ চারিতা۞
عن الحسن رضـ ياتى على الناس زمان يكون حديثهم فى مساجدهم فى امر دنياهم فلاتجالسوهم فليس لله فيهم حاجة (رواه البيهقى)
হযরত হামান(রাঃ)হতে বর্ণিত, মানুষের সামনে এমন এক জামানা আসছে যখন তাদের দুনিয়াবী (পার্থিব) ব্যাপারে আলোচনা ইত্যাদি মসজিদের মধ্যে হতে থাকবে। সুতরাং যদি এ ধরনের লোকদেরকে পাও তাহলে তাদের সাথে উঠা—বসা করো না। যেহেতু আল্লাহ্ তায়ালার নিকট তাদের এ রকম মসজিদে আসার কোনই প্রয়োজন নেই।
۞
কিয়ামতের আলামতঃ ঈমান দ্বীন রক্ষা করতে ভাল লোকেরা দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াইত ۞
عن ابن مسعود رضـ ياتى على الناس زمان لا يسلم لذى دينه الا من فر من شاهق الى شاهق او من فجر الى فجر كالتعلب يفر باشكاله وذالك فى آخر الزمان اذالم تنلى الميشه الا بعصية الله فاذا كان كذالك حلت العربة يكون فى ذالك الزمان هلاك الرجل على يدى ابوية اذا كان له ابوان والاتنعلى يدى زوجته وولده والا فعلى يدى الاقارب والحيران يعيرونه بضيق المعيشة ويكلفونه مايد يطيق حتى يورد نفسه الموارد التى يهلك فيها (رواه ابونعيم)
হযরত ইবনে মাসউদ(রাঃ)হতে বর্ণিত, কিয়ামতের নিকটবর্তীকালীন সময়ে মানুষের উপর এমন যুগ আসছে যখন দ্বীনদার ব্যক্তি নিজের দ্বীন নিয়ে (সমাজে) বসবাস করতে পারবে না। হ্যঁা যদি দ্বীনের উপর চলতে চায় তাহলে ঐ ব্যক্তিই দ্বীনের উপর চলতে সক্ষম হবে যে এক উঁচু স্থান হতে অন্য উঁচু স্থানে অর্থাৎ এক পাহাড় হতে অন্য পাহাড়ে এক পাথর হতে অন্য পাথরে(যেমন, আজ অনেক আল্লাহর খালেছ বান্দারা দ্বীনের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে ঐ রকম ভাবে পাহাড়ে, জঙ্গলে ,জলে, স্থলে দৌড়াতে থাকবেন। অর্থাৎ তারা লোকালয় ছেড়ে পাহাড়ী নির্জনতায় বসবাসকে শ্রেয় মনে করবেন। এক পাহাড় হতে অন্য পাহাড় (অর্থাৎ দেশ দেশান্তরে তাকে) ঘুরে ফিরে দ্বীনের হেফাজত করে চলতে হবে। যেমন করে পাতি শিয়াল তার আত্মরক্ষার জন্য এক জঙ্গল থেকে অন্য জঙ্গল, এক গর্ত হতে অন্য গর্তে, এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় দৌড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে চলতে থাকে তেমনিভাবে দ্বীনের উপর চলতে ও দ্বীনের হিফাজতে কোন কোন লোকের ঐ রকম দৌড়ে পালিয়ে দেশ—দেশান্তরে ঘুরে ঘুরে দ্বীন রক্ষা করে চলতে হবে। তখন আল্লাহ্র নাফরমানি করা (সূদ, ঘুষ, চুরি, আত্মসাৎ, মিথ্যা, প্রতারণা) ব্যতিত হালালভাবে জীবিকা নিবার্াহ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এহেন অবস্থাতে মানুষের জন্য (যারা দ্বীন রক্ষা করে চলতে চায়) নির্জনতা অবলম্বন করে চলাই বৈধ হবে। (বরং উত্তম হবে) এবং তখন অবস্থা ও পরিস্থিতি এমনি হবে যে, মানুষ কেউ তার পিতা—মাতার বাধ্যগত হয়েও ধ্বংস হবে, আবার কেউ তার ¯ী¿ ও সন্তান সন্ততী আত্মীয়—স্বজন, বন্ধু—বান্ধব ও প্রতিবেশীর তালে মিলে পড়ে ধ্বংস হবে। অর্থাৎ সে তাদের মত নাফরমানি অন্যায় অপরাধের সাথে অবৈধ আয়—উপার্জনের সাথে জড়িত না হওয়ার কারণে তারা তাকে লজ্জা দিতে থাকবে এবং তিরস্কার করতে থাকবে এবং তাকে অবৈধ ও নাজায়েজ উপার্জনের জন্য সাধ্যের বাইরে কষ্ট দিতে উদ্বুদ্ধ হবে। তখন এক পর্যায়ে গিয়ে সে তাদের পুশিং এর শিকার হয়ে নিজে সে সব অবৈধ আয়—উপার্জনের পিছনে ধাবিত হবে আর তখনই সে ধ্বংস হবে।
۞কিয়ামতের আলামতঃ উত্তর সুরীদের কে সঠিক ভাবে মিরাস প্রদান না করা۞
عن ابن مسعود رضـ ان الساعة لا تقوم حتى لا يقيك ميراث ولا يفرح بغيتيمة (رواه مسلم)
হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)হতে বর্ণিত, কিয়ামতের আগে এমন সময় আসবে যখন মিরাস বণ্টন করা হবে না এবং গনীমতের মাল পেয়েও খুশি হবে না। অর্থাৎ যেমন বর্তমানে অনেক জায়গায় উত্তরসুরীদেরকে মিরাসি সম্পত্তি দেয়া হচ্ছে না, যেমন ফুফুর হক, বোনের হক, ইয়াতীমের হক, ছোটদের হক দেয়া হচ্ছে না। উপরন্তু সরকারীভাবে অবৈধ আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে যে, ছেলে—মেয়ের সমান অধিকার। অথচ আল্লাহ্ পাক ছেলেদের জন্য ২ ভাগ আর মেয়েদের জন্য করেছেন ১ ভাগ। এখন সরকারী আইনে যা করা হচ্ছে এটা মিরাস নয়; বরং অবৈধ বণ্টন, মিরাস হওয়ার জন্য আল্লাহ্ পাক যেভাবে বলেছেন, সেভাবে করলেই হবে মিরাস। এটাই হল কিয়ামতের আলামত
۞কিয়ামতের আলামতঃ পতিবেশী খারাপ হওয়া আত্বীয় সম্পর্ক বিছিন্ন করা ও দ্বীনের জন্য নিবেদিত প্রান না হওয়া۞
عن ابى هريرة رضـ من اشراط الساعة سؤ الجوار وقطيعة الارحام وان يعكل السيف من الجهاد وان تختل الدنيا بالدين (رواه ابن مردوية)
কিয়ামতের আলামতের মধ্যে এটাও একটি যে, প্রতিবেশী খারাপ হওয়া, আত্মীয়তা সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়া, তলোয়ার অকেজো করে ফেলে রাখা। অর্থাৎ যুদ্ধের কাজে না লাগান এবং দ্বীনের মোকাবেলায় দুনিয়াকে খালি করে দেয়া। অর্থাৎ পবিত্র যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত না থাকা এবং অস্ত্র—শস্ত্র তৈরী করতে অনিহা সৃষ্টি করা হবে। আর যাদের কাছে অস্ত্র—শস্ত্র থাকবে সেগুলোকে পবিত্র যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না বা তৈরী করতেও দেয়া হবে না। যেমন বর্তমান সময়ে মুসলিম দেশ গুলো বিভিন্ন প্রকারের আনবিক অস্ত্র আত্মরক্ষামূলক তৈরী করা হতে আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট তৈরী করে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করছে। এটাও কিয়ামতের আলামত। তবে হ্যঁা কোন ব্যক্তি কুরআন সুন্নাহ উপেক্ষা করে বরং কুরআন সুন্নাহকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে যদি অন্যায় ভাবে মানুষ খুনে লিপ্ত হয়, ছাহাবা বিদ্বেষী সুন্নাতে নবীজীর দুশমন হয়, যেমন কিছু লোক যাদের ঈমান—আকীদা সহীহ নাই, ইত্তেবায়ে সুন্নাত যাদের জিন্দেগীতে নাই, জায়েজ—নাজায়েজের ভেদাভেদ নাই; বরং গদি লোভী, পদ লোভী, পাপিষ্ঠ, আবার জিহাদের নামে কলংক সৃষ্টিকারী Ñ তাদেরকে বাঁধা দেয়া সকলের ঈমানী দায়িত্ব। তারাই হল ঈমান—ইসলাম ধ্বংসকারী, আসুন সকলেই সঙ্গবদ্ধ হয়ে এদের প্রতিহত করার ঈমানী দায়িত্ব পালন করি। অর্থাৎ জিহাদ করা ঐ সময়ই ইবাদাত বলে গণ্য হবে যখন ঐ মুজাহিদ শুধুমাত্র আল্লাহ্র নাম দুনিয়াতে বুলন্দ করার উদ্দেশ্যেই জিহাদ করবে, পার্থিব হীন কোন লক্ষ্য তার থাকবে না। অন্যথায় তা হবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম যা সম্পূর্ণরূপে হারাম
۞কিয়ামতের আলামতঃ ও গুনাহ।গাল মন্দ করা , অসৎ চরিত্রবান হওয়া۞
(হজ্জের আমাল শেষে এখান থেকে পুনরায় মসজিদে হারামে বসে লিখা শুরু করলাম,আল্লাহ কবুল কর)
عن ابن مسعود رضـ من اشراط الساعة ان يظهر الفحش والنفحش وسوء الخلق وسوء الجوارر (رواه ابن ابى شيبة)
হযরত ইবনে মসউদ(রাঃ) হতে বর্ণিত, কিয়ামতের আলামতের মধ্যে এটাও একটি যে, গাল—মন্দ করা, ভৎসনা দেয়া, অসৎ চরিত্র ও বদ আখলাকী হওয়া এবং প্রতিবেশী খারাপ হওয়া। অর্থাৎ এ ধরনের চরিত্রের মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। যেমন কি—না গালি—গালাজ ইত্যাদি বদ আখলাক। যেমন কথা ও ঝগড়া—ফাসাদে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি অভ্যাসে পরিণত হতে থাকবে। তখন বুঝে নিতে হবে যে, কিয়ামত নিকটবর্তী।
۞কিয়ামতের আলামতঃপ্রচলিত পুলিশ বাহিনীর লাঠি ও নারীদের নগ্নতা۞
عن ابى هريرة رضـ صنفان من امتى من اهل النار لم ارهما بعد قوم معهم سياط كاذناب البعقر يضربون بها الناس وشاء كاسيات عاريات مميلات حائلات ردسهن كاسنمة البخت المائلة لا يدخلون الجنة ولا يجدون يحها ورن ريحها ليوجد من سيرة كذا وكذا . قال النبوى رحـ فى رياض الصالحين اى يكبرن روشهن ويعظمنها يلق عمامة اوعصابة اونحوها (رواه مسلم)
মুসলিম শরীফের মধ্যে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত (রাসুল স. ইরশাদ করেন) যে, আমার উম্মাতের মধ্যে দুই ধরনের লোক হবে যাদেরকে আমি পরবর্তীতে দেখতে চাইনা! তাদের মধ্যে এক সম্প্রদায় এমন হবে যাদের হাতে সব সময় (ভীতি প্রদর্শনের) লাঠি গরুর লেজের ন্যায় নড়তে থাকবে যা দিয়ে কারনে অকারনে তারা মানুষকে বিনা কারণে অযথা ধরপাকড় করার কাজে প্রয়োগ করতে থাকবে। (যেমন আমাদের দেশের পুলিশ বাহিনীর লোকের হাতে লাঠি থাকে যা দিয়ে তারা অনেক সময় অযথা সাধারণ বাহানায় জনগণের উপর অবৈধ ব্যবহার করে থাকে। এটি কিয়ামতের একটি কঠিন আলামত। দ্বিতীয় প্রকারের লোক হল ঐ সমস্ত মহিলারা যারা পরণের কাপড় পরেও উলঙ্গ থাকবে। অর্থাৎ এমন পাতলা পাতলা বা আংশিক কিংবা সিকি কাপড়, শাড়ি, ব্লাউজ, জামা, উড়না, পায়জামা ব্যবহার করবে যার দ্বারা তাদের শরীরের সমস্ত অঙ্গ—প্রত্যঙ্গ বাইরে থেকে দেখা যায়। আবার কেউ কেউ এমন ছোট—খাট কাপড়—চোপড় ব্যবহার করে যা পরে ও তারা থেকে তাদের মাথা, গলা, পেট, পিঠ, কোমর, ছিনা, উরু ইত্যাদি দেখিয়ে দেখিয়ে বাইরে চলতে থাকে। অর্থাৎ শরীরকে হেলিয়ে দুলিয়ে অপর পুরুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে চলতে থাকে এবং তাদের মাথা গুলো উঁচু উটের চুটির ন্যায়। অর্থাৎ মাথায় তারা বিভিন্ন গুছি ও ক্লিক বা অনন্য ব্যবহার করে, যাতে করে মাথা বড় দেখা যায় । যেমন মাথায় চুল নাই কিন্তু বিভন্ন আলগা চুল বা অন্য কিছু দ্বারা চুল বেশি দেখায় । জেনে রেখ এ সমস্ত লোকেরা বেহেস্তে যেতে পারবে না। এমনকি তারা বেহেস্তের সুগন্ধি পর্যন্ত পেতে সক্ষম হবে না। অথচ বেহেস্তের ঘ্রাণ বহু দূর হতেই পাওয়া যাবে; কিন্তু তারা বঞ্চিত থাকবে।
۞কিয়ামতের আলামতঃ নামাজ তরক করা,আমানত খেয়ানত করা, ছোট লোকদের নেতৃত্ব ইত্যাদি۞
عن ابن عباس رضـ قال حج النبى صلى الله عليه وسلم ححجة الوداع ثم اخذ بحلقه باب الكعبة فقال يا ايها الناس الا اخبركم باشراط الساعة فقام اليه سلمان فقال : اخبرنا فداك ابى وامى يارسول الله! قال من اشراط الساعة اضاعة الصلوة والميل مع الهوى وتعظيم رب المال فقال سلمان ويكون هذا يارسول الله ! قال نعم والذى نفس محمد بيده فعند ذالك يا سلمان ! تكون الزكاة مغرما والفى مغنما ويصدق الكاذب ويكذب الصادق ويؤتمن الخائن ويخون الأمين ويتكلم الرويضة قالوا وما الرويضة قال يتكلم فى الناس من لم كمن متكلم وينكر الحق تسعة اعتبارهم ويذهب الاسلام فلا يبقى الا اسمه ويذهب القرآن فلا يبقى الا رسمه ويحل المصاحف بالذهب ويتشمل ذكور امتى وتكون المشورة الاماء ويخطب على المنابر الصبيان وتكون المخاطبة للنساء فعند ذالك تزخرف المساجد كما تزخرف الكنائس والبيع وتطول المنابر وتكثر الصفوف مع قلوب متباغضة والسن مختلفة واهواء جمة. قال سلمان رضـ ويكون ذالك يارسول الله ! قال نعم . والذى نفس محمد بيده عند ذالك يا سلمان. يكون المؤمن منهم اذل من الاته يذوب قلبه فى جوفه كما يذوب الملح فى الماء مما يرى من المنكر فلا يستطيع ان يغيره ويكتفى الرجال الرجال والنساء والنساء واخيار على الغلمان كما يغار على الجارية البكر فعند ذالك يا سلمان ! تكون امراء فسقة ازراء فجرة وامناء خونة يضيعون الصلوت ويتبعون الشهوات فان ادركتموهم فصلوا صلاتكم لوقتها عند ذالك يا سلمان ! يجيئ سبى من المشرق وسبى من المغرب جثانهم اى اجسامهم جثاء الناس وقلوبهم قلوب الشياطين لا يرتحمون صغيرا ولا يوقرو كبيرا عند ذالك يا سلمان يحج الناس اى هذا البيت الحرام تحج ملوكهم لهوا وتنزها واغنيائهم للتجارة ومساكينهم للمسئلة وقرائهم رياء وسمعة قال : ويكون ذالك يا رسول الله ! قال نعم . والذى نفسى بيده عند ذالك ياسلمان ! يفشوا الكذب ويظهر الكوكب له الذنب وتشارك المرأة زوجها فى التجارة ويتقارب الاسواق قال وماتقاربها. قال كسادها وقلة اربابها عند ذالك يا سلمان ! يبعث الله ريحا فيها حياة صفر فتلتقط رؤس العلماء كما رأو المنكر فلم يغيروه قال: ويكون ذالك يارسول الله ! قال نعم. والذى بعث محمدا بالحق (رواه ابن مردوى) ويكثر الصفوف الخ معناه انهم لا يتبهون الصفوف الاول فالاول
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রসুল (সঃ) বিদায় হজ্জ করলেন, তারপর কা’বা ঘরের দরজার কপাট ধরে বললেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদেরকে কিয়ামতের কিছু আলামাত সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছি, তখন হযরত সালমান (রাঃ) দাঁড়িয়ে উঠে বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ্! আমার পিতা—মাতা আপনার উপর উৎসর্গ হউক আমাদেরকে সে সম্পর্কে বলুন! অতঃপর রসুলুল্লাহ্ (সঃ) ইরশাদ করলেনঃ কিয়ামতের আলামাত হতে একটি হল নামাজ নষ্ট করা, (অর্থাৎ নামাজ না পড়া বা সময়মত না পড়া বা অবহেলার সাথে পড়া), খাহেশাতের প্রতি ঝঁুকে পড়া অর্থাৎ মনের চাহিদা পুরণের প্রতি ধাবিত হওয়া এক কথায় মন মত চলা। বিত্তবান সম্পদশালী ব্যক্তিদের সম্মান করতে থাকা। অর্থাৎ লোকেরা বিত্তবান লোকদেরকে সম্মান করলে এ কারণে করবে যে, তার কাছ থেকে মাল পাওয়া যাবে । তখন হযরত সালমান (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ্! এ রকম হবে কি! হুজুর বললেনঃ হ্যঁা ঐ জাতের কছম খেয়ে বলছি যার হাতের মধ্যে আমার জান এ রকমই হবে। হে সালমান! এ রকম সময় ঝাকাত আদায় করাকে ট্যাক্স মনে করা হতে থাকবে। (অর্থাৎ স্বতস্ফূর্তভাবে আনন্দিতচিত্তে ঝাকাত আদায় করা হবে না। সন্ধি শর্তের সম্পদকে গণিমতের মাল হিসেবে মনে করা হবে। অর্থাৎ যে সম্পদ হবে সরকারী কোষাগারের তা নিজস্ব মনে করে ভোগ করা হবে। মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী আর সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদী ধারণা করা হতে থাকবে। (অর্থাৎ যারা মিথ্যা বলবে তারাই বিশ্বস্ত মনে করা হতে থাকবে আর যারা সত্য বলবে তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলে মনে করা হতে থাকবে। খিয়ানতকারীর কাছে আমানত রাখা হতে থাকবে। আর আমানতদার ব্যক্তিদেরকে খিয়ানতকারী মনে হতে থাকবে এবং রুওয়াইবাজাহ্ কথা বলতে থাকবে। ছাহাবায়েকিরাম জিজ্ঞাসা করলেন যে, ইয়া রাসুলুল্লাহ্! রুওয়াইবাজাহ্ কারা? হুজুর বললেনঃ যারা সমাজের মধ্যে কথা বলার যোগ্যতা রাখত না তারা সে সময় সমাজের মধ্যে কথা বলনেওয়ালা হবে এবং সমাজের মধ্যে দশ ভাগের নয় ভাগ লোক হক (বাস্তব সত্য) কে অস্বীকার করতে থাকবে। ইসলাম শেষ হয়ে যাবে তখন শুধু ইসলামের নাম মাত্র বাকি থাকবে। কুরআন চলে যেতে থাকবে। কুরআনের (পড়াপড়ির) রসম ও রেওয়াজ মাত্র বাকি থাকবে। (অর্থাৎ কুরআনী ই’লমের নূর ও রুহানিয়্যাত বাকী থাকবে না, কুরআনী ইলমকে দুনিয়া উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হতে থাকবে, যার দরুন তখন হালাল, হারাম, বিদয়াৎ ও সুন্নাতের মাঝে পার্থক্য করা হবে না) কুরআনকে স্বর্ণ রংয়ে অলংকৃত করা হবে,( অর্থাৎ চাকচিক্যময় করা হতে থাকবে)। আমার উম্মাতের পুরুষেরা মোটাসোটা হওয়াকে পছন্দ করতে থাকবে। মশওয়ারা (পরামর্শ) করা হতে থাকবে মহিলাদের সাথে অর্থাৎ মহিলাদের সাথে পরামর্শ করা হবে বা মহিলাদেরকে পরামর্শদাতা বা ফয়সাল বানানো হবে। বাচ্চারা মিম্বরে উঠে বক্তৃতা দিতে থাকবে অর্থাৎ সমাজের নেতৃত্ব, বক্তৃতা ও লম্বা লম্বা কথা অল্প বয়সের ছেলে—পিলেরা দিতে থাকবে, অথচ সেখানে বড় বড় জ্ঞানবান লোকজন থাকবেন; কিন্তু ঐ সব ছেলে—পিলেরা তাঁদেরকে ভ্রম্নক্ষেপ করবে না) এবং তখন ঐ সব বক্তৃতা ও লম্বা লম্বা কথার সমর্থন পেয়ে লোকদের প্রতি কড়া হতে থাকবে। যার ফলে অবস্থা দাঁড়াবে যা তা হল ঐ সব ছেলে—পিলে দ্বারা সমাজের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টি হতে থাকবে এবং মসজিদ সমূহ জাঁকজমকপূর্ণ, চকচকে ঝকঝকে করে তৈরী করা হতে থাকবে। যেমন খৃষ্টবাদীদের গির্জা ও ইয়াহুদীদের উপাসনালয় গুলোকে সাজান ও জাঁকজমকপূর্ণ করা হয়।মেম্বর সমূহ উচু উচু করে তৈরী করা হবে, নামাজের ছক কাতার অনেক বেশী বেশী হতে থাকবে; সামনের কাতার পুরা না করে ছোট ছোট কাতার করে বেশী করা হবে, কিন্তু মুসল্লিদের অন্তরের মধ্যে দুশমনি ভর্তি থাকবে, ভাষা ও বিভিন্ন হতে থাকবে আর খাহেশাত অন্তরের মধ্যে ভর্তি থাকবে। অর্থাৎ অন্তরের ইখলাছ, পরস্পরের মধ্যে মুহাব্বাত—ভালবাসা যা ঈমানের মূল তা থাকবে না। হযরত সালমান (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ্! এ রকম কি হবে? তখন রাসুলুল্লাহ্ (সঃ) বললেনঃ হ্যঁা আল্লাহ্র জাতের কছম খেয়ে বলছি হে সালমান তখন ঈমানদার লোকেরা সমাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাঞ্চনার শিকার হবেন। এমনকি তাঁরা তাঁদের ভিতরে ভিতরে অতি শোকে গলে যেতে থাকবেন যেমন লবণ পানির মধ্যে গলে যেতে থাকে। কারণ হল ঈমানদার ব্যক্তিরা বিভিন্ন ধরনের অবৈধ ও নাজায়েজ কাজ হতে দেখবে কিন্তু সে সব গুনাহর কাজের উপর বাঁধা দেয়ার মত শক্তি ও সাধ্য তাঁদের থাকবে না।(বিধায় না পারবে বলতে আর না পারবে সইতে)। পুরুষেরা পুরুষদেরকে নিয়ে যথেষ্ট মনে করতে থাকবে, তেমনিভাবে মেয়েরা মেয়েদেরকে নিয়ে যথেষ্ট মনে করতে থাকবে। অর্থাৎ কামবৃত্তি, যৌন চাহিদা পুরুষরা পুরুষের সাথে আর মেয়েরা মেয়েদের সাথে পুরা করার নোংড়া পৈশাচিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে (যা বর্তমানে অনেক অমুসলিম দেশে । কুরুচিপূর্ণ জীব—জন্তুর ন্যায় অমানবিক চাহিদা পূরণে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। যেমন কুমারী মেয়েদের সাথে মনের আবেগ পুরা করা হবে অর্থাৎ বলাৎকারীর কুপ্রথা চালু করবে যা কোন কোন জায়গায় সরকারীভাবে আইন করে পাস করা হয়েছে বা হচ্ছে।) হে সালমান! আমীর উমারা হবে ফাসেক, অর্থাৎ দেশের প্রতিনিধিগণ নেতা, নেত্রী হবে খোদাদ্রোহী। মন্ত্রীবর্গ হবে খোদার নাফরমান, আমানতদার হবে খিয়ানতকারী। তারা নামাজ বিনষ্টকারী হবে। খাহেশাতের পায়রবীকারী হতে থাকবে। তোমরা যদি এরকম লোকদের পেয়ে বস (যারা নামাজ সময়মত পড়বে না, তো তাদের কারণে তোমরাও নামাজকে অসময়ে পড়ো না; বরং তোমরা সঠিক সময়ে নামাজ পড়তে থাক।) হে সালমান! তখন (পৃথিবীর) পূর্ব ও পশ্চিম হতে বন্দীদেরকে আনা হবে যাদের শরীর গুলো হবে তো মানুষের ন্যায়; কিন্তু তাদের অন্তর গুলো হবে শয়তানের ন্যায়, যারা ছোটদের প্রতি স্নেহশীল ও বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে না (যা বর্তমানে রাশিয়া ও আমেরিকা এবং তাদের মিত্র দেশগুলো বাস্তব প্রমান) হে সালমান! তখন লোকেরা হজ্জ করবে, আল্লাহ্র এ ঘরে আসবে হজ্জ করতে কিন্তু তাদের ধনী ও রাজা বাদশারা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে হজ্জ করতে আসবে, তামাশা করার জন্য হজ্জে আসবে। ধনীরা ব্যবসার উদ্দেশ্যে হজ্জ করতে আসবে। আলেম, কারীগণ রিয়া ও লোক দেখানোর জন্য হজ্জ করতে আসবে। অর্থাৎ ইখলাসওয়ালা লোক কম হবে বরং অসৎ উদ্দেশ্যেই বেশির ভাগ হাজিদের আগমন হতে থাকবে। হযরত সালমান (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! এ রকম অবস্থা কি আসবে? হুজুর সঃ বললেন আল্লাহ্র জাতের কসম হ্যঁা অবশ্যই আসবে, হে সালমান! তখন মিথ্যা প্রকাশ্যে হতে থাকবে। বিভিন্ন গ্রহ প্রকাশ পেতে থাকবে যা বর্তমানে লোকেরা বলে যে অমুক এই আবিষ্কার হয়েছে যার মধ্যে লেজের ন্যয় হবে মহিলারা স্বামীর ব্যবসায়ী কাজের সাথে সহায়িকা হতে থাকবে, বাজার খুবই কাছে কাছে হতে থাকবে। ছাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! বাজার কাছে কাছে হবার অর্থ কি? হুজুর বললেন ব্যবসা—বানিজ্যের লাভ কম হতে থাকবে, তখন হে সালমান! এক বাতাস প্রবাহিত হবে যার দ্বারা হলুদ বর্ণের এক প্রকারের সাপ আল্লাহ্পাক পাঠাবেন যারা ওলামায়ে কেরামদের মাথা গুলো চুনে চুনে খেয়ে ফেলতে থাকবে। কেননা তারা তখন অন্যায়, নাফরমানি হতে দেখবে কিন্তু শক্তি থাকা সত্ত্বেও বাঁধা দিবে না। তখন হযরত সালমান (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন যে, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! এ রকম কি হবে? তো হুজুর সঃ বললেন, ঐ সত্ত্বার কছম খেয়ে বলছি যিনি আমাকে হক দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, এ সব অবশ্যই হবে।
۞কিয়ামতের আলামতঃ ওয়াদা খেলাফী, ব্যবষায়ী কাজে মহিলদের সম্পৃক্ততা,ঘুষের প্রবনতা নেতৃত্বস্থানীয় লোকেরা মিথ্যাবাদি হওয়া ইত্যাদি۞
من اقتراب الساعة اذا راتم الناس اضاعوا الصلوة واضاعوا الامانة واستحلوا الكبائر واكلوا الرباء واكلوا الرشاء وشيدوا النباء واتبعوا الهواى وباعوا الدين بالدنيا واتخذوا القرآن مرامير واتخذوا جلود السباع صفافا والمساجد طرقا والحرير لباسا واكثروا الجوروفة الزنا وتهاونوا بالطلاق وؤتمن الخائن وخون الامين وصار المطر قيظا والولد غيظا وامرأ فجرة وزراء كذبه وامناء خونة وعرقا وظلمتا وقلت العماء وكثر القراء وقلت الفقهاء وحلية المصاحف وزخرفت المساجد وطولت المنابر وفسدة القلوب واتخذوا القنيات واستحالت المعازف وشربت الخمور وعطلت الحدود وتقضى الشهور وتقضت المواتيق وشاركت المرأة زوجها فى التجارة وركتا الناس البراذين وتشبهة النساء بالرجال والرجال بالنساء ويحلف لغير الله ويشهد الرجل من غير ان يستشهد وكانت الزكاة مغرما والامانة مغنما واطاع الرجل امرأته وعق امه وقرب صديقه واقصى اياه وصارت الامارات مواريثه وسب آخر هذه الامة اولها وأكرم الرجل اتقاء شره وكثرت الشرط وصعدت الجهال المنابر وليس الرجال الثيجان وضيقت الطرقات وشيد البناء واستغنى الرجال بالرجال والنساء بالنساء وكثرت خطباء منابركم وركن علمائكم الى ولا شكم فاحلوا لهم الحرام وحرموا عليهم التحلال وافتوا هم بما يشتهون وتعلم علمائكم العلم ليجلبوا به دنانيركم ودراهمكم واتخذتم القرآن تجارة وضيعتم حق الله فى اموالكم وصارت اموالكم عند شراركم وقد طعتم اركامكم وشربتم الخمور فى ناديكم ولعبتم بالميسر وضربتم بالكير والمغرفة والمزامير ومتتعتم محاريكم زكاتكم ورأيتموها مغرما وقتل البرى ليغيظ العامة واختلفت اهوائكم وصار العطاء فى العبيد والسقاط وطفف المكاييل والموازين ووليتم اموركم سفها ئكم (رواه ابو الشيخ والديرم)
হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত ,কিয়ামতের আলামত হতে এটিও একটি যে, যখন তোমরা লোকদেরকে দেখবে যে, তারা নামাজ নষ্ট করবে এবং আমানত ধ্বংস করবে এবং কবিরা গুনাহকে তারা বৈধ মনে করবে । সুদ খাবে, ঘুষ খাবে, মজবুত পাকা বিল্ডিং ও ঘর—বাড়ি তৈরী করবে, মন মত চলাচল করবে । দ্বীনকে দুনিয়ার বিনিময়ে বিক্রি করবে, কুরআনকে বাদ্য যন্ত্রের ন্যায় করে ব্যবহার করতে থাকবে (অর্থাৎ বাদ্য যন্ত্র যেমন একটি তামাশার বস্তু হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে তেমনিভাবে কুরআনকেও তামাশার বস্তু হিসেবে ব্যবহার করা হবে) হিং¯্র জন্তুর চামড়াকে বিছানা হিসেবে ব্যবহার করা হবে। মসজিদ সমূহকে চলাচলের রাস্তা বানানো হবে (অর্থাৎ মসজিদের ভিতর দিয়ে বা মসজিদ ভেঙ্গে ফেলে চলাচলের রাস্তা বানানো হবে, যা কোন কোন জায়গায় এরকম করা হচ্ছে। রেশমি কাপড় সচরাচর ব্যহার করা হতে থাকবে বর্তমানে আমাদের দেশে শিল্ক বলে ব্যবহার করছে আদৌ জানে না যে এতো হারাম। লোকেরা অন্যায় অত্যাচার বাড়াতে থাকবে, জ্বিনা—বেভিচারি প্রকাশ পেতে থাকবে এবং লোক জন তালাক দেয়ার ব্যাপারে একেবারেই বেপরোয়া হয়ে উঠবে। খিয়ানতকারীর নিকট আমানত রাখা হতে থাকবে। আমানতদার ব্যক্তিকে খিয়ানতকারী বলে ধারণা করা হতে থাকবে। তেজস্বীভাবে ভারি বৃষ্টি বর্ষণ হবে এবং শিশুরা অত্যন্ত রাগান্বিত ও ত্রুটিশীল জন্মাবে।
আমীর ও ধনী লোকেরা নাফরমান হবে। উজির ও মন্ত্রিবর্গগণ মিথ্যুক হবে। আমানতদারগণ খেয়ানত করতে থাকবে। উরাফা অর্থাৎ বড় বড় কর্মকর্তাদের পি.এস তারা মারাত্মক জালিম, অত্যাচারী হয়ে উঠবে। সামগ্রিকভাবে (বাস্তব) উলামাদের সংখ্যা কমে যেতে থাকবে। কুরআন পড়নে ওয়ালাদের সংখ্যা অধিক পরিমাণে বাড়তে থাকবে; কিন্তু ফাকাহাত ওয়ালা অর্থাৎ দ্বীনের মূল সমঝ বুঝমান লোকের সংখ্যা অধিক হারে কমতে থাকবে। কুরআন (কিতাব) অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ করা হবে। মসজিদ সমূহ চাকচিক্যময় করে গড়ে তোলা হবে। মিম্বর সমূহ অনেক উঁচু উঁচু করে বানানো হবে। মানুষের অন্তর সমূহ নষ্ট হয়ে যেতে থাকবে। বান্দী, গায়িকা আনা হবে, অর্থাৎ গায়িকা দ্বারা গানের আসর তৈরী করা হতে থাকবে। গান ও বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি বৈধ মনে করা হতে থাকবে। যেমন বর্তমান গান্ধা সমাজে নামাজী এবং যাদেরকে দ্বীনের উপর চলে মনে করা হয় তারাই টি.ভি, ভিসিডি, রেডিও, গান, ছায়া ছবি, কম্পিউটারের ছবি ইত্যাদিকে বৈধ মনে করে চলছে। মদ্য পান আম (ব্যাপক) হয়ে যাবে। হুদুদ ও কিসাস রহিত হয়ে যাবে। অর্থাৎ চুরি করলেও হাত কাটা হবে না। জিনা করলেও কোরাঘাত বা রজম করা হবে না। মাসের সময় কমে যেতে থাকবে। অর্থাৎ মাস যেন সপ্তাহ হিসেবে অতিবাহিত হয়ে যাবে। ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করা হবে। মহিলারা তাদের স্বামীর ব্যবসায়ী কাজে শরীক হতে থাকবে। মানুষ ভারী মাল বহনকারী পশুর উপর আরোহণ করবে। মহিলারা পুরুষদের সাজ—সজ্জা আর পুরুষরা মহিলাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করতে থাকবে। অর্থাৎ চাল—চলনে বেশ—ভূষায় বর্তমানে যা চলছে। গায়রুল্লাহ্র নামে কসম খেতে থাকবে। মানুষ সাক্ষী দেয়ার জন্য এগিয়ে থাকবে। অথচ তার কাছে সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। ঝাকাত আদায় করাকে জরিমানা মনে করতে থাকবে। আমানতের মালকে গনিমত মনে করে ব্যবহার করতে থাকবে। পুরুষ তার স্ত্রীর অনুগত হতে থাকবে। মায়ের নাফরমান হবে, বাপকে দূরে ফেলে রাখবে। বাদশাহী যেন মিরাসী সম্পত্তি হবে। রাজ্য পরিচালনা উত্তরসূরী মালের ন্যায় ব্যবহার করবে। যেমন বর্তমানে চলছে। এ উম্মতের শেষ লোকেরা প্রথম জামানার লোকদেরকে গাল—মন্দ করতে (অর্থাৎ যেমন, রাফিজী, খারিজি ও বর্তমান মওদুদী সম্প্রদায়, তাদের স্বভাব হল সাহাবায়ে কেরামদের গাল—মন্দ করা)। মানুষ একে অন্যকে সম্মান করতে থাকবে লৌকিকতার সাথে যাতে করে সে তার উপর জুলুম—অত্যাচার না করে। সরকারী আমলা ও কর্মকর্তাদের প্রাইভেট পারসন অনেক বেশী বেশী হতে থাকবে। জাহেল মূর্খ লোক মিম্বরে উঠবে অর্থাৎ কুরআন হাদীসের সহীহ ইলম থাকবে না; কিন্তু বয়ান ও ওয়াজ করার জন্য লাফিয়ে লাফিয়ে মিম্বরে (চেয়ারে) উঠবে এবং গলত ছলত কথা—বার্তা বলে মানুষদেরকে গোমরাহ করতে থাকবে। পুরুষেরা সম্মানের জন্য মুকুট পরিধান করতে অভ্যস্ত হবে। অথচ পাগড়ী পরা নবী করীম স. এর সুন্নাত, ওটাকে পরিহার করে অন্য সব ক্যাপ ইত্যাদি পরায় অভ্যস্ত হতে থাকবে। বর্তমান সমাজে যা পরিলক্ষিত হয়। চলাচলের রাস্তা—ঘাট সংকীর্ণ হয়ে আসবে। দালান—কোঠা মজবুত আকারে বানানো হতে থাকবে। এক পুরুষ অপর পুরুষকে দিয়ে এবং এক নারী অন্য নারীকে দিয়ে তার যৌন কামনা চরিতার্থ করার অপচেষ্টা করবে। অর্থাৎ যা বর্তমান বিশ্বের নব্য কালচার ও শিক্ষায় শিক্ষিত লোকদের শ্লোগান ও সরকারী আইনে পাস করিয়ে এসব অবৈধ কর্ম—কান্ডের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে। তোমাদের মিম্বর সমূহের খতিবদের সংখ্যা সীমাহীন হারে বাড়তে থাকবে। অর্থাৎ যোগ্যতা থাক বা না থাক খতিবের সংখ্যা বাড়তে থাকবে এবং তোমাদের ওলামায়ে কেরাম রাজা—বাদশা, মন্ত্রী, এমপিদের প্রতি ঝঁুকে পড়বে অর্থাৎ দলাদলি করবে। দ্বীন অপেক্ষা দল বড় হয়ে দাঁড়াবে। যাতে করে তাদের মন মত ফতওয়া দিয়ে যা শরীয়তে বৈধ তা তাদের কাছে অবৈধ করে দিবে, আর যা শরীয়তে অবৈধ তা তাদের কাছে বৈধ করে দিবে। তখন সে সব সরকারী আমলারা ও কর্মকর্তারা খুশি হবে এবং ঐ সব পেট পুজারী ও নামধারী ওলামারা তাদের গাড়ি—বাড়ি, সহায়—সম্পত্তি করতে আর সমস্যা হবে না। যেমন বর্তমান সমাজের কিছু নামধারী, পেট পুজারী, টুপি, দাড়ি লাগিয়ে বড় বড় উপাধি হাফেজ, কারী, আল্লামা, মুফতি, মুফাসসিরে কুরআন টাইটেল লাগিয়ে অনেক হারামকে হালাল আর হালালকে হারাম করার পিছনে লেগে আছে তাদেরকে বলতে চাই যে, তোমার অন্তরে কি আল্লাহ্র ভয় একটুও উদয় হয় না! তুমি সামান্য একটু নিজে নিজে ভাব যে, তুমি কার পথে চলে বাস্তবে কাকে খুশি করার জন্য কুরআন—সুন্নাহ্কে বিক্রিত করছ! আল্লাহ্কে একটু ভয় কর এবং স্বার্থপরতা যে কত বড় ভয়ংকর শাস্তিযোগ্য অপরাধ একটু চিন্তা কর। তোমাদের অনেকে কুরআন হাদিসের ইলম শিখবে যাতে করে ওর দ্বারা তোমাদের কাছ থেকে তোমাদের মুদ্রা দিনার—দিরহাম নিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ যে সব তালেবুল ইলম, ইলম শিখছে যাতে করে ভাল একটা চাকুরি পাওয়া যায়। ভাল একটা পদ পাওয়া যায়, সম্মান পাওয়া যায়। সমাজের মধ্যে বড় উপাধি পাওয়া যায়। এ সব হীন উদ্দেশ্যে ইলম হাসিল করছে এবং কুরআনকে তোমরা ব্যবসার সামগ্রী হিসেবে গ্রহণ করবে, অর্থৎ কুরআন দিয়ে জীবিকা নির্বাহ ও উপার্জনের ব্যবস্থাপনা হিসেবে গ্রহণ করবে। অর্থাৎ ইখলাসের বালাই থাকবে না। যেমন কুরআন বিক্রি করে করে খতম তারাবীহ, মৃত্যুর খতম, কুরআন প্রতিযোগীতা সব গুলোর মূলে উদ্দেশ্য হল কিছু নাম বা ধন—দৌলত উপার্জন করা। কারণ যারা আজ বড় বড় প্রতিযোগী যদি এর বিনিময়ে টাকা—পয়সা বা সার্টিফিকেট না দেয়া হয় তাহলে কয় প্রতিযোগী বা কয় জন খতম পড়নেওয়ালা পাওয়া যাবে তখন দেখা যাবে। কাজেই দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট কোনটা কতটুকু আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য আর কতটুকু ব্যবসা বা রুজি উপার্জন হিসেবে কুরআনের এই প্রতিযোগীতা আর রেওয়াজী খতম ইত্যাদি করা হচ্ছে। তোমাদের মালের ব্যাপারে অর্থাৎ মাল উপার্জন করতে গিয়ে তোমরা আল্লাহ্র হক বিনষ্টকারী হবে। তোমাদের সম্পদ, মাল তোমাদের মধ্যে বদ লোকের কাছে থাকবে। অর্থাৎ অসৎ লোকের পিছনে তোমরা মাল ব্যয় করবে এবং তোমরা মদের আসরে মদ্যপায়ী হবে এবং তোমরা জুয়ার খেলোয়াড় হবে এবং তোমরা ঢোল—তবলা ও বিভিন্ন প্রকারের খেল—তামাসা ও বাদ্যযন্ত্র তামাসার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করবে। তোমরা তোমাদের ঝাকাত তোমাদের মধ্যে মুহতাজ, মুখাপেক্ষি লোকদের থেকে ফিরিয়ে রাখবে। অর্থাৎ তোমাদের মাঝে মুখাপেক্ষি লোক থাকা সত্ত্বেও তোমরা তাদেরকে ঝাকাৎ দিবে না এবং সে ঝাকাৎ আদায় করাকে তোমরা জরিমানা মনে করতে থাকবে। নিষ্পাপ লোকদেরকে কতল করে ফেলবে যাতে সর্ব সাধারণ উত্তেজিত হয়ে উঠে। তোমাদের চাহিদা, খাহেশাত বিভিন্ন ধরনের হতে থাকবে এবং তোমাদের দান—দক্ষিণা ইত্যাদি দূরের লোক ও একেবারে সাধারণ লোকদের মাঝে বণ্টণ করা হবে। দাড়িপাল্লা ও বাটখারা অর্থাৎ মাপের বস্তু খাট করা হবে। অর্থাৎ মাপের মধ্যে ধেঁাকা দেয়ার প্রচলন অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তোমাদের কাজের দায়িত্বে তোমাদের মধ্যে নিকৃষ্ট অপদার্থ মূর্খ লোকদেরকে দেয়া হবে। যারফলে কাজ সহীহ শুদ্ধভাবে আঞ্জাম পাবে না। তখন সব ধ্বংস হয়ে যাবে।
۞কিয়ামতের আলামতঃ উলামায়ে কেরামকে কঠিন ভাবে হত্যা করা হবে۞
عن على كرم الله وجهه ياتى على الناس الزمان يقتل فيه العلماء كما تقيل الكلاب . فياليت العلماء فى ذالك الزمان تحامقوا (رواه الديلمى وابن عساقر)
হযরত আলী (রা:) হতে বর্ণিত মানুষের সামনে এমন যুগ আসছে যখন ওলামায়ে কেরামদের কতল করে ফেলা হবে যেভাবে কুকুর কতল করা হয়। হায় আফসুস! সে যুগে ওলামায়ে কেরাম আহমক হয়ে বসে থাকবে। অর্থাৎ হক কথা বলার সাধ্য থাকতেও শুধুমাত্র স্বার্থপরতার বশবর্তী হয়ে হক কথা বলবে না। আর তখন আল্লাহ্র আজাবে তারা এভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে।
۞
কিয়ামতের আলামতঃ উলামায়ে কেরামের নিকট স্বর্ণ হতে মৃত শ্রেয় মনে হবে۞
عن ابى هريرة رضـ ياتى على العلماء زمان الموت احب الى احده من الذهب الاحمر (رواه ابونعيم)
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত ওলামায়ে কেরামদের সামনে এমন এক যুগ আসছে তখন লাল স্বর্ণের চেয়েও তাদের কাছে মউত অতি পছন্দনীয় হবে। অর্থাৎ হক্কানী—রব্বানী ওলামায়ে কেরাম দুনিয়ার যাবতীয় সহায়—সম্পদ অর্জন করা অপেক্ষা নিজেরা মরে যাওয়া তাদের কাছে অতীব পছন্দনীয় হবে।
۞কিয়ামতের আলামতঃ শাষক গোষ্ঠী জালেম ও স্বৈরাচারী হওয়া۞
عن زبير بن عدى رضـ قال شكونا الى انس رضـ من الحجاج (بن يوسف) فقال اصبروا انه لاياتى عليكم زمان الا الذى بعده شر منه حتى تلقوا ربكم سمعته من نبيكم صلى الله عليه وسلم (وراه البخارى)
ইমাম বুখারী (র:) হযরত ঝুবায়ের ইবনে আদী (রা:) হতে বর্ণনা করেন যে, আমরা কতিপয় লোক গিয়ে হযরত আনাস (রা:) এর নিকট হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ব্যাপারে শিকায়াত করলাম।( অর্থাৎ তার জুলুম, অত্যাচার স্বৈরাচারিতা ও হত্যা ইত্যাদি করা সম্পর্কে) তখন হযরত আনাস (রা:) আমাদেরকে বললেন যে, সবর কর! ধৈর্য ধারণ কর! কেননা আমি তোমাদের নবী (স.) কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের উপর যে যুগ বা সময় অতিবাহিত হচ্ছে কিন্তু তার পর অতিবাহিত সময়টা পূর্বের থেকে অত্যন্ত খারাপ হয়ে আসবে। এভাবে গিয়ে তোমরা তোমাদের রবের সাথে মিলিত হবে। অর্থাৎ তোমাদের জীবনটা এভাবেই শেষ হয়ে যেতে থাকবে যে, বর্তমান সময়টা পূর্বের থেকে খারাপ হয়ে আসতে থাকবে। তবে তোমরা সবর কর, ধৈর্য ধারণ কর! অধৈর্য হয়ো না।
۞কিয়ামতের আলামতঃ ফেৎনার সময় হক ও সুন্নাতের উপর অটল লোকদের কে ৫০ জন শহীদের সওয়াব প্রদান করা হবে۞
عن عتبة بن غزوان رضـ عن النبى صلى الله عليه وسلم قال ان من وراكم ايام الصير المتمسك فيها يوم مئذ بمثل ما انتم عليه له كاج خمسين منكم (رواه الطبرانى)
হযরত উৎবা বিন গজওয়ান (রা:) রসুলুল্লাহ্ (স.) হতে বর্ণনা করেন যে, তোমাদের পরে এমন সময় আসছে যে সময়টা সবর আর ধৈর্যের হবে, ঐ সময় যারা দ্বীনের রজ্জু (হকের উপর, সুন্নাতের উপর, ঈমান, আমালের উপর) শক্ত হস্তে ধারণ করে থাকবে তাদের দৃষ্টান্ত হবে তোমাদের ন্যায়, তাদের প্রত্যেক জন তোমাদের মত পঞ্চাশ জনের সওয়াব প্রাপ্ত হবে কারণ ঐ সময়টা অত্যন্ত কঠিন সময় হবে বিধায় আল্লাহ্ পাক এত বড় সওয়াব ও প্রতিদান দিবেন।
۞কিয়ামতের আলামতঃ ভাল মানুষ গুলো চলে গিয়ে মন্দ মানুষের আবাশ স্থল হবে এ পৃথিবী۞
عن عبد الله بن عمرو بن العاص قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كيف بك اذا لقيت فى حالة من الناس مرجت عهودهم وامانا تهم واختلفوا وكانوا هكذا وشياك بين اصابعه قال فيم تأمرنى قال الزم بيتك واملك عليك سانك وخذماتعرف ودع ما تنكرو عليك يأمر خاصة نفسك ودع عنك امر العامة (رواه ابو داؤد وغيره)
হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আমর বিন আস (রা:) হতে বর্ণিত রসুল (স.) ইরশাদ করেন যে, ঐ সময় তোমার কি অবস্থা হবে যখন তুমি লোকদের মধ্য হতে ময়লার মধ্যে পড়ে থাকবে, অর্থাৎ সমস্ত ভাল লোক দুনিয়া থেকে চলে যাবে আর কিছু ময়লা আবর্জনা থেকে যাবে। তোমার অবস্থান তাদের মধ্যেই হবে তখন তাদের ওয়াদা ও আমানত সবই নষ্ট হয়ে যাবে। লোকেরা আপোষে মতানৈক্য সৃষ্টিকারী হবে এবং তাদের অবস্থা এ রকম হবে অতঃপর রসুল (স.) তাশবীক করলেন অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের মধ্যে ঢুকিয়ে দেখিয়ে দিলেন যে, এভাবে তাদের মাঝে মতানৈক্য সৃষ্টি হতে থাকবে (অর্থাৎ আপোষের তোড় খতম করে জোড় ও মিলাবার হাজারও চেষ্টা করা হবে; কিন্তু পরিশেষে দেখা যাবে যে, সব চেষ্টা ও মেহনত বৃথা হয়ে গেল) তখন সাহাবী (রা:) জিজ্ঞাসা করলেন যে, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! তাহলে আপনি আমাকে সেই সময় কি করার জন্য নির্দেশ করেন? তখন হুজুর স. বললেন: (ঐ রকম সময় যদি তোমার সামনে এসে যায় তাহলে) তুমি তোমার নিজের ঘরকে আকড়ে ধর, নিজের জবানকে নিজের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখ আর তুমি (কুরআন হাদীসের আলোকে) যেটা ভাল বুঝ সে অনুযায়ী আমল করতে থাক এবং তুমি নিজের সংষোধনের প্রতি লক্ষ্য করে চলতে থাক। অর্থাৎ অবস্থা যখন এরকম আসবে তখন উমুমী মেহনত ছেড়ে দিয়ে নিজের ঈমান নিজে বাঁচিয়ে চলতে পারলে সে—ই কামিয়াব।
۞কিয়ামতের আলামতঃ এই নশ্বর পৃথিবীতে হকের উপর অবিচল থাকতে পারবে কারা?۞
عن عمر رضـ قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم سيصيب امتى فى آخر الزمان بلاء شديد لا ينجونه الارجل عرف دين الله فى هد عليه بلسانه وبقلبه فذالك الذى سبقت له السوابق ورجل عرف دين الله فصدق به (رواه ابو نعيم وغيره)
হযরত ওমর (রা:) হতে বর্ণিত রসুলুল্লাহ্ স. ইরশাদ করেন: অচীরেই আমার উম্মাতের উপর শেষ জামানায় এমন কঠিন কঠিন বালা মুছিবত আসবে তখন ঐ সব বালা—মুসিবত হতে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে একমাত্র ঐ ব্যক্তির জন্য যে, আল্লাহ্ প্রদত্ত দ্বীনকে চিনবে ও তার উপর টিকে থাকার জন্য মরনপণ চেষ্টা করে যেতে থাকবে নিজের মুখ দ্বারা ও নিজের অন্তর দ্বারা অর্থাৎ মুখে কথা বলবে তো দ্বীনের কথাই বলবে, অন্তর দিয়ে বুঝবে তো আল্লাহ্র দ্বীনের কথাই বুঝবে, তখন এর দ্বারাই অগ্রগামীরা অগ্রসর হতে পারবে এবং ঐ ব্যক্তি যে, আল্লাহ্র দ্বীনকে চিনল অতঃপর তা বিশ্বাস করল সে—ই একমাত্র নাজাত পেতে পারবে।
۞কিয়ামতের আলামতঃকিয়ামতের আগ মূহুর্তে যখন আহলে হক না থাকবে তখন একাধিক জিবনেই শ্রেয় হবে۞
عن حذيفة رضـ قال قلت يارسول الله هل بعد هذا الخير شر قال نعم دعاة على ابواب جهنم من اجابهم اليها قذفوه فيها قلت صفهم لنا قال هم من جلدنا فيتكلمون بألسنتما قلت فيم تأمرنى إن أدركنى ذالك قال تلزم جمعة المسلمين وامامهم قلت فان لم جماعة ولا امام قال فاعتزل تلك الفرقب كلها ولو ان تعض باصل شجرة حتى ندرك الموت وانت على ذالك (رواه مسلم)
হযরত হুজাইফা (রা:) হতে বর্ণিত যে, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ্! এখন যে মঙ্গল আছে এর পরে কি অমঙ্গল ও খারাবী আসতে পারে? হুজুর স. বললেন, হ্যঁা অনেক আহবায়ক এমন আসবে যারা জাহান্নামের দিকে মানুষকে আহবান করতে থাকবে। সুতরাং যারাই ঐ আহবায়কের আহবানে সাড়া দিবে অর্থাৎ সে আহবান অনুযায়ী কাজ করবে তারাই (আহবায়ক) তাদেরকে (যারা সাড়া দিয়েছে) ধরে ধরে জাহান্নামের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে, তখন আমি বললাম: ইয়া রাসুলুল্লাহ্! তাদের পরিচয় আমাদেরকে বলে দিন। অতঃপর হুজুর স. বললেন তারা আমাদের শরীরেরই হবে, আমাদের মতই কথা বার্তা বলবে, তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ্! ঐ জামানার ঐ সব লোক যদি আমাদেরকে পেয়ে বসে তখন আমাদের করণীয় কি? এ ব্যাপারে আপনার নির্দেশনা কি? হুজুর বললেন: তখন মুসলমানদের (হক) জামাত আকড়ে ধরো এবং মুসলমানদের (হক) ইমাম এর সাথে লেগে থেকো। আমি পূণরায় জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ্! তখন যদি মুসলমানদের সে রকম হক ইমাম ও হক জামাত না থাকে তখন করণীয় কি? তো হুজুর বললেন: তখন (যখন কোন হক জামাত, হক ইমাম না থাকে) সমস্ত ফেরকা ও দল ত্যাগ করে একা একা চলতে থেকো। যদিও হকের উপর একা একা চলতে গিয়ে গাছের মূল (শিকড়) মাড়ির দাঁত দিয়ে আকড়িয়ে ধরে চলার দরকার হয় তাও করিও। আর এভাবে তোমার মৃত্যু এসে যাবে, তুমি মারা যাবে। এটাই তোমার জন্য সর্ব শ্রেষ্ঠ জীবন হবে।
ফায়দাঃ মুসলমানদের (হক) জামাত ও (হক) ইমাম হবার পরিচয় যার মধ্যে বা যাদের মধ্যে ৩ টি বৈশিষ্ট্য থাকবে তারাই হক, আর না হয় সবই বাতেল। (১) আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাত এর আকাঈদ ও আমালের বাহক হবে। (যার বিস্তারিত আলোচনা আছে “আকিদুত ত্বহাবিয়্যাহ্” কিতাবের মধ্যে) (২) সকল কাজকর্মে রসুলুল্লাহ্ স. এর অনুসারী হবে, অর্থাৎ কোন কাজেই সুন্নাতের খেলাফ কাজের সাথে জড়িত হবে না এবং বিদয়াত ও গুনাহের কাজের সাথে লিপ্ত হবে না। (৩) সব কাজের মধ্যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যবস্তু হবে একমাত্র আল্লাহ্ পাকের সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি, পার্থিব হীন উদ্দেশ্য বা লোক দেখানো উদ্দেশ্য মোটেই হবে না। সুতরাং এই তিনটি বৈশিষ্ট্য যার মধ্যে বা যে দলের মধ্যে মৌলিকভাবে বিদ্যমান থাকবে সে বা তারা হল হক ব্যক্তি বা হক জামাত। আর তখনই তাদের সাথে মিলে থাকার জন্য হুজুর নির্দেশ করেছেন। আর যদি ঐ রকম দল না থাকে তাহলে একা একা চলে নিজের ঈমান—আমাল বাঁচিয়ে চলার জন্য নির্দেশ করেছেন।
۞কিয়ামতের আলামতঃ কিয়ামতের পূর্বে মুহুর্তে শাষক গোষ্ঠি অত্যাচারী হলে উম্মাতের করনীয় কি হবে?۞
عن حذيفة رضـ يكون بعدى أئمة لا يهتدون بهدى ولا يستنون بسنتى وسيقوم فيهم رجال قلوبهم قلوب الشياطين فى جثمان اناس قال حذيفة كيف اصنع يا رسول الله ! ان ادركت ذالك قال تسمع تطيع الامير وان ضرب ظهرك واخذ مالك (رواه مسلم)
উক্ত সাহাবী হযরত হুজাইফা (রা.) হতে বর্ণিত হুজুর বলেন, আমার পরে কতিপয় ইমাম শোষক এমন হবে যারা আমার আনিত হেদায়েতের সাথে হেদায়াত প্রাপ্ত হবে না এবং সুন্নাত ও আদর্শ তাদের আদর্শ হবে না। তাদের মধ্যে কিছু লোক এমন হবে যাদের কলব ও অন্তর গুলো হবে শয়তানের অন্তরের ন্যায়, অথচ শরীরটা হবে মানুষ রূপী। অর্থাৎ তারা মানব রূপে শয়তান হবে। হযরত হুজাইফা (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ্! এ রকম জামানা যদি আমরা পেয়ে বসি তাহলে আমাদের করণীয় কি? হুজুর উত্তর ফরমাইলেন: তখন তোমরা তোমাদের আমীর (প্রতিনিধির) কথা শুনতে থেকো ও মানতে থেকো। যদিও সে জুলুম ও অন্যায়ভাবে তোমাদের পিঠের উপর মারধর করে ও তোমাদের সহায়—সম্পদ নিয়ে যায়। অর্থৎ এ রকম জুলুমের শিকার হলেও তার কথা শুনতে থাক ও মানতে থাক। অর্থাৎ যে যাবত প্রকাশ্যে (তোমাদেরকে গুনাহের কাজের হুকুম না করে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের আনুগত্যতা স্বীকার করে চলো। এর উদ্দেশ্য হল মুসলমানদের সাথে যথাসাধ্য মিলে—মিশে থাকার চেষ্টা করো। যে কোন বাহানা দেখিয়ে মুসলমানদের জামাত ত্যাগ করো না বা আলাদা হবার চিন্তা—ভাবনা করো না। কারণ দলীয় শক্তি একটা বড় শক্তি। তবে বাতিল, ভ্রষ্ট ও গোমরাহ দল কখনও তাদের শক্তি নয়।
۞কিয়ামতের আলামতঃ কিয়ামতের পূর্বে ভ্্রান্ত মতবাদ হতে দূরে থেকে ছহীহ দ্বীনের উপর অবিচল থাকার নির্দেশ۞
عن ابى ذر رضـ ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال له يا ابا ذر! كيف انت اذا كنت فى حثالة وشبك بين اصابعه قال اماتا مرنى يارسول الله ! اصبر. اصبر. اصبر. خالقوا الناس يا خلاقسهم وخالفوهم فى اعمالهم (رواه الحاكم والبيهقى)
হযরত আবু জর (রা.) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ্ স. ইরশাদ করেন হে আবু জর! যখন তুমি ময়লা—আবর্জনার মধ্যে জীবনযাপন করবে তখন তোমার কি অবস্থা হবে? তারপর (দু’হাতের আঙ্গুল সমূহ একটার মধ্যে আরেকটা ঢুকিয়ে দিলেন। অতঃপর হযরত আবু জর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ্! তখন আপনি আমাকে কি হুকুম করেন? হুজুর বললেন: তুমি সবর করো ,তুমি সবর করো, তুমি সবর করো (বৈধ কাজ ও বৈধ স্বভাবে) তাদের সাথে মিলে—মিশে চলো; কিন্তু তাদের অবৈধ ও নাজায়েজ কাজে কর্মে তাদের বিরোধিতা করে চলো।
۞কিয়ামতের আলামতঃ ফেৎরনার সময় উম¥তে মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করা হতে বিরত থাকার নবীর নির্দেশ۞
عن خالد بن عرقت رضـ عن النبى صلى الله عليه وسلم قال له يا خالد! انها ستكون بعدى احداث وفتن وفرقة واختلاف فاذا كان ذالك فان استعطف ان تكون عبد الله مقتول لا القاتل فافعل (رواه امام احمد)
হযরত খালিদ বিন উরকুত্বাহ্ (রা.) বর্ণনা করেন: রাসুলুল্লাহ্ স. তাঁকে বললেন: হে খালিদ! আমার পরে অচীরেই অনেক নতুন ফেৎনা, নতুন নতুন দল ও অনেক মাতানৈক্য সৃষ্টি হতে থাকবে। যখন এ রকম সময় আসবে তখন তুমি প্রয়োজনে মারা যাও তাও ভাল কিন্তু (পারত পক্ষে) হত্যাকারী হয়ো না।
۞কিয়ামতের আলামতঃকিয়ামতের আগে ফেৎনার যুগে অল্প আমাল ও নাজাতের উসিরলা হবে۞
عن ابى هريرة رضـ قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انكم فى زمان من ترك منكم عشر ما امربهم هلك ثم ياتى زمان من عمل منهم بعشر ما امر به نجا (رواه الترمذى)
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হুজুর স. ইরশাদ করেন: তোমরা এমন জামানায় আছ যখন তোমাদের মধ্য হতে যদি কেউ নির্দেশিত আহকাম হতে দশের এক ও ছেড়ে দেয় তাহলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে; কিন্তু পরে এমন এক জামানা আসছে যখন তাদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি দশের এক ভাগ নির্দেশিত আহকাম পালন করবে তাহলে তার দ্বারা সে নাজাত পেতে সক্ষম হবে।
۞কিয়ামতের আলামতঃ মসজিদে উচু আওয়াজে কথা বলা,পাপিরা সমাজের কর্ণধর হওয়া۞
عن على ابن ابى طالب وابى هريرة رضـ قالا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم وظهرت احد صوات فى المساجد وساد البقيلة فانسقهم وكان زعيم القوم ارذلهم فارتقبوا عند ذالك ريحا حمراء وزلزلة وخسفا وسخا وقذفا
হযরত আলী(রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত,রসুলুল্লাহ্ স. ইরশাদ করেন যখন মসজিদের মধ্যে আওয়াজ উঁচু হতে থাকবে, সমাজের নেতা হবে সমাজের বড় পাপিষ্ঠ ব্যক্তিগণ সমাজের কর্ণধার সমাজের নিকৃষ্ট লোকেরাই হবে। …… ….. তখন তোমরা লাল রংয়ের বাতাস অর্থাৎ আগুন মিশ্রিত বাতাস, ভূমিকম্প, চন্দ্র—সূর্য গ্রহণ, আকৃতি পরিবর্তন ও পাথর বর্ষণ এ জাতীয় আজাবের অপেক্ষায় থাক।
۞কিয়ামতের আলামতঃ প্রাচুর্যের ে¯্রাত বয়ে যাওয়া۞
عن ابى هريرة رضـ لا تقوم الساعة حتى يكثر المال فيكم فيفيض حتى يهم رب المال من يقيل صدقته حتى يعرضه فيقول الذى يعرضه عليه لا اربلى فيه
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত যতক্ষণ পর্যন্ত মাল ও প্রাচুর্যের ে¯্রাত না বইবে ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না। এমনকি এক পর্যায়ে অবস্থা এ রকম দাঁড়াবে যে, মালদার ব্যক্তি তার মালের সদকা দেয়ার জন্য পেরেশান হয়ে উঠবে যে, এমন কোন মানুষ পাওয়া যায় কি—না যাকে তার সদকাটা দিবে; কিন্তু তা পাওয়া সম্ভব হবে না। এমনকি যার কাছে সদকা নিয়ে যাবে সে—ই বলবে: এখন আমার এ সদকার মালের প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ এ ধরনের প্রাচুর্যের ে¯্রাত হযরত উসমান (রা.) এবং ওমর বিন আব্দুল আজিজ (রা.) এর যুগে হয়েছিল। আবার আগামীতেও এ রকম প্রাচুর্যের ে¯্রাত বইবে।
۞কিয়ামতের আলামতঃ পাহাড় স্বস্থান হতে সরে যাবে۞
عن سمورة رضـ لا تقوم الساعة حتى تزول الجبال عن اماكنها (رواه الطبرانى)
হযরত সামুরা (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত পাহাড় স্বস্থান হতে সরে না যাবে। অর্থাৎ কিয়ামতের পূর্বে অনেক অনেক পাহাড় স্বস্থান হতে হটে যাবে। যেমন পাহাড় ধ্বসে পড়ে সমতল হয়ে যাওয়া আবার পাহাড় হটে সমুদ্রে পরিণত হওয়া। যার অনেক ঘটনা এ যাবত সংঘটিত হয়েছে, আরো হবে।
۞কিয়ামতের আলামতঃ অত্বধিক ভুমিকম্প হওয়া۞
عن ام سلمة رضـ سيكون بعدى خسف بالمشرق وخسف بالمغرب وخسف فى جزيرة العرب قتل تخسف الارض وفيهم الصالحون قال نعم اذا اكثر اهلها الخبث
হযরত উম্মে সালামা (রা.) হতে বর্ণিত হুজুর স. বলেন: অচীরেই আমার পরে পৃথিবীর পূর্ব অঞ্চলে ভূমি ধ্বস হবে এবং পৃথিবীর পশ্চিম অঞ্চলে ভূমি ধ্বস হবে এবং আরব ভূখণ্ডে ভূমি ধ্বস হবে। জিজ্ঞাসা করা হল, ঐ সব জায়গায় নেককার লোকদের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও কি ভূমি ধ্বস হবে? হুজুর বললেন, হ্যঁা যখন ঐ সব এলাকার বাসিন্দাদের অধিকাংশ লোক নাফরমান ও গুনাগার হবে। (যার বর্তমানে শত শত ঘটনা ভূমিকম্প, পাহাড় ধ্বসে পড়া, টর্নেডো, হ্যারিকেন, সুনামি ইত্যাদি বিভিন্ন নামে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
۞কিয়ামতের আলামতঃ দিন কাল খাট হওয়া, আসমানী ইলম উঠে যাওয়া,গুম হত্যা বেড়ে যাওয়া۞
عن ابى هريرة رضـ لا تقوم الساعة حتى يقبض العلم وتكثر الزلازل ويتقارب الزمان وتظهر الفتن ويكثر الهرج وهو القتل (رواه البخارى وابن ماجه)
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত কিয়ামত কায়েম হবে না, এমনকি আসমানী ইলম উঠায়ে নেয়া হবে, ভূমিকম্প বেশী বেশী হতে থাকবে, জামানা একেবারে কাছে কাছে চলে আসবে। অনেক অনেক ফেৎনা প্রকাশ পেতে থাকবে এবং কতল, হত্যা খুব বেশি বেশি হতে থাকবে।
۞কিয়ামতের আলামতঃ হজ্ব উমরা আদায় করার উপর বিভিন্ন বাধা বিপত্তি বেড়ে যাওয়া۞
عن ابن مسعود رضـ قال قال رسول الله صلى الله وسلم لا تقوم الساعة حتى لا يحج البيت (رواه الحاكم)
হযরত আবু সাঈদ (রা.) হতে বর্ণিত হুজুর স. ইরশাদ করেন কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত হজ্জ করা বন্ধ করে দেয়া না হবে। অর্থাৎ কিয়ামতের আগে এমন সময় আসবে যখন হজ্জ করতে বাঁধা দেয়া হবে বা নিষেধ করে দেয়া হবে। হয়ত যেমন বর্তমানে হজ্জ করার উপর পাবন্দী লাগান হচ্ছে যে, ৫ বছর পর্যন্ত ২য় বার হজ্জে যেতে পারবে না বা ৪০ বছর বয়সের কমে উমরা হজ্জে যেতে পারবে না, আরো বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা আছে যার কারণে ইচ্ছা করলেই হজ্জ, উমরা করা সম্ভব হবে না। আর এটাও একটা কিয়ামতের নিদর্শন।
۞কিয়ামতের আলামতঃ হজরে অসওয়াদ উঠিয়ে নেয়া হবে, যা হবে একে বারে শেষ মুহুর্তে۞
عن ابن عمر رضـ لا تقوم الساعة حتى يرفع الركم (رواه الس
হযরত ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত হজরে আসওয়াদ উঠিয়ে নেয়া হবে, অর্থাৎ কিয়ামতের আগে এমন সময় আসবে যখন হজরে আসওয়াদ উঠিয়ে নেয়া হবে। কিয়ামতের ব্যাপারে রসুলুল্লাহ্ স. ওহীর মাধ্যমে যা যা ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন তার অনেকটা সংঘটিত হয়ে গেছে। আর বড় বড় কিছু কিয়ামতের আলামত আছে যে গুলি পরে আসবে যার পর এ নম্বর আর বাকি থাকবে না। যেমন ইমাম মাহদী (র.) এর আবির্ভাব, দাজ্জালের বহি:প্রকাশ, হযরত ঈসা (আ.) এর অবতরণ ইত্যাদি।
(এখান থেকে ভিন্ন পৃষ্ঠায় লেখা আনতে হবে)
কিন্তু তার পূর্বে আরো অনেক গুলি ছোট ছোট কিয়ামতের আলামত প্রকাশ পাবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ্র ওলী হযরত শাহ নিয়ামতুল্লাহ্ (র.) কাশ্ফ ও ইলহামের মাধ্যমে ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন যা বর্তমানে তিলে তিলে প্রকাশ পাচ্ছে।
۞হযরত শাহ নিয়ামতুল্লাহ (রহঃ) এর ভবিশ্যৎ বানী সমূহ:۞
হযরত শাহ নিয়ামতুল্লাহ্ (র.) এর সংক্ষিপ্ত জন্ম পরিচয়: তাঁর জন্মের সঠিক তারিখ জানা যায়নি। তবে এতটুকু জানা গেছে যে, তিনি সুলতান রাজুখান তুর্কখানের আমলেই জন্ম গ্রহণ করেন। বংশগত দিক হতে তিনি ছিলেন সাইয়েদ। তাঁর পিতার নাম ছিল বন্দেগী সাইয়েদ মীর আতাউল্লাহ্ (র.)। কাশ্মীরের নারনওয়াল শহরে হযরত শাহ নিয়ামতুল্লাহ্ (র.) জন্ম গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি “ওলীয়ে কাশ্মীর” নামে প্রসিদ্ধ হয়েছিলেন।
তিনি তাঁর মায়ের দুধ পান করা অবস্থায় কথা বলতেন। তিনি মাত্র ৪ বছর বয়সের সময় পূর্ণ কুরআন শরীফ পড়ে শেষ করলেন। পরে ১৩ বছর বয়সের সময় তিনি তাফসীর, হাদীস ও ফেকাহ্র কিতাবাদি পড়ে আলিম হন। তীরন্দাজী, তলোয়ারবাজী ও যাবতীয় যুদ্ধ বিদ্যায় দক্ষতা লাভ করেন। এটাই ছিল তার জীবনের কারামত বা বিশেষ দক্ষতা।
৫৪৮ হি. সনে, মোতাবেক ১১৫২ খৃষ্টাব্দে শাহ নিয়ামতুল্লাহ্ ছা. (র.) এ ভবিষ্যৎ বাণী পুস্তিকা আকারে লিপিবদ্ধ করেন। যা তিনি ফার্সী ভাষায় কবিতা আকারে লিখেন। যার মধ্যে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া কেন্দ্রিক ভবিষ্যৎ বাণী লিপিবদ্ধ করেন।
তাই এখানে ঐ সব ফার্সীতে লিখা কবিতার অর্থ উল্লেখ করার চেষ্টা করছি। জগত বিখ্যাত ওলীয়ে কামেল হযরত শাহ নিয়ামতুল্লাহ্ (র.) ৫৪৮ হি. সনে মোতাবেক ১১৫২ খৃষ্টাব্দে এ কাসীদাহ্খানা রচনা করেন। যুগ যুগ ধরে তার এ কাসীদার এক একটি ভবিষ্যৎ বাণী আশ্চর্যজনকভাবে ফলে গেছে। মুসলিম জাতি বিভিন্ন দূর্যোগকালে এ কাসীদাহ্ পাঠ করে করে তাদের হারানো প্রাণশক্তি ফিরে পেয়েছেন এবং নতুন আশায় উদ্দীপিত হয়ে উঠেছেন। এ দেশের ইংরেজ শাসনের ক্রান্তিকালে এ কাসীদাহ্ গুলি মুসলমানদের অন্তরে মহা আলোড়ন সৃষ্টি করে। তখন এর অসাধারণ প্রভাব লক্ষ্য করে বৃটিশ বড় লাট লর্ড কার্জন এর শাসনামলে (১৮৯৯ Ñ ১৯০৫ ঈসায়ী) এ কাসীদাহ্ পড়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
ফার্সী ভাষায় রচিত হযরত শাহ নিয়ামতুল্লাহ্ (র.) এর এ সুদীর্ঘ কবিতায় ভারত উপমহাদেশের তথা গোটা বিশ্বের ঘটিতব্য বিষয় সম্পর্কে অনেক ভবিষ্যৎ বাণী করা হয়েছে। নবী—রাসুল গণের ভবিষ্যৎ বাণী ছাড়া অন্য কারোর ভবিষ্যৎ বাণীর উপর যদিও দৃঢ় বিশ্বাসের আবশ্যক নেই; কিন্তু আল্লাহ্র ওয়ালীগণ কাশ্ফ ও ইলহামের মাধ্যমে আল্লাহ্র কাছ থেকে অনেক কথা জানতে পারেন যা কখনও গায়েবের খবর নয়; বরং তা শুধুমাত্র আল্লাহ্ প্রদত্ত গায়েবী ইলম।
********** ************ ************* ******
অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার জানা ইলমের উপর (যথারীতি) আমল করবে আল্লাহ্ পাক তাদের অজানা (গায়েবী) ইলম দান করবেন। তাঁরই প্রদত্ত ইলমে হযরত শাহ ছাহেব (র.) এ আলোড়ন সৃষ্টিকারী কাসীদাহ্ রচনা করেন। এ কারণে এর গ্রহণযোগ্যতাও ইসলামের মধ্যে অনেকাংশে বিদ্যমান।
কাসিদাহ্ (কবিত
یا رینہ شویم ازمازہ پند* ا فتاد قرن دویم کہ افتاد از ڑمانہ
পুরাতন কাহিনী বাদ দিয়ে কেবলমাত্র (দক্ষিণ—পূর্ব এশিয়া) ভারত উপমহাদেশের দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের বিপদাপদের কথা বলছি যা ভবিষ্যতে ঘটতে থাকবে।
در ملک ہند و بنگال اور ادگور گافی*شاہی کنند اما شاہی چوں ظالمانہ
বঙ্গদেশ (বাংলাদেশ) ও ভারতে গোরগানী (শাহ তৈমুরের বংশধরগণ) অত্যন্ত প্রতাপের সাথে রাজত্ব করবে; কিন্তু তাদের রাজত্ব হবে মারাত্মক জুলুম—অত্যাচারের সাথে।
تا مدت سہ صد سال دو ملک ہندو بنگال * کشمیر و شہر کو گیوند تا کہ انہ
তারা বঙ্গদেশ, ভারত, কাশ্মীর, কুপাল ও কেরানা প্রভৃতি এলাকায় তিন শত বছর যাবৎ রাজত্ব করবে।
تا ھفت پشا ایشا ں در ملک ہند و ایران * آخر شوند یک ان در کہف غائبانہ
অতঃপর তারা ক্রমাগত সাত পুরুষ পর্যন্ত ভারত ও ইরানে রাজত্ব করার পর আসহাবে কাহাফের ন্যায় হারায়ে যাবে। যাদেরকে আর খঁুজে পাওয়া যাবে না।
آں آخر ز ما نہ آید ازیں زمانہ* شاہ باز صدرہ بینی از دست را ئگا نہ
পরিশেষে তারপর এমন এক দিন আসবে যখন তোমরা মুসলমানরা দেখতে পাবে যে বীর—বিক্রম মুসলমানদের উন্নতি হ্রাস পেতে থাকবে। অর্থাৎ মুসলিম ব্যাঘ্র জাতি তখন বিড়ালের ন্যায় অন্য জাতির খোশামোদে আত্মতৃপ্তি অর্জন করবে। তখন এ সব হবে মুসলমানরা তাদের আত্মমর্যাদাবোধ হারিয়ে ফেলার কারনে।
رود اڑّٹک سہ بار آں از خون اھل کفار * پری شود بایک بار جر یان جاریانہ
যুদ্ধের দরুণ আটক নদী তিন বারে কাফেরদের রক্তে রঞ্জিত হবে। এমনকি এক বার রক্তের ে¯্রাতে নদী প্রবাহিত হবে।
آں را جگان رنگی خمور و مست بنگی* در ملک شان فنگی آئند غائیا نہ
সে যুগের রাজা—বাদশা এক কথায় শাসকগণ মদ্যপায়ী ও গাঁজাখোর হবে আর সে সুযোগে ইংরেজ বাহিনী তাদের হাত থেকে রাজত্ব ছিনিয়ে নিবে। বাস্তবিকই ৭০০ বছর মুসলিম শাসনের পুরনো ইতিহাস ভারতবর্ষ থেকে যখন বিদায় নিল এ দেশের মুসলিম শাসকগোষ্ঠী ভোগ—বিলাসিতার স্বীকার হল তখনই ইংরেজ বেনিয়া গোষ্ঠী তাদের উপর চড়াও হয়ে সবই তছনছ করে চিরতরে বিদায় দিল। এটাই আমাদের (মুসলমানদের) দূর্ভাগ্য ও চরম পরিণতি।
بینی تو عیسوی ھا بر تخت باد شاہی *گیرند مو مناںرا باحیلہ و بھانہ
তখন তোমরা ইংরেজদেরকে রাজত্বের সিংহাসনে দেখবে এবং এটাও দেখবে যে, তাদের রাজনৈতিক চক্রান্তে বিশেষভাবে মুসলমানগণ কোনঠাসা হয়ে পড়বে। বর্তমানে তা—ই হচ্ছে।
صد سال حکم شاں در ملک ھنٹ می داں* آں دیدہ عزیزاں ایں نکتہ و بھانہ
ভারতবর্ষে তাদের রাজত্ব এক শত বছর স্থায়ী হবে। হে বন্ধুগণ! সেসব চাল—চক্রান্তের কথা স্মরণ রেখো, ভুলে যেয়ো না।
اسلام و اھل اسدم گردد غریب و حیران * بلخ و بخار توراق در و ہند سند میانہ
তখন তোমরা দেখবে যে, বলখ, বুখারা, তুরস্ক, সিন্ধু, ভারত প্রভৃতি দেশে ইসলাম ও মুসলমানগণ অত্যন্ত দূরাবস্থায় পড়বে। (বর্তমানে এ সব শত ভাগ বিদ্যমান। এর থেকে পরিত্রাণের কোন পন্থা খঁুজে পাওয়া যাচ্ছে না।)
در مکتب و مدارس علم فرنگ خواند* از علم فقہ و تفسیر غافل شود بگانہ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা মাদরাসা গুলোতে ইংরেজী শিক্ষার প্রবণতা বেড়ে যাবে। পক্ষান্তরে ফেকাহ শাস্ত্র ও কুরআনের তাফসীর ও অন্যান্য ধর্মীয় ইসলামী শিক্ষা তথা আসমানী শিক্ষা ও তার অনুশীলন প্রতিনিয়ত হ্রাস পেতে থাকবে। বর্তমানে সরকার নিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদরাসা গুলির অবস্থা তো তা—ই। যে আলিয়া মাদরাসার ইতিহাস হলো ইসলাম ধ্বংসের ইতিহাস।
فسق فمجور ہر سو رايج شود بہ ہرگو * مادر بد ختر خود سازد بسے بےنہ
পাপাচারী ও ব্যভিচারী চতুর্দিকে ব্যাপকতা লাভ করবে। এমনকি নিজের মা ও বোনের সাথে নানা রকমের অবৈধ মেলামেশায় লিপ্ত হতে দেখবে। বর্তমানে টিভি, ভিসি,আর ইত্যাদির নগ্ন ফিল্ম ও ছায়াছবি যুবক যুবতীরা দেখে ঐ সব অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। যা ওখানে দেখে তা—ই বাস্তবে তারা ঘটাচ্ছে।
آں مفتیان گمراہ فتوی دہند بے جاں * از حکم شرع سازند بیروں بے بھانہ
ঐ যুগে গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট মুফতীগণ নিজ স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে অর্থলোভী, পদলোভী হয়ে অন্যায় ও ভুল ফৎওয়া জারি করে শরীয়তের গণ্ডী হতে বের হয়ে যাবে। যা বর্তমানে অসংখ্য নামধারী মুফতী ও আলেমগণ এ রকম গলত ফৎওয়া দিয়ে নিজে গুমরাহ হচ্ছে ও সরলমনা সাধারণ লোকদেরকে গুমরাহ করে যাচ্ছে।
فاسق کند بز رگی بر قوم از سترگی *بس خانہ بزرگی سازند بے نشا نہ
ভণ্ড ও দূনীর্তিপরায়ণ লোকেরা সাধু—দরবেশের বেশে বড় সাজবে ও বুঝর্গী দেখাবে, অথচ তাদের ঐ সব কথিত দরবেশী ও সাধুত্ব কেবলমাত্র বাইরের একটা আবরণ হবে। অর্থাৎ বর্তমানের আমাদের দেশের প্রচলিত আটরশি, চন্দ্রপুরী, দেওয়ানবাগী, মাইজভাণ্ডারী, সুরেশ্বরী প্রমুখগণ যারা পীর ও দরবেশীর নাম করণে জাতিকে ধেঁাকা দিয়ে চলছে ও সর্ব সাধারণকে বোকা বানাচ্ছে। এ সব গুলো সেই ভবিষ্যৎ বাণীরই বাস্তব রুপায়ন মাত্র। কেননা ঐ সমস্ত ভণ্ডদের ভণ্ডামী ও নষ্টামীর তরীকত ও মারেফতের নাম করণের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের কাছ থেকে টাকা—পয়সা, নজর ও নেয়াজ খাওয়া আর লোকদেরকে দুনিয়ামুখী করা। আখেরাত ও পরকাল সম্পর্কে না নিজেরা বুঝে আর না অন্যদেরকে বুঝাতে পারে; বরং এ ব্যাপারে তাদের ন্যূনতম কোন ধ্যান ধারণাও নেই।
در سہر کوہ کشلا کی نو شند خمر بے باک * ہم نینگ چرس زیاق نو شند با غیانہ
শহর বা শহরতলিতে, গ্রাম—গঞ্জে তথা সর্ব সাধারণ একেবারে বেপরওয়াভাবে মদ্যপানে ও গাঁজাখুরিতে, তার ক্রয়ে—বিক্রয়ে ও সেবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
احکام دین و اسلام چرں شمع گشتہ خا موش*عا لم جہول گردد جاہل شود عالما نہ
ঐ সময় দ্বীন ও ইসলামের বিধি—বিধান ও আহকাম নিভানো বাতির ন্যায় বঁুজে যাবে। অতঃপর গণ্ড মূর্খরা আলেমের সাজে সাজবে আর আলেমগণ জাহেল সাজবে অর্থাৎ ইলম থাকা সত্ত্বেও ইলম অনুযায়ী আমল না করে নিজেকে গণ্ড মূর্খের পরিচয়ে আত্মপ্রকাশে অভ্যস্ত হবে। বর্তমানে যেমন অনেক লোককে দেখা যায় যারা উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত, কুরআন হাদীসের ন্যূনতম ইলম রাখে না অথচ তারা কুরআনের অপব্যাখ্যায় ও হাদীসের মনগড়া অর্থ বলতে তাদের অন্তরে মোটেই রেখাপাত করে না। যে আমি কি বলছি বা এর পরিণাম কি?
آں عالماں عالم گردند ہمچوں ظالم * نا شستہ روئے خودر ا بر سہ زند عمامہ
ঐ সময় অনেক ওলামারা জালেমদের মত হবে। অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও (তাকওয়া, খোদাভীতি না থাকা সত্ত্বে¡ও, কুরআন হাদীসের তাহকীক না থাকা সত্ত্বে¡ও, নিজের আত্ম প্রকাশ করার হীন উদ্দেশ্যে নিজের মাথায় রিয়ার পাগড়ী লাগিয়ে ঘুরবে যাতে লোক জন তাকে বড় পীর সাহেব, বুঝর্গ সাহেব মনে করে। অথচ হৃদয়ের কোণে পাগড়ীর মুহাব্বাত ও সুন্নাতের মুহাব্বাত মোটেই নেই। যে সব তার অন্যান্য কাজ—কর্ম প্রমাণ করে। তার সেই দামী পাগড়ী শুধু লোক দেখান মাত্রই।
زینت دہند خودرا باطرہ بجبہ* گو سالہ ھا ئے سمری باشد دروں جامہ
বেশভূষায় ও জুব্বা পরে নিজেকে সাজিয়ে পরিয়ে আত্ম গৌরব প্রকাশ করবে। আর অন্তরের মধ্যে সামেরীর বাছুর পুজার ন্যায় গুমরাহী লুকিয়ে রাখবে। এ ধরনের ভ্রান্ত মতবাদী লোকদের বহিঃপ্রকাশ হবে।
کقار مو مناں را تر غیب بے دیں نما یند * از حج چوں مانع آیشد از خواندن قرانہ
মুমিন মুসলমানগণ যখন কুরআন তিলাওয়াত হতে ও হজ্জ করা হতে বিরত থাকতে থাকবে তখন কাফেররা মুসলমানদেরকে গুমরাহী ও বদ দ্বীনের প্রতি আহ্বান করতে থাকবে।
دوکس بتام احمد گمراہ کنند بے حد *سازند از دل خود تفسیر فی القرانہ
আহমদ নামক দু’ব্যক্তি হবে যারা মন গড়া কুরআনের তাফসীর করে মুসলিম জন সাধারণকে সীমাহীন পথভ্রষ্ট করবে। (তাই সম্ভবত এ দু’ব্যক্তি সেই গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, যে কাদিয়ানী গুমরাহ জামাতের প্রণেতা। ২য় হল পাকিস্তানের আহমদ পারভেজ, যে মুনকিরে হাদীসের প্রণেতা।)
طاعون و قحط یکجا گردد بہ ہند بیدا * بس ہزسذماں بمیرند ہرجا ازیں بھانہ
ভারতবর্ষে মারাত্মক মহামারী ও দূর্ভিক্ষ দেখা দিবে এবং বহু লোক মহামারী ও দূর্ভিক্ষে মারা যাবে।
یک زلزلہ کہ آید چوں زلزلہ قیامت * جا پاں تباہ گردد یک نصف ثالثانہ
কিয়ামতের ন্যায় মারাত্মক প্রলয় দেখা দিবে যা জাপানের এক তৃতীয়াংশের অর্ধেক (অর্থাৎ ছয় ভাগের এক ভাগ মানুষ বা স্থান) ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। যা গত বছর খানেক আগে সুনামী নামের জলোচ্ছাস ও ভূমিকম্পে সংগঠিত হয়ে ২য় বিশ্ব যুদ্ধের থেকে ৮ গুণ মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়ে গেছে।
بعد آں شود چوں جنگے برو سیاں و جاپاں * جا پاں فتح یابد بر ملک روسیانہ
এর পর জাপান এবং রাশিয়ার মধ্যে এক যুদ্ধ সংঘটিত হবে, যেই যুদ্ধে জাপান, রাশিয়ার উপর বিজয় লাভ করবে।
ہر دو جوں شاہ شطربخ بر یک بساط بے سنج * مردے میاں جو یند از بہر صلح نامہ
তারা উভয় পক্ষই পুরা খেলার চালের মত সন্ধি করার জন্য কোন এক বিচারকের সন্ধান করার চেষ্টায় থাকবে।
سر جدا نمایند از جنگ بار آیند * صلح کنند اما صلح منافقا نہ
বিচারকের (তৃতীয় পক্ষের) সিদ্ধান্ত মোতাবেক একটি চুক্তিনামা সম্পাদিত হবে এবং উভয়ই এ চুক্তিনামা অনুসারে নিজ নিজ সীমান্ত পৃথক করে নিবে। এভাবে যদিও সন্ধি হয়ে যাবে; কিন্তু ঐ সব সন্ধি হবে নিছক প্রতারণামূলক। যার পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।
بر قاف میدان روسی شود حکمراں * خوا رزم خیوہ یک آں گیرند تاکر ا نہ
তারপর রাশিয়া কোহেকাফ সহ সমগ্র পার্বত্য এলাকা, খাওয়ারজেম, খীওয়া এবং হিমালয় পার্বত্য এলাকা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ বিশাল এলাকা রাশিয়া নিজের অধীনে নিয়ে নিবে। তখন এ সব এলাকায় রাশিয়ার একচ্ছত্র রাজত্ব কায়েম করে বসবে।
بر بحر خضر ، گیلان قابل شوند یک آں * ہم چیں ، تخت ایران گیرند بسے زمانہ
কাস্পিয়ান সাগর, গীলান, চীন এবং ইরান পর্যন্ত সর্বত্র কমিউনিজমের প্রভাব ছড়িয়ে পড়বে।
از باد شاہ اسلام عبد المید نامی * بعد از عزیز گردد سلطان خاص عامہ
আব্দুল হামিদ নামে এক জন মুসলমান হবেন, যিনি সর্ব সাধারনের মাঝে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করবেন।
برا و نصاری اعدا پر سو غلو نمایند * پس ملک او بگیرند یا حیلہ و بھانہ
খৃষ্টবাদীগণ শত্রুতাবশত বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা ও ধেঁাকাবাজি করে তার (আ: হামিদের রাজ্য) ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে যাবে।
بعد از حمید گدد سنطان شاہ خامس *از تخت باد شاہی گردد چوں ناگھا نہ
এমনিভাবে শাহ আ: হামিদের পর পঞ্চম সুলতান আকস্মিকভাবে ক্ষমতাচ্যুত হবেন।
از شرق و غ رب یکسہ حاکم شوند کافر * چون اکں شود بر بر ایں حرف وایں بھانہ ‘ جنگ عظیم سازند در دشت مرد میرند*بر قوم تر کیانہ آئند غائبانہ
তখন সারা বিশ্বের পূর্ব ও পশ্চিমের সমস্ত কাফিরদের মিত্র বাহিনী এক জোট হয়ে তাদের ক্ষমতা ও শাসন কায়েম করবে এবং সব কিছুই উলট—পালট করে ফেলবে। তার পর বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হবে এবং তাতে অনেক লোকই প্রাণ হারাবে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তুর্কিদের মারাত্মক পরাজয় হবে। (অনেকে বলেন, সম্ভবত এটা ছিল সেই প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ)
آخر حبیب اللہ صاحب قرآن من اللہ * گیرند ز نصرت اللہ شمشیر بے تپامہ
পরিশেষে আল্লাহ্র কোন ওলী আল্লাহ্র সাহায্যে অস্ত্র ধারণ করবেন (অথবা হাবিবুল্লাহ্ নামক কোন ব্যক্তি আল্লাহ্র সাহায্যে অস্ত্র হাতে নিবেন)।
گردد ازو مسلمان غالب چوں فضل رحمن* یعنی گہ قوم افغان باشند شا دمانہ
তখন আল্লাহ্র মেহেরবানীতে মুসলমানরা তাদের কৌশল ও দক্ষতার উসিলায় বিজয়ী হবে। আর আফগান জাতি অত্যন্ত খোশহাল হবে।
وقتیکہ جنگ جا پاں با چین رفتہ باشد* نصرنیاں بہ پیکا ر آئند باہمانہ
যখন চীন ও জাপানের মধ্যে লড়াই শুরু হবে তখন খৃষ্টবাদীরাও পরস্পরে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।
قوم ےرتسوی را بر ہم نمود اول * با انگلش واطالی گیرند جنگ نامہ
এর পূর্বে ঐ ইংরেজরা ফরাসীদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়বে। অতঃপর ইটালি ও ইংল্যাণ্ডের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যাবে।
ایں غزوہ تابہ شش سال باشد ہمہ بدنیا * از آب شور نمکین تاد شت و حشیانہ
এ যুদ্ধে তামাম দুনিয়াতে ছয় বছর কাল স্থায়ী হবে এবং জলে স্থলে সর্বত্রই এ দাবানল ছড়িয়ে পড়বে। (অনেকে বলেন, এটা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ হতে পারে যা সংঘটিত হয়ে গেছে।)
نصرانیاں کر باشند ہندر ستاں سیار ند* تخم بدی بکا ر ند فقجا و دانہ
দুষ্ট খৃষ্টবাদীরা ভারতবর্ষকে ভারতীয় জন সাধারণ এর হাতে রাজ্য ক্ষমতা অর্পন করে যাবে ঠিক; কিন্তু যাওয়ার সময় স্থায়ী ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করে রেখে যাবে। যার দ্বারা পরবতীর্তে ঐ সব ক্রুশ ওয়ালারাই তাদের গুমরাহীর ফল খেতে থাকবে। অর্থাৎ এ দেশের মানুষ যদিও জন্ম সূত্রে হবে ভারতীয়; কিন্তু কৃষ্টি—কালচার, মন—মানসিকতায় হবে খৃষ্টবাদী, যদিও হবে ভারতবষীর্য়রা মুসলমান; কিন্তু চাল—চলনে, বেশ—ভূষায়, লেবাস—পোশাকে, সব কাজে হবে ক্রুশবাদী। আর তা এখন দিবালোকের ন্যায় একেবারেই পরিস্কার যে, মুসলমানরা মুসলিম জাতীর দাবীদার হয়েও আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, দাম্পত্য জীবন, শিক্ষানীতি, রাষ্ট্রনীতি, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সর্বত্রই ইংরেজদের অন্ধ¡ অনুকরণ। অর্থাৎ ঐ সাদা চামড়া ওয়ালারা যা বলে তারই অনুসারী। তাদেরটাই মনপুত, ইত্যাদি আর এটাই ছিল তাদের সে জাল, যে জালে আমাদের দেশের মুসলমানেরা আবদ্ধ হয়ে পিষ্ট হচ্ছে। এতে ঐ সব মুসলমানদের ভালোই লাগছে। যেমন এক জন মদখোর মদ খেয়ে, জিনাখোর জিনা করে সাময়িক আনন্দ উপভোগ করে, তেমনি এ দেশের মুসলমানরা ইংলিশ কালচারে এতটাই অভ্যস্ত যে, ওটাই তাদের পরম প্রিয়।
آں مرداں از طرف چوں مردہا شنودند * یک بار جمع آیند بر باب عالیانہ
ইংরেজগণের ভারত ছেড়ে যাওয়ার সুসংবাদ শ্রবণ করে চতুর্দিক থেকে লোকেরা এক উঁচু স্থানে একত্রিত হবে।
ناگا ہ مومناں را شوری پد ید آید * با کافراں نمایند جنگے چوں رستمانہ
হঠাৎ করে মুসলমানগণ হট্টগোল শুনতে পাবে আর কাফেরদের সাথে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করবে।
در حین بیقراری ہنگاہ اضطاراری *رحمی کند چوں باری بر حال مومنان
এ মুসিবতের সময় আল্লাহ্পাক মুসলমানগণের উপর মেহেরবান হবেন।
پنجاب شھر لاہر ہم ڈیرہ جات بنور* گشمیر ملک منصور گیر ند غالبانہ
পাঞ্জাব, লাহোর, পার্বত্যাঞ্চলের ডেরা সমূহ এবং কাশ্মীর প্রভৃতি এলাকা মুসলমানগণ নিজেদের অধিকারে নিয়ে আসবে।
چترال ننگ پر بت باسین ملک گلگلت * پس ملک پائے تبت گیر ند غائبانہ
তখন চিত্রল, গিলগিট এবং তিব্বতেও মুসলমানদের আধিপত্য স্থাপিত হবে।
حامد شود علم دا در ملک ہا ئے کفار* ذی النار گشتد کفار از لطف آں یگانہ
আল্লাহ্র মেহেরবাণীতে হামিদ নামক এক ব্যক্তির হাতে ইসলামী পতাকা উত্তোলিত হবে এবং তিনি কাফেরদেরকে পরাজিত করবেন।
اعراب نیز آیند از کوہ دست مامون * سیلاب آتشی از ہر طرف جار پانہ
আরব মুজাহিদগণ এ যুদ্ধে অত্যন্ত নিরাপদের সাথে পাহাড় পর্বত অতিক্রম করে কামানের গোলার ন্যায় চতুর্দিক থেকে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।
آخر یوم حج مہدی خروج سازد *آن شھرہ خروجش شہور در جہانہ
পরিশেষে এক হজ্জের মৌসুমে ইমাম মাহদী (র.) আত্মপ্রকাশ করবেন। তাঁর আবির্ভাবের সংবাদ পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে।
خاموش باش نعمت اسرار حق مکن فاش * از سال ”کنت کنزا“ باشد چین بیانہ
হে নিয়ামতুল্লাহ্! সাবধান! আল্লাহ্র গোপন রহস্য আর প্রকাশ করিও না। এ কথা গুলি ***** এর সনে বলা হয়েছে। (অর্থাৎ ***** শব্দের অংক হিসাব বের করলে তাতে ৫৪৮ হিজরী সন হয়। শাহ নিয়ামতুল্লাহ্ ছাহেব (র.) ৫৪৮ হিজরীতে এ সব ভবিষ্যৎবাণী করেছেন,যা পরবতীর্তে কালে কালে সংঘটিত হয়েছে আর হতে থাকবে। সুতরাং জ্ঞানী ও সচেতন ব্যক্তিরা এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে চলা উচিৎ।
দ্বিতীয় কপি
پارینہ قصہ شویم از تازہ ہند گویم *آفات قرن دویم آ فتاد از ز مانہ
কাহিনী বাদ কেবল ভারতবর্ষে আসন্ন বিপদাপদের কথা গুলিই বলছি যা দীর্ঘ কাল ধরে ক্রমান্বয়ে একের পর এক যুগ যুগ ধরে আসতে থাকবে।
صاحب قرآن ثانی آال نیز ال گور گانی شاہی کنند اما شاہی چوں ظالمانہ
কুরআন ওয়ালারা অর্থাৎ তুকীর্গণ দ্বিতীয় ধাপে গিয়ে এবং মোগল বংশীয় বাদশাহগণ এ দেশে রাজত্ব কায়েম করবে বটে; কিন্তু তারা জালেমদের ন্যায় ব্যবহার করবে, যা পরে তাদের ধ্বংসের কারণ হবে।
عیش و نشاط اکثر گرند جان بخاطر * کم ی کنند یکشس آں طرز کیانہ
তারা অত্যন্ত বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হবে যা তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে। আর তুর্কী নিয়ম অর্থাৎ ইসলামী রীতি—নীতি তারা ছেড়ে বসবে।
و فتنہ حکومت از شاں آید بغیر مہمان* اغیار سکہ رانند اض فرب حامکانہ
রাজত্ব তাঁদের হাত থেকে অনাকাংখিতভাবে চলে যাবে এবং ভিন্ন জাতি (ইংরেজরা) বহু ধেঁাকা ও প্রতারণা দ্বারা এ দেশেরে রাজত্ব নিজ হাতে নিয়ে নিবে।
بعد آں شود چو جنگے بارئو سیان و جاپاں * جا پان فتح یابد بر ملک راسیانہ
তারপর জাপান রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বাঁধবে। সে যুদ্ধে জাপান রাশিয়ার উপর জয় লাভ করবে।
سر حد جدا نمایند از جنگ باز ر گیند *صلح کنند اما صلح متا فقانہ
যুদ্ধ শেষে উভয় পক্ষ (তৃতীয় পক্ষের সাহায্যে) যুদ্ধ বিরতি মেনে নিবে এবং যার যার সীমান্ত পৃথক করে নিবে, উভয়ের মধ্যে একত্রে চুক্তিনামা সম্পাদিত হবে বটে; কিন্তু তা হবে সম্পূর্ণ প্রতারণামূলক।
এখানে উল্লেখ থাকে যে, কোরিয়া নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য জাপান—রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে “পোর্ট অব আর্থার এবং ভিলা ডিভাস্টিকে” অবস্থিত রাশিয়ার নৌবহর ঘেরাও করে এবং রাশিয়ানদেরকে সেখান থেকে অনেক দূর পর্যন্ত তাড়িয়ে দেয়। পরে ১৯০৫ সনে রাশিয়ার নৌবহরের অবশিষ্টাংশও অনুরূপভাবে দখল করে নেয়। ফলে ১৯০৮ সনে রাশিয়া বাধ্য হয়ে জাপানের সাথে সন্ধির চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করে সীমান্ত পৃথক করে নেয়।
طاعون و قحط یکجا گردد بہ ہند پیدا *پس مومنان بمیرند ہرجا ازیں بھہانہ
ভারতবর্ষে মহামারী ও খাদ্যাভাব দেখা দিবে। এতে অনেক মুসলমান বিভিন্ন জায়গায় মারা যেতে থাকবে।
یک ز لزلہ آید چوں زلزل قیامت * جاپاں تباہ گرد یک نصف ثالثانہ
জাপানে কিয়ামত সম এক ভয়াবহ ভূমিকম্প হবে। এতে জাপানের এক তৃতীয়াংশের অর্ধেক (ষষ্ঠাংশ) ধ্বংস হয়ে যাবে। ১৯৪৪ সনে জাপানের দু’টি প্রধান শহর টোকিও এবং ইয়োকুহামায় কিয়ামত সম ভূমিকম্প হয়েছিল। ঐ পংক্তিতে এ দিকেই ইঙ্গিত বহন করে।
تاچار سال جنگے افتد بہ بر غرمی *فاتح الف گردد بر جیم فا سقانہ
চার বছর পর্যন্ত পশ্চিমাঞ্চলে যুদ্ধ চলবে। এ যুদ্ধে ইংরেজরা জয়ী হবে! ইংরেজদের এ জয়লাভ কূটনৈতিক চাল বা প্রতারণার মাধ্যমে হবে।
جنگ عظیم باشد قتل عظیم شازد* یک صد و سی و یک لک باشمار جانہ
বিশ্ব যুদ্ধ সংঘটিত হবে এবং এতে মারাত্মক হত্যাকান্ড ঘটবে। এ যুদ্ধে এক কোটি একত্রিশ লাখ লোক প্রাণ হারাবে। প্রকাশ থাকে যে, প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ ১৯১৪ সনের ১৪ আগস্ট তারিখে আরম্ভ হয়েছিল এবং ১৯১৮ সনের ১১ নভেম্বরের দিন ১১ টা ১১ মিনিটের সময় শেষ হয়েছিল। বৃটিশের দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে, এ যুদ্ধে এক কোটি ত্রিশ লাখেরও বেশি অর্থাৎ প্রায় একত্রিশ লাখ লোক প্রাণ হারিয়েছে।
اطھار صلح باشد چوں صلح پس بندی * بل متقل نباشد ایں صلح در میا نہ
সন্ধি স্বরুপ চুক্তিনামায় এক মত হবে বটে; কিন্তু উভয়ের মধ্যে এ সন্ধি দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
ظاہر خاموش لیکن ہنھا ں کبفند سامانہ * جیم و الف مکرر رود مبازر آنتہ
উভয় পক্ষই বাহ্যিকভাবে নীরব থাকবে; কিন্তু গোপনে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকবে। ইংরেজ ও জার্মানীর মধ্যে পূণরায় যুদ্ধ সংঘটিত হবে।
وقتکہ جنگ جاہاں باچیں فتادہ باشد * نصرانیاں بپیکار آئید باہمانہ
চীন ও জাপান যখন যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে তখন ইংরেজরাও পরস্পর যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে।
پس سال ست ویکم آغاز جنگ دویم * مہلک تریں اول باشد بہ جارحانہ
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শেষ হবার একুশ বছর পর দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ আরম্ভ হবে। এ দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ হতেও অনেক ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করবে।
প্রকাশ থাকে যে,
১ম বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয় ঃ ১৪ আগস্ট, ১৯১৪ ঈসায়ী সনে
১ম বিশ্ব যুদ্ধ শেষ হয় ঃ ১১ নভেম্বর, ১৯১৮ ঈসায়ী সনে
২য় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয় ঃ ০৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯ ঈসায়ী সনে
২য় বিশ্ব যুদ্ধ শেষ হয় ঃ ০৯ মে, ১৯৪৫ ঈসায়ী সনে
এমতাবস্থায় প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের মধ্যবর্তী সময় ২১ বছর কাল অতিবাহিত হয়।
امداد ہندیاں ہم از ہند دادہ باشد * لا علم ازیں یر باشد آں جملہ رائگا نہ
ভারতীয়গণ এ যুদ্ধে ইংরেজদেরকে সাহায্য করবে; কিন্তু তাদের এ সাহায্য পরবর্তীকালে যে তাদের ব্যর্থতার কারণ হবে, তা তারা কখনও বুঝতেও পারবে না।
آلات یرق پیما اسلاح حشر بر پا* سازند اھل حرفہ مھور آ زمانہ
সে সময় বৈজ্ঞানিকগণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্বারা এমন সব মারণাস্ত্র তৈরী করতে সক্ষম হবে যার সাহায্যে মূহুর্তের মধ্যে গোটা পৃথিবী ধ্বংস করা সম্ভব হবে। (যা বর্তমান সময়ে দূর পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র ও পরমাণু বোমা নামে পরিচিত।)
باشی آگر بمشرق شنوی کلام مغرب * آید سدود غیسی بر طرز عر شیانہ
তখন যদি তুমি প্রাচ্যে বাস কর তবে পাশ্চাত্যের কথাবার্তা শুনতে পাবে। তা এত সুদূর হতে এমনভাবে শুনতে পাবে, যেন মনে হবে আসমান হতে অবতীর্ণ হয়ে আসছে। (অর্থাৎ যা বর্তমান সময়ে রেডিও, টেলিভিশন, ওয়ারলেস, মোবাইল প্রভৃতি নিত্য নতুন প্রযুক্তি সমূহ তার জ্বলন্ত প্রমাণ)
دوالف و اؤس ہم چیں مانند شہد شیرں* ہر الف و جیم اولی ہم الف تایانہ =با برق تیغ رانند کوہ غضب دوانند* تا آ نکہ فتح یابد از کینہ وبیانہ
আমেরিকা, ইংল্যান্ড, রাশিয়া এবং চীন এক জোট হয়ে ইটালী, জার্মানী এবং জাপানের উপর আক্রমণ চালাবে। যত দিন তাদের উপর জয়লাভ করতে না পারবে, তত দিন পর্যন্ত তাদের উপর বিদ্যুতের ন্যায় আক্রমণ করতেই থাকবে এবং শেষ পর্যন্ত হিংসা ও প্রতারণার ভিতর দিয়ে যুদ্ধে জয় লাভ করবে।
ایں غزوہ تا بشش سال ماند بد ہر پیدا *پس مردماں بمیرند ہر جا ازیں بہانہ
উক্ত ২য় বিশ্ব যুদ্ধ অবিরাম দীর্ঘ ৬ বছর যাবত চলতে থাকবে এবং পথে ঘাটে অসংখ্য মানুষ এ যুদ্ধে প্রাণ হারাবে।
نطرانیاں کہ با شند ہند وستاں سپارند * تخم یدی بکارند ازفق جاودانہ
ইংরেজরা ভারতবর্ষে রাজত্ব ছেড়ে চলে যাবে ঠিক; কিন্তু স্থায়ী ষড়যন্ত্রের বীজ এ দেশে রেখে যাবে, যা পরবর্তীতে জাতির জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে
تقسیم ہند کردد دردو حصص ھو یدا * آشوب ورنج پید از مکر راز بھانہ
ভারতবর্ষ দু’ভাগে বিভক্ত হবে; কিন্তু এত সব কিছুর মধ্যে বিভিন্ন কারণে অকারণে বিবাদ ও দুুঃখজনক ঘটনাবলী ঘটতেই থাকবে।
بے تاج بادشاہی کنند ناداں* اجراء کنند فماں فی الجملہ مھلانہ
মুকুট বিহীন অযোগ্য বাদশাহগণ রাজত্ব করবে। অজ্ঞতা ও অযোগ্যতার দরূণ অনেক অনেক আইন—কানুন তারা রাজ্যে জারি করবে; কিন্তু সবই তার অযোগ্যতা বলে প্রমানিত হবে।
از رشوت و تساھل دانستہ از تغافل * تاویل باب باشد احکہم خسر وانہ
ঘুষ প্রথা ও অলসতার কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারী কাজ—কর্ম যথাসময়ে পূর্ণ করা হবে না। এতে করে সর্ব সাধারণ অযথা হয়রানীর স্বীকার হতে থাকবে।যা সরকারি সমস্ত অফিস,আদালতে মামলা মুকাদ্দামায় শতভাগ বিদ্ধমান।
عالم ز علم فالاں دا ناز فہم گریاں * نا داں بن قص عریاں لصروف والھنہ
আলেমগণ তাদের ইলমের কারণে অত্যন্ত আফসোস ও কান্নাকাটি করতে থাকবেন; কিন্তু অযোগ্য ও জ্ঞান পাপীরা তাদের মূর্খতাবশত নাচ গানের আসরে নেশায় বিভোর হয়ে থাকবে।
از امت محمد سہ زند شوند بے حد * افعال کبر مانہ اعمال صیانہ
রাসুলুল্লাহ্ স. এর উম্মতগণ সীমাহীনভাবে অন্যায় কার্যকলাপ এবং পাপাচারে লিপ্ত হবে।
شفقت بسر ے تعظیم در بسرے * تبدیل گشتہ باشد از فتند زمانہ
যুগের পরিবর্তনে আদর—স্নেহ ও ভালবাসা নিষ্ঠুরতায় পরিণত হবে। আর তাযীম ও সম্মান বেয়াদবীতে পরিণত হবে।
ہمشیرہ با برادر پراں ہم بمادر * پدراں ہم بد خز بحرم بعا شقانہ
বোন ভাইদের সাথে, মা ছেলেদের সাথে এবং পিতা কন্যার সাথে যৌন অপরাধে জড়িত হয়ে পড়বে।
حلت رود ساسر حرمت رود ساسا * عصمت رود برابر از جبر معو یا نہ
হারাম—হালালের মধ্যে পার্থক্য মোটেই থাকবে না এবং মহিলাদের অপহরণ করা হতে থাকবে। ইভটিজিং এর মাধ্যমে তাদের শালীনতা ও ইজ্জত লুণ্ঠন করা হতে থাকবে।
بے مہرگی سراید بے پردگی درآید * عقت فروش باطن معصوم ظاہرانہ
উলঙ্গপনা, অর্ধ উলঙ্গপনা ও বেপর্দেগী যেন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। ( শুধু তাই নয়; বরং উলঙ্গ ও অর্ধ উলঙ্গতা সামাজিকতার রূপ পরিগ্রহ করবে) মহিলারা তাদের ইজ্জত ও মান সম্মান বিক্রয়কারী হবে। অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে পর্দার বেশভূষা দেখাবে; কিন্তু গোপনে দেহ ব্যবসায় লিপ্ত হবে।
دختر فروس با شند عصمت فروش با شند*مرداں سفلہ طینت با وضع زاہدانہ
অত্যন্ত হীন মন্যতার লোক জন বুজুর্গীর ভাব দেখায়ে বুঝগীর্ বিক্রি করতে থাকবে। অর্থাৎ কতিপয় লোক জন সাধু সেজে বেশ—ভূষায় বুঝর্গ ভাব প্রকাশ করে লোকদের থেকে হাদিয়া তোহফা নেয়ার ও পেট পুজারিতে লিপ্ত হবে। অতি গোপনে সামান্য পয়সার বিনিময়ে মেয়ে বিক্রি করার ন্যায় ঘৃণ্যতর পেশায় লিপ্ত হবে
شوق نماز و روز حج و زکوۃ و فطرہ * کم گردد و برآید یک بار خاطرانہ
নামাজ, রোজা, হজ্জ, ঝাকাত এবং এ সব কাজ মুসলমানদের মধ্যে বিরাট বোঝা হিসেবে পরিগণিত হতে থাকবে।
خوں جکر بنوشم بارنج با قو گوکم * لللہ ترک گرد اکں طرز راہبانہ
কলিজার রক্ত খেয়ে অত্যন্ত দুঃখের সাথে তোমাকে নসীহত করছি খেয়াল করে শুন! আল্লাহ্র ওয়াস্তে ঐ সব ইংরেজী বেশ—ভূষা ও চাল—চলন পরিত্যাগ কর।
قہر عظیم آید بہر سزا اکر شاید* اجرا خدا بازد یک حکم قاتلدنہ
আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে অত্যন্ত ভয়াবহ গজব নেমে আসবে (এবং ঐ সমস্ত গুনাহ ও পাপের পরিণামে এ খোদায়ী গজব সমীচীনও বটে) অসাধারণ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে থাকবে। যা আল্লাহ্র ফয়সালায় হবে।
سلم شود کشتاں افتاں شوند و خیزاں *ازدست ینزہ بنداں یک قوم ہندوانہ
সশস্ত্র হিন্দুদের হাতে মুসলমান ভীত সন্ত্রস্ত হবে ও ভয়ে পালাতে থাকবে। সাথে মারা যেতে থাকবে ও কঠিন ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে।
ارزاں شود برابر جائداد و جاں مسلم * خون می شود روانہ چوں بحر یرانہ
মুসলমানদের স্থাবর ও অস্থাবর সহায়—সম্পদ ও জান—মাল একেবারেই মূল্যহীন হয়ে যাবে এবং তাদের রক্ত এতই স্বস্তা হবে যে, প্রবাহিত সমুদ্রের ন্যায় তাদের রক্তের ে¯্রাত বইতে থাকবে।
از قلب پنج ابی خارج شوند ناری* قبضہ ینتد مسلم بر ملک عاصبانہ
পাঞ্জাবের মধ্যস্থল থেকে দোযখী বের হয়ে যাবে এবং তাদের সহায় সম্পদ মুসলমানরা অধিকার করে নিবে। অর্থাৎ ঐ এলাকা মুসলমানদের অধীনে চলে আসবে।
بر عکس ایں برآید در شہر مسلماں* قبضہ کنند ہندو برشہر جابرانہ
এরই বিপরীত ঘটনা ঘটবে মুসলমানদের শহরে অর্থাৎ হিন্দুরা মুসলমানদের শহর দখল করে নিবে।
شہر عظیم یاسد اعظم ترین مقتلی* صد یکر بلا چوں کر بل باشد بخانہ خانہ
মুসলমানদের সর্বাপেক্ষা বড় শহর বধ্যভূমিতে (কবরস্থানে) পরিণত হবে। ঘরে ঘরে যেন কারবালা সংগঠিত হবে। অর্থাৎ গৃহ যুদ্ধ শুরু হয়ে ঘরে ঘরে এলাকায় এলাকায় কাটাকাটি শুরু হয়ে লোক জন প্রাণ হারাতে শুরু করবে।
راہبرز مسلماناں در پر دہ یار آیناں * امداد دادہ باشند ازعہد فا جارنہ
তখন মুসলমানদের নেতা এমন হবেন যিনি অতি গোপনে মুসলমানদের শত্রুর সাথে বন্ধু সুলভ আচরণ দেখাবেন এবং ভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে লুকিয়ে মুসলমানদের সাহায্য দান করবেন।
ایں قصہ بین العیدین ازش نون شورد طین*سازد ہنود بدرا معتوب ےی زمانہ
উক্ত ঘটনা দু’ঈদের মধ্যবর্তী সময়ে ঘটবে। এ কারণে বিশ্ববাসী হিন্দুদেরকে তিরস্কার করবে।
ماہ محرم آید باتیغ و یا مسلماں * ساز تد مسلم آں دم اقدم جارحانہ
অতঃপর মুহাররম মাসে মুসলমানদের হাতে তলোয়ার (অস্ত্র) আসবে। তখন মুসলমানগণও আক্রমণে অগ্রসর থাকবে।
(বি.দ্র. কবিতার বচনের মধ্যে *** দ্বারা চন্দ্র ও *** দ্বারা সূর্য বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিৎরের মধ্যবর্তী সময়ে যখন চন্দ্রের অবস্থান থাকবে প্রথম অক্ষ রেখায় আর সূর্যের অবস্থান থাকবে পঞ্চম অক্ষ রেখায়। এটা একটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের হিসাব।)
بعد اں شرد چوں شور شی در ملک ہند پیدا* عثماں نماید آں دم آ عرم غازیانہ
সারা ভারতবর্ষে তখন মারাত্মক এক গণ্ডগোল সৃষ্টি হবে। তখন উসমান নামক এক ব্যক্তি জিহাদের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবেন।
ینز آں حبیب اللہ صاحب قرآن من اللہ * گیرد ز نصرۃ اللہ شمشیر زمیانہ
তাঁর সাথে সাথেই হাবিবুল্লাহ্ নামক জনৈক ব্যক্তি যিনি আল্লাহ্ পাকের পক্ষ থেকে খুবই নেক বখত হবেন, আল্লাহ্র সাহায্যে তলোয়ার (অস্ত্র) হাতে নিয়ে সম্মুখভাগে অগ্রসর হতে থাকবেন। (হাবিবুল্লাহ্ এটা কোন ব্যক্তির নামও হতে পারে বা এ মহৎ কাজ যাকে দিয়ে আল্লাহ্ তায়ালা করাবেন তিনিই আল্লাহ্র হাবীব অর্থাৎ দোস্ত হিসেবে গণ্য হবেন। বিচিত্র নয় যে, তিনি ঐ উসমান নামক ব্যক্তিও হতে পারেন। যেমন খয়বরের যুদ্ধের সময় রসুলুল্লাহ্ স. বলেছিলেন, যাকে আগামী কাল যুদ্ধের পতাকা দেয়া হবে তিনি এমন লোক হবেন যিনি আল্লাহ্ ও রসুল স. কে ভালবাসবেন এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রসুল স. ও তাঁকে ভালবাসবেন। তখন ছাহাবায়ে কেরাম এমনটা সুসংবাদ না জানি আমাদের মধ্যে কে পান, সকলেই এ সসংবাদের প্রত্যাশী ছিলেন; কিন্তু পরিশেষে হযরত আলী (রা.) ভাগ্যবান হলেন।
از غازیاں سر حد رزھ زمین چوں مرتد*بہر حصول مقصد ھکند وامھانہ
সীমান্তের মুজাহিদগণ দ্বারা ভূমি কম্পিত হবে। তাঁরা তাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ঢুকে পড়বেন।
غلبد کنند ہچوں مور وصلع شباشب* حقا کر قوم افغان یا شند فا فاتحانہ
পিপড়ার ন্যায় তাঁরা রাতারাতি (প্রথম পদক্ষেপেই) জয় লাভ করবে এবং ইহা সুনিশ্চিত সত্য যে, আফগান জাতি (আফগান মুজাহিদ / তালেবান) জয় লাভ করবেই।
یک جاں شوند افغاں ہم دکناں وا بران* فتح کنند ایناں کل ہند غازیانہ
আফগানী (বর্তমানে তালেবান) দক্ষিণী (বর্তমানে পাকিস্তান) ইরানী সহ মিলে সম্মিলিতভাবে গোটা ভারত জয় করে নিবে।
کشتر شوند جملہ بدخواہ دین وایمان * خالق تماید اکرام از لطف خالقانہ
ইসলামের সকল শত্রু কাফের—মুশরিক ও মুনাফিকরা সকলেই মারা পড়বে। তখন আল্লাহ্ পাক স্বীয় রহমত নাযেল করে মুসলমানদের উপর দয়া করবেন।
ازگ شش حروفے بقال کیمہ پرور* مسلم شود بخاطہ از لطف آں یگانہ
তারপর এক জন ইসলাম বিদ্বেষী হিন্দুবাদী যার নামের মূল অক্ষর (** ফার্সী ভাষায়) হবে এবং সে নামটি হবে ছয় অক্ষর বিশিষ্ট। আল্লাহ্র মেহেরবানীতে সে আন্তরিকভাবে ইসলাম গ্রহণে ধন্য হবে।
خوش می شود مسلماں از لطف و فضلی یزداں * کل ہند پاکی گردد از ر سم ہنداونہ
আল্লাহ্ তায়ালার ফজল ও মেহেরবানীতে মুসলিম জাতি আনন্দিত হবে। তৎসংগে গোটা ভারত হিন্দুদের রীতিনীতি হতে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্রতা লাভ করবে।
چوں ہند ہم بمغرب قسمت خراب گردد* تجدید یاب گردد جنگ سہ نوباتانہ
ভারতের ন্যায় ইউরোপের ভাগ্য মন্দ হবে তখন তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ বাঁধবে।
کاھد الف جھان نقطہ رونماند * امد کہ تام و یادش باشد مورخانہ
এ যুদ্ধে ইংরেজগণ এমনভাবে ধ্বংস হবে যে দুনিয়ার বুকে ইতিহাসের পাতায় ব্যতিত অন্য কোথাও তাদের অস্তিত্ব বাকি থাকবে না।
تعز بر غیب یابد بحرم خصاب گیرد * جنگ نہ شرفرازد برطرز راہبانہ
গায়েব (অদৃশ্য স্থান) থেকে এমন খোদায়ী গজবে শাস্তি তারা পাবে ও অপরাধী বলে অভিহিত হবে যে, খৃষ্টান পরিচয়ে আর কখনও মাথাচাড়া দিতে পারবে না।
دنیا خراب کردہ باشند بے ایماناں * گیرند منزل آخر فی النار دوز خانہ
এ বেঈমান কাফের খৃস্টবাদীরা গোটা বিশ্বকে (স্ব ঘোষিত দারোগাগিরি করে) ধ্বং করে ছাড়বে। অবশেষে তাদের সে পাপের পরিণামে তারা চির কালের জন্য জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
(উপরোক্ত ঐ কয়েকটি কবিতার পংক্তির কারণে ইংরেজ লর্ড কার্জনের আমলে ঐ ভবিষৎবাণী ছাপানো নিষিদ্ধ ছিল।)
را زیکہ گفترام من دریں کا شفترام * باشد برائے نصرت استاد غائبانہ
যে সব গোপনীয় বিষয় আমি প্রকাশ করলাম তা গায়েবী সাহায্যের জন্য গায়েবী উস্তাদের কাজ করবে।
عجلت اگر بخواہی نصرت اگر بخواہی* کن پیروی خدارا احکام قد سیانہ
যদি খোদায়ী মদদ চাও এবং অবিলম্বেই চাও তাহলে সব ব্যাপারে আল্লাহ্র বিধান মেনে চল।
چون سال بہترے از کان زھوتا آید * مہدی خروخ سازد در سال مہد یانہ
যে বছর কানা দাজ্জাল বের হবে সে বছরই হযরত ইমাম মাহদী (র.) এর আবির্ভাব হবে।
خاموش باشد نعمت اسرار حق مکن فاش * در سال کنت کنزا باشد خینین بیانہ
হে নিয়ামতুল্লাহ্! নীরব হও! আল্লাহ্র গোপন তথ্য আর প্রকাশ করো না। তবে যা কিছু বলা হল তা کنت کنزا সালে বলা হয়েছে অর্থাৎ ৫৪৮ হিজরি সনে বলা হয়েছে
(৮৪৭ বছর পূর্বেকার অর্থাৎ ৫৭ হিজরি সনের আরো কিছু ভবিষ্যৎ বাণী)
راست گویم باد شاہی درھاں پیداشود * نام او یثمور شاہ صاحب قرآن پیداشود
আমি সত্যই বলছি যে, পৃথিবীতে তিমুর নামক এক জন প্রতাপশালী বাদশাহ জন্ম গ্রহণ করবেন।
بعد ازاں مہراں شاہ کشور ستاں گر دد پدید * وامی صاحب قرآن اندر جاھاں پیداشود
শাহ তৈমুরের পর অন্য এক জন দিগ্বিজয়ী বাদশাহ তার স্থলাভিষিক্ত হবেন। (তবে দিগিজয়ী বাদশাহ্র নাম উল্লেখ করা হয় নাই।
بعد گردد عمر بن شیخ مالک آیں زمیں* در میاں عیش و عشرت بے گماں پیدا شود
এর পর ওমর বিন শায়খ নামক জনৈক ব্যক্তি এ রাজ্যের অধিপতি হবেন; কিন্তু তার শাসনামলে বিলাসিতা বৃদ্ধি পাবে।
شاہ با بر بعد ازاں در ملک کابل بادشاہ*پس بدہلی وامی ہزد ستاں پیدا شود
অতঃপর কাবুলের (আফগানিস্তানের রাজধানী) বাদশাহ বাবর ভারত আক্রমন করবেন এবং দিল্লীর সিংহাসন অধিকার করবেন।
از سکندار چوراسد نوبت بابرا ہم شاہ * زیں یقیں داں فتنہ در ملیک آں پیداشود
শাহ সেকেন্দার লোদী থেকে শাহ ইব্রাহীম লোদীর রাজত্বকাল পর্যন্ত অতিমাত্রায় দ্বন্দ্ব—কলহ বিবাদ চলতেই থাকবে।
بعد فوتب پر ہمایوں می دسداز لا یزال * ہمدراں افغاں یکے از آسماں پیدا شود
এভাবে শাহ হুমায়ুনের রাজত্বকাল পর্যন্ত এ কলহ ও বিভেদ চলতে থাকবে। এমতাবস্থায় আফগানিস্তানের অধিবাসী জনৈক বীরের আবির্ভাব হবে।
حادشہ رد آورد سوے ہمایوں بادشاہ*آنیہ نامش شیرشاہ باشد ہماں پیداشود
উক্ত আফগানী বীর ও শাহ হুমায়ুনের মধ্যে এক সংঘর্ষ বাঁধবে এবং সে আফগান বীরের নাম হবে শেরশাহ।
چوں رود درغغملک ا یراں پیش الا د رسول*تاکہ قدر ومزلش از قدر داں پیداشود=شاہ شاہلی مہر بانیھا کند در حق او* تاو قار عز تش چوں خسرواں پیداشود
উক্ত সংঘর্ষের কারণে শাহ হুমায়ুন ইরানের সৈয়্যদ বংশীয় (রসুলের বংশধর) বাদশাহর নিকট সাহায্যের জন্য যাবেন। তখন ইরানের বাদশাহ হুমায়ুনের প্রতি সদয় হয়ে সামরিক সহযোগীতার হাত বাড়াবেন, যেন হুমায়ুনের ন্যায় এক জন বাদশাহর সম্মান রক্ষা করা হয়।
تازماں آنیہ او لشکر بیارد سوئے ہند *شیر شاہ فانی شوھ وسرش براں پیداشود
হুমায়ুন যখন পুণরায় প্রস্তুত হয়ে যুদ্ধের জন্য ভারতে আগমন করবেন তখন শেরশাহ মৃত্যু বরণ করবেন।
پس ہمایون بادشاہ در ہند قابض می شود *بعدازاں اکبر شاہ کشور ستاں پیداشود
ফলে হুমায়ুন বিনা রক্তপাতেই ভারত দখল করবেন। অতঃপর দিগ্বিজয়ী আকবর বাদশাহ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন।
بعدازاں شاہ جاھاں گیرست گیتی راپثاہ * آنیہ آید در جھاں رز آسما پیداشود
শাহ হুমায়ুনের পর তাঁর পুত্র জাহাঙ্গীর এ রাজ্যের অধিপতি হবেন।
چوں کند عزم سفر آں ہم سوئے دار البقاء * تافی صاحب قراں شاہ جھاں پیداشود
জাহাঙ্গীর যখন ইন্তেকাল করবেন তখন তাঁর পুত্র শাহজাহান বাপের রাজ সিংহাসনে আসীন হবেন।
بشیر از قرن کمتر چہل شاہی کند * تاکہ برش خرد بہ پیش آں زماں پیدا شود
তিনি ত্রিশ বছরের বেশি এবং চল্লিশ বছরের কিছু কম সময় রাজত্ব করবেন। এরপর তার পুত্র (আলমগীর) তাঁরই জীবদ্দশায় রাজ্যভার নিজ হাতে গ্রহণ করবেন।
ایں چنیں در چہل سالی باد شاہی او کند* او فنا گردد ز عالم پر آں پیداشود
বাদশাহ আলমগীর চল্লিশ বছর পর্যন্ত (ভারত বর্ষের) রাজত্ব করার পর মৃত্যুমুখে পতিত হবেন। অতঃপর তাঁর পুত্রগণ রাজ্যের অধিকারী হবেন।
اندریں اثناء قضالز آسماں آید پدید* آنیہ نام او معظم بے گما پیداشود
বাদশাহ আলমগীরের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্রগণের মধ্যে মুয়াজ্জম (বাহাদুর শাহ জাফর) সিংহাসন লাভ করবেন।
فتنھا دو ملک آرد نیز بس گردد خراب * از عجائھا بود آا وناں پیداشود
তখন সারা দেশে খুব বেশি পরিমাণ কলহ বিবাদ সৃষ্টি হবে। এমনকি শুধুমাত্র একটু রুটি পানি (সংক্ষিপ্ত খাবার—দাবার) পাওয়া গেলেই তাকে বড় গণিমত মনে করা হবে।
درفخر خلق آید چوں چنیں گردد خراب *مشتری از آسماں آتش فشاد پیداشود
আল্লাহ্র সৃষ্টি জগত ভয়াবহ দুঃখ—কষ্ট ভোগ করবে এবং খোদার গজবে অগ্নি শিখার ন্যায় আজাব নাজিল হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।
راستی کم تر شود کذب فدغل گردد فزوں * دوست گردد دشمنی اتدر میاں پیدا شود
সততা ও সত্যবাদিতা কমে যাবে। মিথ্যা, ঠকবাজী ও প্রতারণা বেড়ে যাবে, মিত্র শত্রু হবে এবং বন্ধুত্বের অন্তরালে শত্রুতা করবে।
نادری آید زاراں می ستاند ملک ہند* قتلغغدہلی پش بزور تیغ آں پیدا شود
নাদীর শাহ তখন ইরান থেকে এসে ভারত দখল করে নিবেন এবং দিল্লীতে পাইকারী হারে হত্যা কাণ্ড চালাবেন।
بعد ازاں شاہ قوی زورشت احمد بادشاہ* او بملک ہنند آید حکم آں پیداشود
অতঃপর আহমদ শাহ আবদালী নামক জনৈক প্রতাপশালী বাদশহ ভারত অধিকার করবেন।
چوں کند سوئے بقاعزم سفر آں بادشاہ *رخفئہ خاندانش زاں میاں پیداشود
আহমদ শাহ আবদালীর মৃত্যুর পর তার বংশধরদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি হবে।
شاہ بابر بادشاہ رزوے چند روز * درمیاں یک فقیر از سالکاں پیدا شود
বাদশাহ বাবর এর রাজত্বকালে এক জন খোদাভক্ত ফকীর দরবেশের আবির্ভাব হবে।
نام او نانک بود اودر جھاں باوے رجوع *گرم بازار فقیرے بے کراں پیدا شود
সেই ফকিরের নাম হবে “গুরু নানক” এবং পীর—মুরিদীর বাজার অত্যন্ত গরম হয়ে উঠবে।
درمیاں ملک پنجابش شود شہرت تمام* قوم سکھاں نش مرید و پیروان پیداشود
পাঞ্জাব হবে সে দরবেশের খ্যাতির কর্মস্থল এবং শিখ জাতিই হবে সে গুরু নানকের শিষ্য।
قوم سکھاں چیرہ دستی ھا کند مسلمن * تاچہل ایں جور و بدعت اندر آں پیدا شود
শিখ জাতি মুসলমানদের উপর চল্লিশ বছর পর্যন্ত অমানসিক অত্যাচার চালাবে এবং বিদায়াত ছড়াবে।
بعد از اں گرد نصارا ملک ہند و ستاں تمام * تاصدی حکمش میاں پنھوستاں پیداشود
অতঃপর ইংরেজ জাতি সমগ্র ভারতবর্ষ অধিকার করে নিবে এবং এক শত বছর যাবত এ দেশে রাজত্ব করবে।
قاتل یفار خواہد شد شاہ شیر علی * حامی دین محمد پا شباں پیداشود
এ সময়ে কাফির বিধ্বংসী ইসলাম ধর্মের রক্ষক শেরে আলী নামক এক ব্যক্তির আবির্ভার হবে।
درمیاں ایں و آں گردد بے جنگ عظیم * قتل عالم بے شبہ در بنگ شاں پکدا شود
বরাবর দু’দলের মধ্যে ভীষণ আকারের যুদ্ধ হবে এবং বিস্তর লোক জন মারা যাবে। অথবা তখন ইহ জগতে ব্যাপক হারে ওলামায়ে কেরাম শহীদ হবেন।
غلبہ اسلام باشد تا چہل دو ملک ہند* بعد ازاں دجال ہم از اسپھاں پیداشود
ভারতে চল্লিশ বছর পর্যন্ত ইসলামের আধিপত্য থাকার পর ইস্পাহান থেকে কানা দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
از براے دفع آں دبال می گویم شنو* عیس آید مہدی آخ زماں پیدا شود
শোন! সে কানা কাফের দাজ্জালকে কতল করার জন্য হযরত ঈসা আলাইহিস্সালাম আসমান হতে অবতরণ করবেন এবং হযরত ইমাম মাহদীরও (রা.) আবির্ভাব হবে।
এ ভবিষ্যৎবাণী তিনি বলেছিলেন ৫৭০ হিজরী সনে।
(এখান থেকে ভিন্ন পৃষ্ঠায় লিখতে হবে)
একেবারে কিয়ামত নিকটবর্তী সময়কালে যে সব আলামত প্রকাশ পাবে তন্মধ্যে বিশেষ করে হযরত ইমাম মাহ্দী (রা.) আবির্ভাব, যার জীবনধারার সাথে ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমনদের সাথে কঠিন মোকাবেলা ও ইসলামের দুশমনদের মারাত্মক পরাজয়, তারপর কানা দাজ্জাল এর আত্মপ্রকাশ, পরিশেষে হযরত ঈসা আলাইহিস্সালামের আসমান হতে অবতরণ। এ তিনটি বিষয়ে অতীব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এখানে রেখাপাত করা হচ্ছে। যা বিশ্বাস করা প্রত্যেক মুসলমান নর—নারীর ঈমানী দায়িত্ব।
۞ হযরত ইমাম মাহদী (রা.) এর পরিচিতি ঃ۞
হযরত ইমাম মাহদী (রা.) সম্পর্কে রসুলুল্লাহ্ স. ইরশাদ করেন যে, তিনি আমারই বংশধর হবেন এবং ফাতেমার (রা.) সন্তানদের মধ্য হতে জন্ম লাভ করবেন। অন্যত্র হলেন: যাঁর কপাল হবে চওড়া, নাক হবে উঁচু, যিনি আল্লাহ্র জমিনে এসে যে সব অন্যায়, অপরাধ, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতনে ভর্তি হয়ে থাকবে তা তিনি পরিস্কার করে ন্যায়পরায়নতা ও ইনসাফ এবং মানবতা দ্বারা ভরপুর করে দিবেন। হযরত ইমাম মাহদী (র.) এর নাম হবে মুহাম্মাদ বা আহমদ, পিতার নাম আব্দুল্লাহ্, মাতার নাম আমিনা আর মাহদী হবে তাঁর উপাধি। তিনি স্বাভাবিক অন্য সব মানুষের ন্যায় জন্ম গ্রহণ করে এ পৃথিবীকে ধন্য করবেন। জন্মের ৪০ বছরর পর মুসলিম উম্মাহ তাঁকে মুসলমানদের আমীর (দল নেতা) বা প্রতিনিধি হিসেবে গ্রহণ করে নিবে এবং উম্মাতে মুসলিমাহ তাঁর হাতে বাইয়্যাত (শপথ) গ্রহণ করে সারা পৃথিবীতে যে কুফুরী মতবাদের বিস্তৃত জালে জুলুম—অত্যাচারের যাতা কলে নিস্পেষিত জাতির কল্যাণ ও মঙ্গলে সারা বিশ্বে বিশাল আকারের জিহাদ শুরু করে দিবেন, যে জিহাদের শেষ (ইতি) হবে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার উপর (যা প্রতিহত করার ২য় কোন শক্তি এ পৃথিবীতে থাকবে না)
হযরত ইমাম মাহদী (র.) এর আবির্ভাবের অন্যতম একটি আলামত (নিদর্শন) এটাও একটি যে, ঐ বছর এক ভয়ানক ভূমিকম্প হবে, লোকেরা এক কঠিন আওয়াজ শুনতে পাবে, হঠাৎ করে আকাশে তারকারাজি উদয় হয়ে পুরা আসমান আলোকিত হয়ে যাবে। ঐ বছর রমজান মাসে চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ হবে। শাওয়াল মাসে মারাত্মক আকারে হৈ—চৈ শুরু হবে, জিলকদ মাসে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ইসলামী দেশ গুলোর মধ্যে মারাত্মক মতানৈক্য সৃষ্টি হবে এবং জিলহজ্জ মাসে হজ্জের মৌসুমে হাজীদের সাথে অমানবিক আচরণ ও লুটতারাজ শুরু হবে, মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ঝগড়া—ফাসাদ ও লড়াই শুরু হবে এবং ১০ জিলহজ্জ মক্কায় ও মিনাতে শয়তানকে পাথর মারার বড় স্থানে খুনাখুনি হবে। ঐ বছরই মুহাররম মাসের ১০ তারিখ ইমাম মাহদী (র.) এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ শুরু হবে।
অন্য বর্ণনায় এ রকম আছে রসুলুল্লাহ্ স. বলেন যে, রমজান মাসে যদি চিৎকার শোনা যায় তবে শাওয়াল মাসে গণ্ডগোল দেখা দিবে, সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ্ স. ঐ চিৎকার কী রকম হবে? তদুত্তরে রসুলুল্লাহ্ স. বললেন যে, রমজান মাসের ১৫ তারিখে শুক্র বারের রাতে এমন এক ভয়ানক ভূমিকম্প সৃষ্টি হবে যে, ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগ্রত করে ফেলবে, দাঁড়ানো ব্যক্তিকে বসিয়ে ফেলবে, সতী রমনীগণ ঐ শুক্র বারে রাতের অন্ধকারে নিজ নিবাস হতে বের হয়ে পরবেন। ঐ বছর অনেক বেশি ভূমিকম্প হতে থাকবে। তোমরা যখন শুক্র বার ফজরের নামাজ পড়ে নিবে তখন প্রত্যেকে নিজ নিজ ঘরে ঢুকে পড় ও ঘরের দরজা—জানালা বন্ধ করে নিও। অত:পর যখন সে চিৎকার অনুভব করবে তখন আল্লাহ্র সামনে সিজদায় পড়ে গিয়ে ******** পড়তে থেকো। ******** পড়তে থেকো। এ আমলটুকু যারা করবে তারা ঐ সময়ের বিপদ হতে নাজাত পাবে। আর যারা এ আমল করবে না তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।
হযরত ইমাম মাহদী (র.) চল্লিশ বছর বয়সী এক জন অত্যন্ত নেককার যুবক হবেন, যিনি কখনও নেতৃত্ব পছন্দ করবেন না আর প্রশাসন থেকে দূরে থাকবেন। আর যারা বাস্তবিক নেককার তারা কখনও মানসিকভাবে নেতাগিরির খাহেশ (বাসনা) অন্তরে রাখবেন না। হয়ত কখনও চাপের মুখে কোন পদে সমাসীন হতে বাধ্য হন, তা অন্তর্যামী আল্লাহ্ তায়ালাই ভাল জানেন। তবে ইমাম মাহদী (র.) এ ধরনের খাহেশ হতে অনেক দূরে থাকবেন; কিন্তু আল্লাহ্ তায়ালা এক রাতেই তাঁর এ মানসিকতার পরিবর্তন এনে দিবেন যে, তিনি তো মস্ত বড় এক কাজের জন্যই সৃষ্টি এবং উম্মাত তাঁরই অপেক্ষায় অপেক্ষমান, আল্লাহ্র পক্ষ হতে তাঁর অন্তরে উদয় হয়ে উঠবে যে, উম্মাতের বাইয়্যাৎ গ্রহণ করার জন্য। ঐ সময় হযরত ইমাম মাহদী (র.) তাঁর খেলাফতের সময়কালে পবিত্র জিহাদে অবিরাম আত্মনিয়োগ করবেন। এর মধ্যে তাঁর সন্ধি করা বা একটু বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ হবে না।
হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রা.) এর এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন: যখন সকল পথ চলা বন্ধ হয়ে যাবে ফেৎনা চতুর্দিক হতে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে বাড়তে থাকবে তখন বিভিন্ন দেশ হতে সাত জন আলেম বের হয়ে আসবেন, (হযরত উলামায়ে কেরাম বলেন: সে দেশ গুলো হবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্ক, সিরিয়া, মারাকিশ, জাঝায়ের, উজবেকিস্তান এবং সুদান) তাঁরা সকলেই অনির্দিষ্টভাবে পরস্পরে সাক্ষাতে ধন্য হবেন। তন্মধ্যে প্রত্যেকের সাথে ৩১০ জন বা সামান্য বেশি সংখ্যক লোক বাইয়্যাৎ গ্রহণ করবেন। এর মধ্যে তাঁরা সকলে মক্কায় সমবেত হবেন। একে অপরকে জিজ্ঞাসা করবেন যে, আপনারা কিভাবে আসলেন? কেন আসলেন! উত্তরে তাঁরা সকলেই বলবেন যে, আমরা তো ঐ মহান ব্যক্তির অনুসন্ধানে এসেছি যাঁর হাতে সমস্ত ফেৎনার দ্বার বন্ধ হবে। যাঁরই হাতে কুস্তুন্তিনিয়া (ইস্তাম্বুল) বিজয় হবে। তার পিতা—মাতার নাম, শারীরিক গঠন ইত্যাদি সবই আমাদের জানা আছে আর এ কথার উপর তাঁরা ৭ জন সকলেই একাত্মতা প্রকাশ করবেন। তখন মক্কা শরীফে তাঁরা ইমাম মাহদী (র.) কে তালাশ করতে থাকবেন। এক পর্যায়ে তাঁরা তাঁকে পেয়ে যাবেন। তখন তাঁরা তাঁকে (মাহদীকে) জিজ্ঞাসা করবেন যে, আপনি কি অমুকের ছেলে অমুক? তখন তিনি নিজেকে গোপন করার উদ্দেশ্যে কথা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন আর বলবেন যে, আপনি কি অমুক আনসারী ?(আল্লাহ্র দ্বীনের সাহায্যকারী) এ আলোচনা চলতে থাকবে। তিনি ওখান থেকে সরে গিয়ে মদীনা তৈয়্যেবাহ গিয়ে স্থান নিবেন; কিন্তু সেখানে গিয়ে ঐ সব লোকেরা তাঁর সন্ধানে ঘুরতে থাকবেন। তখন তিনি পুণরায় মক্কা শরীফে ফিরে এসে স্থান নিবেন; কিন্তু তাঁরা সেখানেও পুণরায় তাঁর সন্ধানে পেরেশান হয়ে ঘুরতে থাকবেন। তখন আবার তাঁকে পেয়ে বসবেন এবং তাঁরা সকলেই প্রস্তাব করবেন যে, আপনি অমুকের ছেলে অমুক! হাত দেন আমরা আপনার হাতে বাইয়াত হই। তখন তিনি (মাহদী র.) বলবেন (এড়িয়ে চলার জন্য) যে, দেখ আমি তোমাদের সেই ব্যক্তি নই; বরং আমি নিছক এক জন আনসারী (দ্বীনের সাহায্যকারী)। এবারও তিনি মদীনা তাইয়্যেবাহ্ চলে যাবেন। তাঁরা পুণরায় মদীনা তাইয়্যেবায় সন্ধানে বের হবেন তখন তিনি পুণরায় মক্কা শরীফে ফিরে চলে আসবেন তখন তাঁরা মক্কা শরীফে হজ্বরে আসওয়াদের নিকটবর্তী স্থানে তাঁকে পেয়ে বসবেন এবং তাঁরা বলবেন যে, আমাদেরকে বাইয়াত করে নিন। অন্যথায় আমাদের পাপের বোঝা আপনার বহন করতে হবে। আমাদের রক্তের দায় ভার আপনার উপর বর্তাবে। যদি আপনি আমাদেরকে বাইয়াত না করেন তাহলে ***** আমাদের ধ্বংস করে ফেলবে। সুফয়ানী লস্কর যারা অত্যন্ত ফেৎনাবাজ ও দুষ্ট প্রকৃতির লোক হবে।
তখন তিনি হজ্বরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে বসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে সকলকে বাইয়াত করে নিবেন। আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর মুহাব্বত লোকদের অন্তরে সৃষ্টি করে দিবেন তখন তিনি এ রকম এক বাহিনী নিয়ে রওয়ানা হবেন এবং সম্মুখপানে অগ্রসর হবেন যারা দিনের বেলা ব্যাঘ্রের ন্যায় জিহাদী হবেন আর রাত্রি বেলা নির্জন স্থানে সাধু—দরবেশ হয়ে আল্লাহ্র ধ্যানে নিমগ্ন হবেন।
(********)
۞আল্লাহর নবীর নির্দেশ যে, তোমরা কালো পতাকা বাহীদের সহিত মিলে যাও۞
হযরত সওবান (রা.) বলেন যে, রসুল করীম স. বলেন, যখন তোমরা খোরাসানের দিক থেকে কাল পতাকাবাহী মুজাহিদ বাহিনী অগ্রসর হতে দেখবে তখন তোমরা ঐ বাহিনীর সাথে সামিল হয়ে যাও! কেননা ঐ মুজাহিদ বাহিনীর সাথে হযরত ইমাম মাহদী (র.) ও থাকবেন। (****)
۞বরফে ঘিরা পথ অতিক্রম করে যারা অগ্রসার,তাদের মহিত মিলিত হবার নির্দেশ۞
অন্যত্র বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ্র নবী স. বলেন: তোমরা ঐ জামাতের সাথে অবশ্যই শামিল হয়ে যাও! যদিও বরফের উপর ঘষে ঘষে হলেও (অর্থাৎ বন—জঙ্গল, পাহাড়—পর্বত, বরফ, মরু ইত্যাদি সব এলাকা অতিক্রম করে অক্লান্ত কষ্ট সহ্য করে) তোমরা ঐ মুজাহিদ বাহিনীর সাথে শামিল হয়ে যাও! হযরত ইমাম মাহদী (র.) এর আত্মপ্রকাশ তখনই হবে, যখন আল্লাহ্র এ জমিন পাপে পাপে একাকার হয়ে যাবে ইসলামী জগত গুলো কুফরী মতবাদে অন্যায় অবিচার, নির্যাতন, নিপীড়নে ধ্বংস লিলায় পরিণত হবে। ও দিকে মুসলমানগণ তাঁদের এ রকম যোগ্য নেতার অভাবে অস্থির হয়ে পড়বে। এ নির্যাতন ও নিপীড়নের মধ্য দিয়েও জিহাদী মিশন অগ্রগতির সাথে জারি থাকবে। এমন কি পুরা দুনিয়াতে অতি সামান্য টুকু জায়গা তাঁদের আশ্রয়স্থল অবশিষ্ট থাকবে।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আপনি এখন বর্তমান পৃথিবীর ভৌগোলিক অবস্থান আর সে কাল পতাকাবাহী মুজাহিদ বাহিনী পূর্ব দিক হতে উদীয়মান কারা তাঁদের খঁুজে বের করে সে দলের সাথে দলভূক্ত হবার চেষ্টা করুন যারা হবেন হযরত ইমাম মাহদী (র.) এর মুজাহিদ বাহিনীর ভূমিকা। ……. .. ……….. ………….. ………… ………. ……….. …………. …….. …………..
অন্যত্র বর্ণিত আছে যে, ইমাম মাহদী (র.) এর আত্মপ্রকাশ ঈশার নামাজের পর মক্কা শরীফে উঁচু আওয়াজে তিনি ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ্র হামদ সানা পড়ে বলবেন হে লোকেরা! তোমাদেরকে আমি আল্লাহ্র কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, মনে রেখ! তোমরা আল্লাহ্র সামনে উপস্থিত হওয়া লাগবে। তিনি নবীগণ পাঠিয়ে তোমাদের উপর দলিল কায়েম করে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরীক করো না। আল্লাহ্ ও তাঁর রসুলের অনুগত হও! ……………….. ………….. …………….. ……………
হযরত ইমাম মাহদী (র.) এর মস্ত বড় লড়াই অর্থাৎ তাঁর সময়কার যুদ্ধই হবে সর্ব শেষ বড় যুদ্ধ। হক আর বাতিলের লড়াই। সে মোকাবেলাতে কেউ কারোর থেকে পিছু হঠার চেষ্টা করবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের সর্ব শক্তি ও সামর্থ শেষ না হবে। আর এ লড়াই শুধুমাত্র ইমাম মাহদী (র.) এর নিজস্ব এলাকা সিরিয়া “আলত্বাহ” এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং এ লড়াই কয়েক স্থানে একই সাথে চলতে থাকবে। তন্মধ্যে এক স্থানে তিনি স্বয়ং সেনাপতিত্ব গ্রহণ করবেন আর যুদ্ধের অপরাপর স্থান হবে ফিলিস্তিন, ইরাক এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল। এ ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য স্থানেও এরূপ হক বাতিলের লড়াই চলতে থাকবে।
হযরত আবুদ্ দারদা (রা.) রসুলে কারীম স. এর ইরশাদ বর্ণনা করেন যে, ঐ মহা যুুদ্ধের সময় মুসলমানদের হেড কোয়ার্টার হবে শাম—সিরিয়ার রাজধানী, দামেস্কের নিকটবর্তী জায়গা “আল ওত্বাহ”। আবু দাউদ শরীফের এক হাদীসে আছে হযরত আলী (রা.) বলেন: আমি আল্লাহ্র নবী স. বলতে শুনেছি যে, এক ব্যক্তি “মাওরাউন্নাহার” হতে এক বাহিনী নিয়ে চলতে থাকবেন যাকে ******** (কৃষিবীজ) বলা হবে। তাঁর বাহিনীর প্রথম যার নেতৃত্ব চলবে ঐ ব্যক্তি হবেন মানসুর যিনি খেলাফতের কাজের জন্য মুহাম্মাদ স. এর বংশধারার রাস্তা সমান করবেন অথবা সে পথ দৃঢ় ও শক্ত করবেন। যেমনভাবে আল্লাহ্র রসুলের আশ্রয় কুরাইশদের লোকেরা দিয়েছিল। সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব তাঁরা যেন সকলে ঐ হারিস (কৃষিজীবি) ও মানসুর (সাহায্য প্রাপ্ত) এর বাহিনীকে যথাসাধ্য সাহায্য করে বা তাদের আনুগত্যতা মেনে নেয়।
“মাওরাউন্নাহার” বলা হয় আফগানে “আমু” নদীর অপর (পাড়) এলাকা যা মধ্য এশিয়ার অন্তরবতীর্ দেশ গুলোকে। ঐ দেশ গুলোর মধ্যে উজবেকিস্তান, কাজিকিস্তান এবং চেচনিয়া সহ অন্যান্য দেশ সমূহ। খোরাসান বলা হয় আফগানিস্তান ও তার আশপাশ এলাকা গুলোকে। সেখানকার মুসলিম মুজাহিদ বাহিনীর বিরাট এক অংশ সে উজবেকিস্তান হতে আগত আফগানের মধ্যে খৃষ্টবাদীদের বিরুদ্ধে এখনও অত্যন্ত বীরত্বের সাথে লড়ে যাচ্ছেন। তাঁদের সাহস ও বীরত্বের সামনে সমস্ত প্রযুক্তি, বিচক্ষণতা ও বুদ্ধি—সুদ্ধি হার মেনে যাচ্ছে। আফগান হতে সাময়িক মুজাহিদীনদের পিছু হটার সময় আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মাদ ওমর ****** সকল মুজাহিদ মেহমানদের দায়িত্ব কৌশল ইত্যাদি ঐ সব উজবেকিস্তানের মুজাহিদীনদের উপর ন্যাস্ত করে ছিলেন। তাই সচেতন ও বিজ্ঞ আল্লাহ্ ওয়ালা হযরাতে উলামায়ে কিরাম বলেন: অনেক সম্ভাবনা যে, হযরত ইমাম মাহদী (রা.) এর মুজাহিদ বাহিনীর সাথে এসব আফগান মুজাহিদীন গিয়ে মিলিত হবেন।
অতঃপর যখন হযরত ইমাম মাহদী (রা.) এর সাথে ঐ সাত জন উলামায়ে কিরাম সাক্ষাত করে জোর করে বাইয়াত করার পর তিনি প্রথমে মুসলমানদের আপোসের আত্মশুদ্ধি আর জিহাদের উপর বাইয়াত করবেন। তখন প্রাথমিক অবস্থায় সারা দুনিয়ার ঐ সকল দুনিয়া পুজারী এবং দ্বীন থেকে উদাসীন, জাগতিক ভোগ—বিলাসিতায় মগ্ন তাদের প্রতি ভয় বেশি হবে। অথবা ঐ সব সাদাসিধে মুসলমান যারা কুরআন—হাদীসের আসল তথা মূল ভাবার্থ বুঝতে সক্ষম না হওয়ায় ঐ সকল মুজাহিদীনদের বিরোধিতায় লেগে থাকবে। তাদেরই প্রথমে ইসলাহ করার চেষ্টা করবেন। যারা তাঁর কিয়াদত (নেতৃত্ব) মেনে নিতে প্রথমে অস্বীকার করবে, ঐ সময় প্রথমে ইমাম মাহদী (র.) এর কোন জামাত থাকবে না। কোন আন্দোলন বা সংগঠন থাকবে না; বরং সম্পূর্ণ তিনি একা নির্জন ও অপরিচিত পথিকের ন্যায় হয়ে থাকবেন। শুধুমাত্র কিছু আহলে হক উলামায়ে কেরাম আর তাঁদের কতিপয় অনুসারী বীর মুজাহিদীন সাথে থাকবেন। ঐ সময় অন্যদের অপেক্ষা নিজেদের ব্যাপারে চিন্তা ও শঙ্কা বেশি হবে।
তখন হযরত ইমাম মাহদী (র.) এর সাহায্য ও সহযোগীতার যথেষ্ট প্রয়োজন হবে তার জন্য আল্লাহ্ পাক দু’ব্যক্তির দু’বাহিনীর ব্যবস্থা করে দিবেন। প্রথম জন হবেন যিনি তার আর্থিক সহায়তা প্রদানে আত্ম নিয়োগ করবেন। অপর জন রণকৌশলী, তার ক্ষেত্র ও তার যাবতীয় রসদপত্র আঞ্জাম দেয়ার কাজে মগ্ন হবেন।
হযরত ইমাম মাহদী (র.) মেহনত ও প্রচেষ্টায় জিহাদের বাইয়াত নেয়ার পর তাঁর খেলাফত কায়েম হওয়া পর্যন্ত পৃথিবীর প্রচলিত প্রযুক্তির মোকাবেলায় তিনি কিভাবে অগ্রসর হবেন যখন কি—না বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পৃথিবীর অস্ত্রেসস্ত্রে, রসদপত্রে, রাজনৈতিক চালে, নব্য চিন্তাধারায় আর ধেঁাকাবাজ ও মিথ্যাচারে উন্নত বলে মনে হতে থাকবে। হযরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন রসুলে কারীম স. বলেন: হযরত মাহদী (র.) এর মধ্যে আল্লাহ্ পাক তখন রাতারাতি নেতৃত্ব দেয়ার সে যোগ্যতা অলৌকিকভাবে সৃষ্টি করে দিবেন। অসংখ্য কারামাত তাঁকে আল্লাহ্ পাক দান করবেন। সবচেয়ে বড় কারামাত এটাই হবে যে, তিনি তাঁর সকল সাথীদেরকে খাঁটি তওবা করিয়ে আল্লাহ্র নবীর মিটে যাওয়া সুন্নাতকে জিন্দা করবেন, যার দ্বারা তাদের মধ্যে একাগ্রতা ও একতার অদ্ভূত পরিবেশ সৃষ্টি হবে। তারা সকলে জীবন—মরণে ইমাম মাহদী (র.) এর অনুগত হয়ে চলবেন এবং মৃত্যু সামনে দেখেও মুখ ফিরাবেন না; বরং মৃত্যুর আলিঙ্গনকে তাঁরা খুশি খুশি গনিমত মনে করবেন। ঐ সময় ৩১০ জন বা ১২০০০ বা ১৫০০০ লোক তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবেন। তখন তাঁরা একত্রিত হয়ে দুশমনের মুকাবেলায় ঝাঁপিয়ে পড়বেন। এতে তাঁরা বিজয় লাভে ধন্য হবেন।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত রসুলে কারীম স. বলেন: তোমাদের মধ্যে এক জামাত এমন হবে যাঁরা হিন্দুস্তানে যু্দ্ধ করবে। আর সে যুদ্ধে তাদের বিজয় হবে। এমনকি সে জিহাদে হিন্দবাসীর পরাজয় বরণকারী নেতৃত্বদানকারীদেরকে শিকলে বেঁধে ফেলবে। এ হিন্দী জিহাদ থেকে মুসলিম মুজাহিদ বাহিনী কায়েম হয়ে সিরিয়াতে হযরত ঈসা আ. এর সাথে সাক্ষাত করবেন ও মিলিত হবেন।
হযরত আবু উমামাহ্ বাহেলী (রা.) বর্ণনা করেন যে, নবী করীম স. বলেন: ইসলামের কড়া সমূহ একে একে সবই খুলে যাবে, ভেঙ্গে যাবে। সুতরাং যখন একটা কড়া ভেঙ্গে যাবে তখন মানুষ দ্বিতীয়টা ধরবে। এভাবে ভাঙ্গতে থাকবে আর পরেরটা লোকেরা ধরতে থাকবে। তবে তার মধ্যে সর্ব প্রথম যে কড়াটা ভাঙ্গবে সেটা হবে ইনসাফ, ন্যায়পরায়ণতা, ইসলামী নেজাম দুনিয়াতে বাকি থাকবে না আর সব শেষ কড়া যা ভাঙ্গবে সেটা হল নামায
(******** ****** )
۞ ফেৎনার ঢল ঃ۞
রসুলুল্লাহ্ স. বলেন: যতক্ষণ পর্যন্ত এ রকম সময় নিকটবর্তী না হবে ততদিন কিয়ামত কায়েম হবে না। সুতরাং তখন বছর মাসের মত অতিবাহিত হবে, মাস সপ্তাহের মত, সপ্তাহ দিনের সমান, দিন ঘণ্টার সমান আর ঘণ্টা হবে শুকনা খেজুর পাতা জ্বলে পুড়ে ছাই হবার মত সময়।
(****************)
হযরত কা’ব (রা.) রেওয়ায়াত করেন: অতি নিকটেই পূরবী সমুদ্র শুকিয়ে যাবে, তার মাঝে নৌযান চলতে পারবে না এবং এক এলাকা হতে অন্য এলাকায় নৌযান চলাচল বাঁধাগ্রস্ত হবে। আর এটা হবে সে ঐতিহাসিক যুদ্ধের সময় যা সংগঠিত হবে হযরত ইমাম মাহদী (র.) এর সময়।
হযরত জাবের (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ্ স. ইরশাদ করেন: অতি নিকটেই এমন হবে যে, ইরাক ওয়ালাদের কাছে টাকাকড়ি, রসদপত্র পেঁৗছানোর উপর পাবন্দী লাগান হবে। জিজ্ঞাসা করা হল, এ পাবন্দী কারা সৃষ্টি করবে? বললেন: অনারবদের পক্ষ হতে এ বাঁধা সৃষ্টি করা হবে। কিছুক্ষণ দেরী করে আবার বললেন: শাম (সিরিয়ার) উপর নিষেধাজ্ঞা সৃষ্টি করা হবে। জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ স. এ বাঁধা বা নিষেধাজ্ঞা কাদের পক্ষ হতে সৃষ্টি করা হবে? বললেন: রোম অর্থাৎ পশ্চিমাঞ্চল হতে এ বাঁধা সৃষ্টি করা হবে। (********)
ইমাম মুজাহিদ (র.) বলেন: আমাকে এক সাহাবী বলেছেন: ইমাম মাহদী (র.) অতক্ষণ আসবেন না যে যাবত এ পৃথিবীতে পাক—পবিত্র আল্লাহ্ ওয়ালাদেরকে শহীদ করে দেয়া না হবে। ……… ……… অতঃপর ইমাম মাহদী (র.) এর আবির্ভাব হবে। (********)
۞নবী হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের আসমান হতে অবতরণ ঃ۞
হযরত ঈসা আ. আসমান হতে পুণরায় জমিনে অবতরণ করা (আল্লাহ্ তায়ালার হুকুমে) এটা সমস্ত মুসলমানদের ঈমান আকীদা ও বিশ্বাস যা অস্বীকার করা কুফুরির অন্তর্ভূক্ত। কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে নবী হযরত ঈসা আ. আসমান হতে অবতরণ করবেন, দেশ পরিচালনা করবেন। মুসলমানরা তাঁরই নেতৃত্বে দুনিয়ার কাফেরদের সাথে জিহাদ করবেন। তাঁর শাসনামলে ন্যায়পরায়নতার জোয়ার বইবে, প্রাচুর্যের বিশাল ছড়াছড়ি হবে, মানুষের পরস্পরের মাঝে অস্বাভাবিক ভালবাসা সৃষ্টি হবে। মানবাত্মার মাঝে হিংসা, দুশমনি বা কারো ক্ষতি করার মানসিকতা থাকবে না।
তিনি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের জামে মসজিদের পূর্বাংশের সাদা মিনারায় আসমান হতে দু’ফেরেস্তার কাঁধে ভর করে অবতরণ করবেন। তখন তাঁর মাথা হতে মনে হবে যেন পানি ঝড়ছে। তিনি এসে কুরআনী অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। সমগ্র পৃথিবীতে ইসলাম ব্যতিত সব ধর্ম শেষ হয়ে যাবে। একমাত্র ইসলামই এ দিগন্তে অবশিষ্ট থাকবে।তিনি যখন আসমান থেকে নেমে আসবেন তখন মুসলমানদের আমীর হযরত ইমাম মাহদী (র.) বলবেন যে, আপনি নামাযের ইমামতি করেন। তখন নবী ঈসা আলাইহিস্ সালাম বলবেন: না, তোমরাই একে অপরের ইমামতি কর।
(*******)
۞নবী হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামের পরিচয় ঃ۞
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) রেওয়ায়েত করেন, নবীয়ে কারীম স. বলেন: আমার পর হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম পর্যন্ত অন্য কোন নবী আসবেন না। তিনি আসমান হতে অবতরণ করবেন। তোমরা তাঁকে দেখে চিনতে পারবে। তাঁর শারীরিক গঠন হবে মধ্যম ধরণের, গায়ের রং লাল—সাদা বর্ণের হবে, হালকা ক্রীম রংয়ের দু’টি কাপড় পরিহিত থাকবেন। মাথা ভিজা হবে না; তথাপিও দেখলে ভিজা মনে হবে। ইসলামের জন্য ইসলাম বিরোধী কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করবেন। পৃথিবী হতে ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর মেরে ফেলবেন এবং ট্যাক্স গ্রহণ প্রথা বন্ধ করে দিবেন। ইসলাম ব্যতিত অন্য সব ধর্ম নিঃশেষ করে ফেলবেন। অতঃপর তিনি ৪০ বছর যাবৎ এ জমিনে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করে অবশেষে ইন্তেকাল করবেন। আর মুসলমানেরা তাঁর জানাযার নামায পড়বেন।
(********* ********* **********)
হযরত ইমাম মাহদী (র.) এর ইন্তেকালের পর মুজাহিদীনদের নেতৃত্ব দিবেন হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম। তিনি কানা কাফের দাজ্জাল ও তার দলবলের উপর হামলা করবেন এবং তিনি নিজেই ফিলিস্তিনের লুদ শহরের বাবুল লুদ নামক স্থানে তাকে কতল করবেন। অতঃপর দাজ্জালের কতলের পর খৃস্টবাদী ও ইয়াহুদীবাদীরা সব ধ্বংস হয়ে যাবে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) রেওয়ায়েত করেন: নবীয়ে কারীম স. বলেন: হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম (আসমান থেকে অবতরণ করার ২১ বছর পর) দুনিয়ায় এসে বিয়ে করবেন এবং (বিয়ের পর) ১৯ বছর দুনিয়াতে অবস্থান করবেন। (**********)
দাজ্জালকে কতল করার পর ৪০ বছর যাবত মানুষের জীবন অত্যন্ত সুখময় ও আনন্দের হবে। এর মাঝে কেউ মারাও যাবে না বা কেউ অসুস্থও হবে না। কেউ কারো জানমালের ন্যূনতম ক্ষতি সাধনও করবে না। মানুষ তার গবাদি পশু ছেড়ে দিয়ে বলবে, যাও ঘাস খেয়ে আস। অতঃপর সে গরু বা ছাগল ইত্যাদি দুই জমিনের মাঝে বিচরণ করবে; কিন্তু ডান—বামের ফসলের একটি ছড়ায়ও মুখ দিবে না; বরং শুধুমাত্র তার উপযোগী ঘাস পাতা খেয়ে বিচরণ করবে। সাপ, বিচ্ছু বা কোন বিষাক্ত প্রাণী কাউকে দংশন করবে না এবং হিং¯্র জীব—জন্তুও কারো দরজায় গিয়ে কাউকে কষ্ট দিবে না। আর এ সবই হবে যখন দেশের মধ্যে প্রতিনিধি ন্যায় পরায়ণ হবেন।
কিন্তু বর্তমান দুনিয়ার প্রতিনিধিগণ নিজেরাই হিং¯্র, জালেম, রক্ত পিপাসু, রক্ষকই ভক্ষক, বিধায় দেশের মধ্যে যত সব অরাজকতা, অন্যায়, অপরাধের জাল বিস্তৃত হয়ে আছে।
۞ন্যায় পরায়নতার বরকত:۞
নবী ঈসা আ. এর আগমনে ও ন্যায়পরায়ণতায় পৃথিবীতে এমন বরকত দেখা দিবে যে, মানুষ ১ সের গম লাগাবে তো তাতে সাত শত সের ফসল ফলন হবে আল্লাহ্র রহমতে। তখন ন্যায়ের অনুশাসনে এমন বরকত দেখা দিবে যে, যদি কেউ শক্ত পাথর শিলার উপর বীজ ফেলে রাখে তাতেও গাছ জন্মাবে ও ফলন হবে এবং নিরাপত্তার অবস্থা এমন হবে যে, মানুষ বাঘের কাছ দিয়ে অতিবাহিত হবে কিন্তু বাঘ তার কোন ক্ষতি করবে না। কেউ সাপের গায়ে পা রাখবে তো সাপ তাকে দংশন করবে না। মানুষের মধ্যে মানবতার পরিপন্থী কোন ধরনের অসৎ চরিত্র থাকবে না।
তিনি ৪০ বছর যাবত ইসলামী শাসন করার পর বিয়ে—শাদী করবেন এবং সন্তানাদি হবে। অতঃপর তিনি ইন্তেকাল করবেন এবং রসুল করীম স. এর রওজা শরীফের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে।
(*****)
তাঁর ইন্তেকালের পর অপর এক জন খলিফা নিযুক্ত হবেন যার নাম হবে মাকয়াদ। সে খলিফা “মাকয়াদ” ৩০ বছর যাবত খেলাফতের কাজ আঞ্জাম দিবেন। তারপর কুরআন শরীফ মানুষের সিনা হতে উঠায়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তার কিছু কাল পর কিয়ামত কায়েম হয়ে যাবে।
۞দাজ্জালের পরিচয়:۞
হযরত ফাতেমা বিনতে কায়ছ (রা.) রেওয়ায়েত করেন একদা নবীয়ে করীম স. এর ঘোষণাকারী ঘোষণা করলেন যে, নামাযের প্রস্তুতি গ্রহণ কর। সুতরাং নামায শুরু হল। নামায শেষে হুজুর স. বললেন যে, তোমরা আমার কাছাকাছি একত্রিত হও! অতঃপর বললেন: তোমরা কি জান যে, কেন আমি তোমাদেরকে একত্রিত হতে বলেছি! ছাহাবায়ে কেরাম বললেন: আল্লাহ্ ও তাঁর রসুল স. ভাল জানেন। অত:পর হুজুর বললেন: তোমাদেরকে কোন তারগীব দেয়ার জন্য বা ভীতি প্রদর্শনের জন্য একত্রিত করি নাই; বরং শুধুমাত্র একটি ঘটনা শুনানোর জন্য তোমাদেরকে একত্রিত করেছি। তাহল ঃ তামীমে দারী এক জন নাছারা (খৃস্টবাদী) ছিলেন। সে আমার কাছে আসছে এবং ইসলাম গ্রহণ করে বাইয়াত হয়েছে। সে দাজ্জালের ধেঁাকা সম্পর্কে একটা ঘটনা শুনাল। বলে যে, আমিও বনু লাযম আর জুযাম এর ৩০ জন মানুষ সহ এক সামুদ্রিক সফরে যাচ্ছিলাম। তখন দীর্ঘ এক মাস পর্যন্ত সামুদ্রিক তরঙ্গ ও ঢেউয়ে (তুফানে) এক অচেনা দ্বীপে গিয়ে পতিত হই। তখন আমার সফর সঙ্গীগণ ছোট কোন নৌযানে করে দ্বীপের মধ্যে গিয়ে পেঁৗছল। সেখানে তাদের নিকট এক অদ্ভূত মাখলুকের সাক্ষাত মিলল। যে শারীরিক গঠনে বেশ মোটাসোটা, খুব ঘন চুল ও লোমযুক্ত। চুল ও লোমের ঘনত্বের কারণে তার অগ্র পশ্চাতের শরীরের গঠন চেনা সম্ভব হচ্ছিল না। তখন আমার সাথীরা বলে উঠল তোর ধ্বংস হোক! তুই কে রে! সে বলে উঠল যে, আমি জাছ্ছাছা। আমরা তখন বললাম যে, জাছ্ছাছা আবার কে? সে বলল যে, তোমরা গির্জার মধ্যে যাও সেখানে জনৈক ব্যক্তি তোমাদের অপেক্ষায় দীর্ঘকাল হতে অস্থির হয়ে প্রতীক্ষারত আছে। তার এ সংবাদে আমরা আরো একটু বিচলিত হয়ে পড়লাম। না জানি কিনা শয়তান হবে না তো! আমরা তাড়াহুড়া করে গির্জার মধ্যে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম এক ভয়ানক চেহারার মানুষ যা ইতোপূর্বে কখনো আমরা দেখিনি। তার হাত গুলো কাধের উপর আর পা গুলো হাঁটুর সাথে লোহার মজবুত শিকল দিয়ে বাঁধা। এ দৃশ্য দেখে আমরা বলে উঠলাম: তোমার সর্বনাশ হোক! তুমি কে? সে বলে উঠল যে, তোমরা যখন আমাকে পেয়ে বসেছো আর আমার সম্মন্ধে অবগত হয়েছ তাহলে তোমরা তোমাদের পরিচয় আমাকে দাও!
তদুত্তরে আমরা বললাম যে, আমরা আরবের বাসিন্দা। সে জিজ্ঞাসা করল যে, বিছানের খেজুর বাগানে ফল হয় কি—না? আমরা বললাম হঁ্যা ফল হয়। সে বলল: অচীরেই ঐ সময় আসছে যখন ঐ বাগানের গাছে খেজুর (ফল) হবে না। সে আবার বলল: ত্বাবরিয়্যাহ্র সমুদ্রে পানি আছে কি—না? আমরা বললাম যে, হঁ্যা ঐ সমুদ্রে পানি আছে। সে বলল: অচীরেই এমন এক জামানা আসছে যখন সে সমুদ্রে পানি থাকবে না, শুকিয়ে যাবে। সে আবার জিজ্ঞাসা করল:” ঝগরের “ঝর্ণার পানির কি অবস্থা? সে ঝর্ণার পানি দিয়ে কি লোকেরা চাষাবাদ করে? আমরা বললাম হঁ্যা চাষাবাদ করে। পূণরায় সে জিজ্ঞাসা করল: উম্মীদের নবীর (আখেরী নবীর) কি খবর? আমরা জবাব দিলাম যে, তিনি মক্কা হতে হিজরত করে মদীনা মুনাওওয়ারায় চলে গেছেন। সে পূণ: জিজ্ঞাসা করল আরবরা কি তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছে? আমরা উত্তর করলাম: হঁ্যা করেছে। সে আবার জিজ্ঞাসা করল: তিনি আরবদের সাথে কি আচরণ করেছেন? আমরা তখন তাকে সমস্ত ঘটনাবলী শুনালাম। বললাম যে, তিনি সকলের প্রিয়পাত্র হয়েছেন। সকলে তাঁর আনুগত্যতা স্বীকার করে নিয়েছে। তখন সে বলল যে, হঁ্যা উনার আনুগত্যতা স্বীকার করে নেয়াটাই শ্রেয়।
সে বলল যে, এখন আমি তোমাদেরকে আমার অবস্থা ও পরিচয়ের ব্যাপারে অবগত করছি। আমি হলাম দাজ্জাল। আমাকে অচিরেই বের হবার আদেশ করা হবে। আমি বের হব এবং জমিনে ভ্রমণ করব। এমনকি কোন এলাকা মানব বসতি বাদ থাকবে না যেখানে আমার পদচারণা না হবে। চল্লিশ রাত আমি অনবরত চলতে থাকব। তবে মক্কা ও মদীনা আমার চরণভূমি হতে পারবে না। আমি ওখানে বাঁধাগ্রস্ত হব। যখনই সেখানে প্রবেশ করার চেষ্টা করব, তখনই এক জন ফেরেস্তা তলোয়ার হাতে আমাকে বাঁধা প্রদান করবে। ঐ শহরের প্রত্যেক প্রবেশ পথে ফেরেস্তা নিয়োজিত থাকবে।
তখন রসুল করীম স. এ ঘটনা শুনাবার পর হাতে ছড়ি নিয়ে মিম্বরে মেরে বললেন যে, এই হল সে মদীনা ত্বাইয়েবাহ্! অত:পর হুজুর বললেন: সতর্ক থেকো! আমি তোমাদেরকে এ কথা বলি নাই যে, দাজ্জাল কি সিরিয়ার সামুদ্রিক এলাকাতে না কি ইয়ামানী সামুদ্রিক এলাকাতে! বরং সে হবে পূর্ব দিকে, পূর্ব দিকে, পূর্ব দিকে। (*****)
উল্লেখিত হাদীসে বর্ণিত দাজ্জাল হযরত তামীমে দারী (রা.) কে ৩ টি প্রশ্ন করেছিল। সেই ৩ টি প্রশ্ন,ও তার উত্তর এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট ভালভাবে অবলোকন করুন!
۞দাজ্জাল ও বিছানের বাগান۞
বিছান ফিলিস্তিনের একটি বাগানের নাম, যা বর্তমানে ইসরাঈল (ইয়াহুদী) কব্জায় অবস্থিত। এ এলাকা পূর্বকাল হতে খেজুর চাষের জন্য সুপ্রসিদ্ধ; কিন্তু বর্তমানে সেখানে কোন ভাল ফসলাদি কিছুই হয় না। যা দাজ্জালের কথার সত্যতার প্রমাণ।
দাজ্জালের ২য় প্রশ্ন ছিল: বুহাইরায়ে ত্ববরিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা? তাতে পানি আছে কি না? বুহয়ারায়ে ত্ববরিয়া অর্থাৎ ত্ববরিয়ার ছোট সমুদ্র। যা ইসরাঈলের উত্তর—পূর্ব দিকে জর্ডান সীমানার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থিত। বর্তমানে তার পানি কোন বাহ্যিক কারণ ব্যতিরেকেই ক্রমান্বয়ে কমছে।
দাজ্জালের ৩য় প্রশ্ন ছিল: “ঝগরা” ঝর্ণার পানির কি অবস্থা? “ঝগর” এটিও ইসরাঈলের মধ্যে মৃত সাগরের পূর্বে অবস্থিত। তার পানি বর্তমানে ক্রমান্বয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই তার পানি যখন একেবারেই পুরো শুকিয়ে যাবে তখন দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবে।
দাজ্জালের শারীরিক গঠন:
দাজ্জালের এক চোখ হবে কানা। গায়ের রং হবে লাল। শরীর হবে অত্যন্ত ভারী। কুঞ্চিত কেশ অর্থাৎ জন্মগতভাবে মাথার চুল হবে অত্যন্ত ঘন ও কোকড়ানো। যা দেখতে একেবারেই বিশ্রী ও বেমানান।
হযরত আনাছ (রা.) বলেন: রসুল করীম স. ইরশাদ করেন সকল নবীগণ নিজ নিজ উম্মাতকে কানা ও মিথ্যুক দাজ্জাল সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করেছেন। সতর্ক থেকো! সে কানা হবে; কিন্তু তোমাদের রব কানা নন। দাজ্জালের দু’চোখের মাঝখানে কাফের লিখা থাকবে। Ñ (সহীহ বুখারী)
মোট কথা দাজ্জাল সে এক জন যুবক ধরনের ভারী স্বাস্থবান হবে, লাল বর্ণের কোকড়ানো চুল হবে, দু’চোখের মধ্যে রোগ থাকবে। তন্মধ্যে এক চোখ কানা হবে এবং আঙ্গুরের মত চোখ দু’টো বের হয়ে থাকবে। তার কপালে দু’চোখের মাঝখানে কাফের শব্দ লেখা থাকবে; কিন্তু এ কাফের শব্দটা এক মাত্র ঈমানদার ব্যক্তিরাই অনুভাব করতে পারবে। ঈমানদার শিক্ষিত বা অশিক্ষিত যাই হোক না কেন ঈমানের আলোতে সকলেই এ লেখা দেখবে ও পড়তে পারবে। তখন তার ধেঁাকা হতে বাঁচতে সক্ষম হবে। অন্যথায় মানুষ যত বড়ই শিক্ষিত হোক না কেন Ñ চাই আমেরিকায় অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হোক না কেন; কিন্তু তার মধ্যে যদি ঈমানী ও আমলী চেতনা না থাকে তাহলে সে ঐ দিন দাজ্জালের কপালে লেখা কাফের শব্দ পড়তে সক্ষম হবে না।
۞দাজ্জালের আবাসস্থলঃ۞
ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা.) রেওয়ায়েত করেন নবীয়ে কারীম স. বলেন : স্মরণ রেখো! দাজ্জাল সিরিয়া আর ইয়ামন সমুদ্রের মাঝে আছে। অত:পর বলেন: না, বরং সেতো পূর্ব দিকে, পূর্ব দিকে, পূর্ব দিকে। তারপর হুজুর নিজের হাত মুবারক দ্বারা ঈশারা করে পূর্ব দিকের কথা বললেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপট: আরব দেশ থেকে পূর্ব দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, পশ্চিমা খৃস্টবাদীরাও ঐ অঞ্চলকে শয়তানী সমুদ্র, শয়তানী দ্বীপ বা জাহান্নামের দরজা বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। আরো বড় মজার ব্যাপার হল যে, শয়তানী সমুদ্র বা শয়তানী দ্বীপ হিসেবে পরিচিত দোন এলাকার শেষ মাথা গিয়ে “বাহরাল কাহিল” নামক দ্বীপ যা একেবারেই অনাবাদী অবস্থায় পড়ে আছে। তারই আশ—পাশে ভয়ানক গভীর পানি যাকে বলা হয় শয়তানী সমুদ্র, যা জাপানের পূর্ব—দক্ষিণ অসুজিয়াতী ইটালিয়ান এবং মারিয়া দ্বীপের কাছাকাছি গাজায় অবসিস্থত। তার থেকে আর একটু পূর্ব দিকে সামুদ্রিক এলাকা যা আমেরিকার অঙ্গরাজ্যের অন্তর্ভূক্ত। “বাহরে কাহেল” এর ঐ পাড়ে হল আমেরিকা। আর আমেরিকার কাছের সমুদ্রের মধ্যে ঐ জগত। মূলত ঐ জগতটা হল শয়তানী জগত। এ ট্রাই এ্যাঙ্গেলটা এমনই স্থানে অবস্থিত যে, বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির বিজ্ঞান ও প্লেন আর আধুনিক সর্ব উন্নত পানির নৌযান পর্যন্ত সেখানে যেতে অক্ষম। শুধু তাই নয়; বরং ওখানে যাওয়ার সাথে সাথে তা বিকল বলে হিম খেয়ে যায়।যেহেতু এ ভূপৃষ্ঠকে আল্লাহ্ তায়ালা গোলাকার করে সৃষ্টি করেছেন বিধায় হাদীসে বর্ণিত আল্লাহ্র নবী সা. পূর্ব দিকে ইশারা এ পূর্ব ঘুরে পশ্চিম হওয়াটা বিচিত্রতর কিছু নয়। (অর্থাৎ পৃথিবী গোলাকৃতি হওয়ায় পূর্ব ও পশ্চিম এ সংগে মিলিত যা পূর্বের শেষ তা পুনরায় পশ্চিমের শুরু।
দাজ্জালের চাল ও ধেঁাকা ঃ
হযরত হুযাইফা (রা.) বলেন: রসুল করীম স. ইরশাদ করেন: দাজ্জাল যখন আত্মপ্রকাশ করবে তখন তার কাছে আগুন ও পানি দোনটাই থাকবে। সুতরাং লোকেরা যেটাকে আগুন মনে করবে মূলত: তা হবে ঠাণ্ডা পানীয় আর যেটাকে লোকেরা ঠাণ্ডা পানীয় ধারণা করবে তা হবে মূলত: আগুন। তাই তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ঐ সময়ে পতিত হও তাহলে সে যেন ঐ কৃত্রিম আগুনের মাঝে ঝাপিয়ে পড়। কেননা উহা মূলত হবে ঠাণ্ডা মিষ্টি পানি।
(*******)
হযরত নাওয়াছ বিন ছামিআন (রা.) বলেন: একদা রসুল করীম স. দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন: তখন আমরা বললাম ইয়া রসুলুল্লাহ্! এই জমিনে দাজ্জাল কি রকম গতিতে ভ্রমণ করবে? তদুত্তরে আল্লাহ্র নবী ফরমাইলেন যে, আকাশে বৃষ্টির মেঘের গতিতে দ্রুত চলবে। সে এক এলাকাতে যাবে সেখানে গিয়ে তাদেরকে তার প্রতি ঈমান আনয়নের ব্যাপারে দাওয়াত দিবে, আহ্বান করবে। তখন তারা তার কথা বিশ্বাস করবে ও তাকে মেনে নিবে। পরে আসমানকে আদেশ করবে বৃষ্টি বর্ষনের জন্য। সাথে সাথে বৃষ্টি বর্ষণ হবে। জমিনকে হুকুম করবে গাছ—পালা, উদ্ভিদ জন্মাবার জন্য। সংগে সংগে তা হয়ে যাবে। সন্ধা বেলায় লোকজন গবাদি পশু চরায়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে তাদের চুটি গুলো উঁচু হবে, দুধের স্তন গুলি দুধে ভর্তি হবে, শরীর অত্যন্ত পুষ্ট হবে। আর এক গোত্রের কাছে যাবে তাদেরকেও সে তার উপর ঈমান আনয়নের প্রতি আহ্বান করবে; কিন্তু তারা তাকে অস্বীকার করবে। অত:পর দাজ্জাল ওখান থেকে ফিরে চলে যাবে। এতে করে সেখানে দূর্ভিক্ষ দেখা দিবে। তাদের সহায় সম্পদ কিছুই থাকবে না। সবই নি:স্ব হয়ে যাবে। ওদিকে দাজ্জাল ওখান থেকে অনাবাদ স্থানের দিকে পার হয়ে যাবে এবং যমিনকে তার ভিতরের সব কিছু বমি করে বের করে ফেলে দেয়ার জন্য হুকুম করবে। তখন জমিন তার পেটের সব কিছু ঐভাবে বমি করে ফেলে দিবে যেমনভাবে মৌমাছি তার পেটের সব মধু মুখ দিয়ে বের করে ফেলে দেয়।
(*******)
সাধারণত: সর্ব সাধারণের চিন্তাধারা এ রকম যে, দাজ্জাল তো এক জন বিশ্রী চেহারাবান হবে, বাস্! কিন্তু ব্যাপারটা তো এ রকমই শুধু নয়। আর শুধু এতটুকুই যদি হবে তাহলে দাজ্জালের ব্যাপারে সমস্ত নবীগণ উম্মতকে ভীতি প্রদর্শনের কারণ কি? বা প্রয়োজন কি ছিল বা আল্লাহ্র পক্ষ হতে এত কঠিন প্রতীক্ষা কেন হবে? কিন্তু তার বিশ্রী চেহারার সাথে সাথে তার কর্ম—কাণ্ড দুনিয়ার সামনে এমনইভাবে পেশ করা হবে যে, তামাম দুনিয়া তার কর্ম—কাণ্ডের সামনে মানুষ ভাবতেও সক্ষম হবে না যে, কি হচ্ছে? এক পর্যায়ে গিয়ে তো কথিত জ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবিরা তো বলে ফেলবে এই কর্মকাণ্ডের লোক তো কখনই দাজ্জাল হতে পারে না! অর্থাৎ দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের পূর্ব মুহুর্তে কয়েক বছর যাবত দুনিয়াতে মারামারি, কাটাকাটি, চুরি—ডাকাতি, খুনাখুনি, বেকারত্ব, অন্যায়—অবিচার, অসামাজিকতা, অমানবিক আচরণ বিধি ইত্যাদির চাপে কালো পৃথিবী একেবারেই সংকীর্ণ হয়ে উঠবে। একাকার হয়ে চতুর্দিক হতে নিরাপত্তা শেষ হয়ে জিরোতে পেঁৗছে যাবে। ৯৯% লোক অন্যায় অপরাধের সাথে মিশে যাবে। এহেন অবস্থাতে মানুষ হতাশাগ্রস্থ হয়ে ভাল ও উপযুক্ত এক জন নেতার তল্লাশিতে ঘুরপাক খেতে থাকবে যে, আল্লাহ্ পাক উপযুক্ত এক জন প্রতিনিধি (নেতার) ব্যবস্থা করে দেন কি—না! এর মধ্য দিয়ে আল্লাহ্ তায়ালা দাজ্জালের চেলা—বেলাদেরকে ভাল লিডারশিপ হিসেবে মানবজাতির হিতাকাঙ্খী করে অমানবতার যাতাকলের পেশন হতে রক্ষাকারী নামে মানুষের সামনে পেশ করবেন (পরীক্ষা স্বরূপ)। তখন দাজ্জাল বেকার লোকদেরকে কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করবে। দূর্ভিক্ষ কবলিত এলাকার লোকজনের জন্য অন্ন—বস্ত্র ও খাদ্য শস্যের ব্যবস্থা করবে। দুনিয়া থেকে সকল অন্যায় অবিচার দূরীভূত করে দিবে। এভাবে সে খোদায়ী দাবী করার পূর্বে সমস্ত জগতবাসীকে এমন মানবতা, সমবেদনা ও জনদরদীর রূপ প্রকাশ করবে যে, প্রায় সকলেই যারা বস্তুবাদী, পশ্চিমা ভাবাপন্য, সত্য—মিথ্যা মিডিয়ায় বিশ্বাসী তারা ঐ দাজ্জালের ভূয়সী প্রশংসায় আত্মহারা হয়ে যাবে যে, এমন ভাল মানুষ হয় না। যে গরীবের বন্ধু, অদ্বিতীয় সমবেদনাকারী ইত্যাদি ইত্যাদি।
অত:পর দাজ্জাল সাধারণ মানুষের মগজ ধোলাই এভাবে করবে যে, হে জগতবাসী! আমি এ সব কিছু নিজের থেকে করছি না; বরং খোদায়ী ক্ষমতায় এ সব আঞ্জাম হচ্ছে। খোদায়ে পাক আমাকে পাঠিয়েছেন তাই আমি আল্লাহ্র সাহায্যে এ সব কিছু করতে সক্ষম। বিধায় এক পর্যায়ে সে নবী হবার দাবী করে বসবে। এতে করে সমাজের দূর্বল ঈমানদাররা তার প্রতি ঝঁুকে পড়বে। হতে হতে এক পর্যায়ে সে খোদায়ী দাবী করে বসবে। আল্লাহ্ তায়ালা সমস্ত মুসলমানদেরকে দাজ্জালের সকল ফেৎনা ও ফাসাদ হতে হিফাজত করুন।
কিয়ামতের আগ মূহুর্তে “দাব্বাতুল আরদ্” নামক মাটি হতে এক প্রকার প্রাণী বের হবে। অর্থাৎ চাশতের নামাযের ওয়াক্তে হঠাৎ করে জমিন কাঁপবে, থর থর করে কেঁপে উঠবে, যেমন করে ভূমিকম্প হয়। এর কারণ মক্কায় অবস্থিত “ছফা” পাহাড় ফেটে যাবে এবং ঐ ফাটা দিয়ে সেই অদ্ভূত প্রাণী বের হয়ে আসবে যার চেহারার আকৃতি হবে মানুষের ন্যায়, মাথায় শিং হবে, তার এক হাতে মুসা (আ.) এর লাঠি থাকবে আর অপর হাতে থাকবে হযরত সুলাইমান (আ.) এর আংটি। সে এতই দ্রুতগামী প্রাণী হবে যে, অল্প সময়ের মধ্যে সমগ্র পৃথিবী চষে ফেলবে। মানুষের সাথে কথা বলবে। যারা তাকে বিশ্বাস করবে তার কপালে ঐ লাঠি দিয়ে একটা নিশানা লাগাবে যার দরূণ তার চেহারা চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। পক্ষান্তরে বেঈমানকে ঐ আংটি দ্বারা একটা দাগ লাগাবে যার দরূণ তার চেহারা আরো কুৎসিত হয়ে যাবে যা স্পষ্ট বোঝা যাবে। এর মধ্যে হঠাৎ করে ঐ প্রাণী উধাও হয়ে যাবে আর কোথাও তাকে পাওয়া যাবে না। এভাবে কিয়ামত অতি সন্নিকটে হয়ে যাবে।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) রেওয়ায়েত করেন যে, নবী করীম স. বলেন : ছয়টি আলামত প্রকাশ হবার আগেই নেক আমল করে নাও! ১) পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদয় হওয়া, ২) অগ্নিগিরি ও তার ধেঁায়া বের হওয়া, ৩) দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ, ৪) ব্যক্তিগত আজাব সমূহ, ৫) ঐ অদ্ভূত প্রাণী বের হওয়া এবং ৬) সম্মিলিত ও সমষ্টিগত আজাব আসার পূর্বে।
হযরত ইসহাক বিন আব্দুল্লাহ্ রেওয়ায়েত করেন, আমি হযরত আনাছ (রা.) কে বলতে শুনেছি, “স্পাহানের” সত্তর (৭০,০০০) ইয়াহুদী দাজ্জালের অনুসারী হবে যাদের দেহে সবুজ রংয়ের চাদর (পোশাক) হবে।
(******)
۞কিয়ামতের আলামতঃ পৃথিবীতে গরমের মাত্রা বেড়ে যাওয়া۞
বর্তমানে ই¯্রাঈলের ইয়াহুদী গোষ্ঠীর সবুজ রংয়ের কাপড় (পোশাক) অত্যন্ত আনন্দ ও স্ফূর্তি সহ বানাচ্ছে যা দাজ্জালের আগমনের সময় পরিধান করবে। এ কাপড় গুলি রেশমী (সিল্কের তৈরী)। কিয়ামত নিকটবতীর্ হওয়ার আরো একটি আলামত হল পৃথিবীতে গরমের ভাব অতি মাত্রায় বেড়ে যাওয়া।
۞কিয়ামতের আলামতঃ ইয়াহুদীদের গরগদ গাছের চাষাবাদ۞
নবীয়ে করীম স. বলেন: যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলমানগণ ইয়াহুদীদের সাথে কঠিন যুদ্ধ না করবে এবং মুসলমানরা এক এক করে ইয়াহুদী কতল না করবে ততক্ষণ কিয়ামত কায়েম হবে না। এমনকি ইয়াহুদি পাথর বা গাছের পিছনে আড়াল হয়ে পালাবে তখন প্রতিটি পাথর/গাছ ডেকে বলবে, হে মুসলিম! হে আল্লাহ্র বান্দা! এই যে আমার পিছনে ইয়াহুদী লুকিয়ে আছে, আস ওকে কতল কর। তবে “গরকদ গাছ” সে একমাত্র ইয়াহুদীদেরকে আশ্রয় দিবে।
(*******)
“গরকদ” গাছ কাঁটাযুক্ত গাছ যা সাধারণত জংলী গাছ, অনাবাদী স্থানেই জন্মে থাকে। এ গাছ ১৫ বছর বয়সে পূর্ণতা লাভ করে। গাছ গুলো কাছাকাছি করে লাগালে দেয়ালের কাজ দেয়। তার ফল একেবারেই অসুস্বাদু। দেখতে অত্যন্ত বিশ্রী। আদি কাল হতে এ গাছকে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। বর্তমান পৃথিবীতে ইয়াহুদীদের তরফ হতে এ গাছের যথেষ্ট চাষ হচ্ছে। ইসরাইলের মধ্যে এ গাছের অনেক চাষাবাদ আছে। ইসরাঈল ভারতকেও এ গাছের চাষাবাদের ব্যাপারে উৎসাহিত করছে। কেননা তাদের আত্মরক্ষার জন্য এ গাছের বিকল্প অন্য কিছু নেই।
কিন্তু এ ইয়াহুদী গোষ্ঠী পৃথিবীর মানুষকে ধেঁাকা দেয়ার উদ্দেশ্যে যতই উন্নত পন্থা অবলম্বন করুক না কেন আর প্রযুক্তি আবিস্কার করুক না কেন, যত শক্তিশালী মারণাস্ত্র তৈরী করুক না কেন; কিন্তু আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনকে তো আর ফাঁকি দিতে পারবে না। আল্লাহ্র কাছ থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবে না। হযরত হুজাইফা (রা.) বলেন: আমরা রসুল স. এর খিদমাতে উপস্থিত ছিলাম, হুজুর দাজ্জালের ফেৎনার আলোচনা করছিলেন। বললেন: তোমাদের মধ্য হতে কারোর ফেৎনা আমার কাছে দাজ্জালের ফেৎনা অপেক্ষাও বড়। কেননা ছোট হোক বা বড় সকল ফেৎনা দাজ্জালেন ফেৎনার উপরই ভিত্তি। সুতরাং যে ব্যক্তি দাজ্জালের ফেৎনার পূর্বে অন্য সব ফেৎনা হতে বাঁচতে পারল সে অবশ্যই দাজ্জালের ফেৎনা হতেও বাঁচতে পারবে। আল্লাহ্র কছম দাজ্জাল মুসলমানদেরকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তার দু’চোখের মাঝে কাফের শব্দ লেখা থাকবে।
۞কানা দাজ্জাল ও বেঈমান মুনাফিক۞
দাজ্জাল আসার পূর্বে ঈমানদার আর বেঈমান মোনাফেকদের মধ্যে বাছাই হয়ে যাবে। অর্থাৎ দাজ্জালের বহি:প্রকাশের আগেই এমন সব হালাত আর অবস্থা আসবে যার মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তির নর—নারীর, শিক্ষিত আর অশিক্ষিত সকলকেই নিজের ব্যাপারে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, সে কি নিজেকে হযরত মুহাম্মাদ স. এর বাহিনীর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করে নিয়ে চলবে (অর্থাৎ নবীর আদর্শে, নবীর মতামতে, নবীর মুহাব্বাতে নবীর আচরণে, নবীর মতাদর্শের সাথে নিজেকে শামিল করে নিয়ে চলতে হবে) অথবা দাজ্জালের ফেৎনার চাল বা স্কীমের সাথে (অর্থাৎ দাজ্জালের চলা বলা, দলীয় করণ, একাত্বতায়) নিজেকে বিলীন করে নিয়ে চলবে। উল্লেখিত দুই দলের যে কোন এক দলের সাথে নিজেকে শামিল করে নিয়ে চলবে।
বর্তমান বিশ্বে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে হয়ত দাজ্জালের ঐ ভ্রান্ত মতবাদ, মিথ্যাচারিতা, ধেঁাকাবাজি, প্রতারণা এগিয়ে চলছে। ইসলাম তার আপন গতিতে এগিয়ে চলছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রত্যেকে তার নিজ নিজ দেশের প্রতি লক্ষ্য করুন! দেশের বিশেষভাবে রাজনৈতিক অবস্থা বিচক্ষণতার সাথে পর্যবেক্ষণ করলে একেবারেই দিবালোকের ন্যায় উজ্জ্বল ও পরিস্কার যে, মানুষ হয়ত নিজেকে দাজ্জালের বাহিনীর সাথে শামিল করে (ধেঁাকা, প্রতারণা, মিথ্যাচারিতা, অরাজকতা, অন্যায়, অপরাধ, স্বেচ্ছাচারিতা) অগ্রসর হচ্ছে আর না হয় (উলামায়ে কেরাম আল্লাহ্ ওয়ালাদের সাহচর্যে, সৃজনশীলদের সঙ্গ নিয়ে) হযরত ইমাম মাহদী (র.) এর বাহিনীর সাথে শামিল করে অগ্রসর হচ্ছেন।
কেননা নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ্ স. ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন যে, আমার উম্মতের এক দল লোক তারা হকের উপর (দ্বীনের উপর, ন্যায়ের উপর, ইসলামের উপর) এমন অটল অবিচল, অনড় ও দৃঢ় থাকবে যে, তাদের বিরোধী দলের লোকেরা তাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না এবং তাদের সর্ব শেষ ওয়ালারা দাজ্জালের সাথে লড়াই করবে।
নবীয়ে করীম স. আরো বলেন: কিয়ামত কায়েম হবে না যে যাবত “ঘোঝ” কিরমানদের সাথে যুদ্ধ না করবে, যারা অনারব দুই গোত্র, যাদের মুখমণ্ডল হবে লাল বর্ণের, চ্যাপ্টা নাক বিশিষ্ট, চোখ গুলো ছোট ছোট। যেন তাদের চেহারা (যুদ্ধের) ডালের ন্যায় তাদের পায়ের জুতা পশমের তৈরী।
(********)
বর্তমান চিত্র: “ঘোঝ” এলাকাটা হল ইরানের পশ্চিমাঞ্চল, যা ঘোঝিস্তান নামে পরিচিত আর “কিরমান” হল ইরানের পূর্ব—দক্ষিণ এলাকার রাজধানী। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন: আমি রসুলুল্লাহ্ স. কে বলতে শুনেছি, দাজ্জাল ঘোঝ এবং কিরমানে অবশ্যই অবতরণ করবে। ৭০, ০০০ (সত্তর হাজার) লোকদের মাঝে যাদের চেহারা গুলো হবে চ্যাপ্টা চ্যাপ্টা ডালের মত। দাজ্জাল এবং দাজ্জালের দলবল সহ তাদের সকলের সম্পর্ক বর্তমানে বেশির ভাগ ইরানীদের সাথেই সম্পৃক্ত। দাজ্জালের আত্ম প্রকাশের স্থান স্পাহান থেকে হবে এবং দাজ্জালের সাথে ৭০,০০০ (সত্তর হাজার) ইয়াহুদী সফর সঙ্গী থাকবে। এর দু’টি অর্থ হতে পারে। প্রথমত: ইরানের উপর পরিপূর্ণ ক্ষমতা ইয়াহুদী শাসনে শাসিত হবে। দ্বিতীয়ত: ক্ষমতাতো ইরানীদের হাতে থাকবে; কিন্তু মূল পরামর্শদাতা বা পরিচালনার দ্বায়িত্ব থাকবে ইয়াহুদীদের হাতে।
প্রেক্ষাপট: স্পাহান সমস্ত ইয়াহুদী গোষ্ঠীর মধ্যে সর্বোচ্চ (তাদের ধারণা মতে) সম্মানিত গোষ্ঠী। স্পাহানের মধ্যে ইয়াহুদীদের অনেক বদ মার্কাজ (কেন্দ্র) অবস্থিত। স্পাহানের ইয়াহুদীদেরকে ইরানের অর্থনীতির ব্যাপারে মেরুদণ্ডের মর্যদা রাখে। ইরানের পররাষ্ট্র ও কূটনৈতিক সকল পলিসি বিশেষত: সশস্ত্র দিক নির্দেশনা সবই ইরানী ইয়াহুদী চিন্তা সম্পৃক্ত গবেষণাতে প্রস্তুত হয়। ইরানের ব্যাপারে সর্ব সাধারণ মুসলমানদের ধ্যান—ধারণা যে, ইরানের মধ্যে ইসলামী হুকুমত (্ইসলামী শাসন) প্রতিষ্ঠিত আছে। এটাও কিন্তু দাজ্জালের প্রচারণার একটি ধেঁাকাপূর্ণ মিডিয়া। বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ ব্যক্তিরা বলেন: যারাই সচেতনতার সাথে ইরানের মধ্যে ইসলামের নাম ব্যবহার করে যত গুনাহ আর নাফরমানী হয়, সম্ভবত: পশ্চিমা দেশ গুলোতেও এত গুনাহ হয় না। মজার ব্যাপার হল ধেঁাকা ও প্রতারণার সবচেয়ে বড় আশ্চর্য দিক হল সেখানে সব জিনিসের উপর (আধুনিক) ইসলামী লেবেল লাগিয়ে ক্রয়—বিক্রয় হচ্ছে। শরাব হোক বা কাবাব সুদ হোক বা হিজাব (পর্দা) সব জিনিসের উপর ইসলামী লেবেল লাগিয়ে বাজারে বিক্রী হচ্ছে।
নি:সন্দেহে বর্তমান ও বিগত সময় গুলোতে যুদ্ধ বিগ্রহের মধ্যে ইরান নিজস্ব গোপনীয়তা রক্ষা করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট দায়িত্ব পালন করেছে। বিশেষ করে আফগান ও ইরাকের চলমান যুদ্ধের ব্যাপার হতে শেষ পর্যন্ত আমেরিকার পক্ষ হয়ে ইরানের ভূমিকা একেবারে তুঙ্গে এবং যথা সম্ভব ইরান মোটেই ত্রুটি করে নাই। শুধু তাই নয়; বরং আফগান—ইরাক ধ্বংস করার চেষ্টা ও মেহনতে সে আমেরিকার ভূয়সী প্রশংসার অধিকারী হয়েছে। স্বয়ং আমেরিকার বক্তব্য ও স্বীকারোক্তি যে, যদি ইরানের সহায়তা না থাকত তাহলে এত দ্রুত গতিতে অতি অল্প সময়ে তালেবানদের ইসলামী শাসন ধ্বংস করা সম্ভব ছিল না। তাই আমেরিকা ইরানের ব্যাপারে ভূয়সী প্রশংসার শব্দ উচ্চারণ করেছে। যার অর্থ হল: হে ইরানী ভাই! যদি তোমরা না হতে তাহলে কাবুল এবং বাগদাদের বিজয় সম্ভব ছিল না। ইরানের নায়েবে আমীর মুহাম্মাদ আলী বাত্বিঘী এভাবে বর্ণনা দেন যে, যদি ইরান প্রশাসনের বিশেষ সহায়তা না থাকত তাহলে কাবুল এবং বাগদাদের বিজয় হতে পারত না।এবার বুঝুন! ইরাক যুদ্ধের আগে আমেরিকা আর ইরানের আলোচনা বৈঠকের উদ্দেশ্যে ইরানী আন্দোলনের উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটন সফর করে। ইরানের বড় মাপের এক খতিব তেহরানের জুমআর খুতবায় বলেন: যদি ইরান না হত তাহলে আমেরিকা সে আফগানিস্তানের ধুলাবালির মধ্যে শেষ হয়ে যেত। বিধায় ইরানের এ রাজাকারী ভূমিকার প্রতিদান হিসেবে আমেরিকা ইরাকের সংসদে ইরানী শিয়া গোষ্ঠীর বড় একটি দল বসিয়ে দিতে পেরে নিজেকে বড় ধন্য মনে করছে ও যথেষ্ট সাধুবাদ যুগিয়েছে। এরই ভিত্তিতে যখন আমেরিকার সৈন্য বাহিনী ইরাকের সংসদে জোরপূর্বক শিয়া গোষ্ঠীর সংখ্যা গরিষ্ঠতা কায়েম করে ইরাকি স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করে তখন সর্ব প্রথম এর স্বাধীনতার সমর্থন ঘোষণা করে সে হল ইরান। পরিশেষে ইরানী প্রধান “মাহমুদ আহমদ নাঝাদি” তার বিশেষ বৈঠকে বলেন: ইরান পশ্চিমা দেশ গুলোর জন্য মোটেই কোন ভয়ের কারন নয়। এমনকি ইসরাঈলী ইয়াহুদী প্রশাসনের জন্যও ভয়ের কোন কারণ নয়।
۞কানা দাজ্জাল আর বর্তমান প্রেক্ষাপটঃ۞
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! সর্ব শেষ আপনারা ভালভাবেই অবগত হয়েছেন যে, দাজ্জালের ব্যাপারে কত গুলি হাদিসের মধ্যে ইরানের সম্পর্কের কথা একেবারেই স্পষ্ট। ইরান এবং দাজ্জাল Ñ পরস্পরের সম্পর্ক একেবারেই প্রকাশ। মিডিয়ার অপপ্রচার ও মিডিয়ার মিথ্যাচারিতা সবই দাজ্জালের ফেৎনার অন্তর্ভূক্ত। যেমন, বর্তমান যুগের সকল বাতেলপন্থীদের একাত্বতা এ মর্মে যে,মিথ্যা এমনভাবে বল ও এমনভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে প্রচার কর যেন তা সত্যে পরিণত হয়ে যায়। অবাস্তবকে বাস্তবের রূপ দিয়ে এমনভাবে প্রচার করতে থাক যাতে করে আম জনতা অবাস্তবটাকে সত্য আর বাস্তবিক বলে বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়। যার কারণেই জনৈক জ্ঞান পাপী কথিত দার্শনিক বলেন, মিথ্যা এত বেশি বল যেন তা সত্যে পরিণত হয়ে যায়। যদি তা সত্যে পরিণত নাও হয় কমপক্ষে এতটুকু যেন অবশ্যই হয় যে, মানুষ সন্দিহান হয়ে পড়ে। এটাই হল বর্তমান প্রগতি ও ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল উন্নতির মূলনীতি।
যার দরূণ বর্তমান ইয়াহুদী খৃস্টান ও তাদের দোসরদের দ্বারা বিশ্ব চক্রান্তের স্বীকার, মানব গোষ্ঠী দানবের বেড়াজালে আবদ্ধ। তাদের যাবতীয় প্রচার মাধ্যম গুলো রেডিও, টেলিভিশন ও নেটের সকল নারকীয় জগত এবং পত্রিকা, ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বই পুস্তক, নভেল থেকে শুরু করে শিক্ষা, বক্তৃতা, আলোচনা ইত্যাদি সব কিছুতেই মিথ্যার সম্প্রচার, আলো বাতাসেও অসত্যের ছড়াছড়ি আর অবাস্তবের ঝুলি ইত্যাদি ….. …. …. ।
কিন্তু তাদের স্মরণ রাখা উচিত যে, এভাবে মিথ্যা, অসত্য, অবাস্তবের বুলি আর কত উড়াবে! তাদের কি এ কথা জানা নেই যে, মিথ্যা কখনও সত্য হয় না আর সত্য কখনও মিথ্যা হয় না। যেমন গ্রাম্য কথায় বলে, “পাদ মেরে কাশ দিয়ে ঢাকা যায় না”। মিথ্যা তো মিথ্যা আর সত্য তো সত্যই। মিথ্যার ক্ষয় নিশ্চিত, সত্যের জয় নিশ্চিত। মিথ্যা তার মূল চেহারা নিয়ে সে এক দিন অবশ্যই উন্মোচিত হবে আর সত্য তার বাস্তব রূপ নিয়ে অবশ্যই সে উদিত হবে। আজ না হয় কাল …….. ।
۞কিয়ামতের আর ইয়াজুজ—মাজুজ۞
কিয়ামতের পূর্ব মূহুর্তে ঘটবে ইয়াজুজ মাজুজের বহি:প্রকাশ। হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামের খেলাফতের সময় কালেই ইয়াজুজ মাজুজ বের হবে। তাদের সংখ্যা এত পরিমাণের হবে যে, তাদের অর্ধেক সংখ্যক লোক “বুহাইরায়ে ত্ববরিয়্যাহ্”—র সমস্ত পানি খেয়ে শেষ করে ফেলবে। হযরত ঈস আলাইহিস্ সালাম আল্লাহ্র নির্দেশে মুসলমানদেরকে ত্বুর পাহাড়ে নিয়ে যাবেন। এর মধ্যে ওরা অন্যান্য লোকদেরকে মেরে ফেলবে। এ ভূখণ্ডের মানুষ মেরে ফেলার পর তারা আসমানের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে। তখন সে সব তীর (খোদায়ী কুদরতী ফায়সালায়) রক্তাক্ত হয়ে জমিনে ফিরে আসবে। তখন ইয়াজুজ—মাজুজরা (অতি আনন্দে) বলাবলি করতে থাকবে যে, আমরা আসমান ওয়ালাদেরকে কতল করে ফেলেছি।
শুরু লগ্নে ইয়াজুজ—মাজুজ সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের চরণ ভূমিতে সীমাহীন ঝগড়া—ফাসাদ ও ফিৎনা সৃষ্টিকারী ছিল। তখন ঐ এলাকার বাসিন্দাদের কাকুতি মিনতিক্রমে বাদশাহ হযরত ইস্কেন্দার জিলকরনাইন (র.) মস্ত বড় শিশা ঢালা প্রাচীর কায়েম করে দেন এবং ওখানেই তারা আবদ্ধ হয়ে পড়ে।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
********* ********** ********** ******** ************ ************
তারা বলল: হে জিলকরনাইন! নিশ্চয় ইয়াজুজ—মাজুজের দলেরা জমিনে মারাত্মক আকারে ফিৎনা—ফাসাদ করছে। তাই আমরা আপনার জন্য আমরা যদি খরচাদি জমা করে দিই তাহলে আপনি আমাদের আর ওদের মাঝে একটি প্রাচীর তৈরী করে দিন। বাদশাহ ইস্কেন্দার জিলকরনাইন (রহ.) বললেন: আমার রব আমাকে যা সামর্থ দিয়েছেন তাই উত্তম। তবে তোমরা আমার কাজে একটু সহযোগীতা কর শক্তি সামর্থ দিয়ে। তাহলে আমি তোমাদের আর তাদের মাঝে একটি প্রাচীর কায়েম করে দিই। সুতরাং তোমরা লোহার বড় বড় পাত নিয়ে আস! অত:পর যখন দুই পাহাড়ের মাঝে খাড়া করে দিলেন তখন তিনি বললেন যে, এর উপর তামা দিয়ে ঢালাই করে দিলেন। তখন তারা ঐ প্রাচীরকে ছিদ্রও করতে পারল না বা ওটাকে খুলতেও পারল না। অত:পর তিনি বললেন যে, এটা হল আমার রবের রহমত (যে তারা ওখান থেকে বের হয়ে আর কোন গণ্ডগোল করতে পারছে না; বরং তারা সেখানে আবদ্ধ থেকে গেল।) তবে যখন আমার রবের ওয়াদাকৃত সময় এসে যাবে ওটাকে (প্রাচীরকে) সরায়ে সমতল ভূমিতে পরিণত করে দিবেন এবং আমর রবের ওয়াদা অবশ্যই সত্য।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন: রসুলে কারীম স. বলেন: ইয়াজুজ—মাজুজ প্রতি দিন (ঐ আবদ্ধ প্রাচীরের ভিতর থেকে) এই পরিমাণে দেওয়াল খনন করতে থাকে যে, সূর্যের আলো দেখতে পায়। তখন তাদের দলনেতা বলে যে, আজকের মত এখানে রেখে চল, অবশিষ্টাংশ কাল এসে খনন করো! সুতরাং আল্লাহ্র নির্দেশে ঐ প্রাচীর পূণরায় গত দিনের ন্যায় আবার পুরা হয়ে যায়; কিন্তু যে দিন তাদের বন্দীশালার কারা জীবনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহ্ পাক তাদেরকে বের করার ইচ্ছা করবেন সে দিন তারা দেওয়াল খনন করবে বাকি অংশ টুকু আজ রেখে যাওয়ার সময় তাদের দল নেতা বলবে, চল কাল এসে বাকি অংশ টুকু পুরা করে নিও ইনশাআল্লাহ্। তো আজ ইনশাআল্লাহ্ বলার কারণে আগামী কাল এসে ঐ খনন টুকু বহাল পাবে যা গত কাল পর্যন্ত রেখে গিয়েছিল। আর কাজ করতে করতে তারা যখন বের হয়ে আসবে, এসে পানি খেতে থাকবে তো সব পানি শেষ করে ফেলবে। অন্য সব মানুষ যার যার দূর্গে আশ্রয় নিতে থাকবে। দূর্গের বাইরের কেউ বাঁচতে পারবে না। সকলকে তারা কতল করে ফেলবে। তারপর ওরা ওদের তীর আসমানের দিকে মারবে যা রক্তাক্ত হয়ে জমিনের দিকে ফিরে আসবে। এতে করে তারা ধারণা করবে যে, ওরা আসমান ওয়ালাদের উপর বিজয় অর্জন করেছে। অত:পর আল্লাহ্ পাক ওদের ঘাড়ের উপর একটা পোকা ……… ….. । এতে ওরা সব মারা যাবে।
ঐ ইয়াজুজ—মাজুজের লোকেরা জমিনে বের হলে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম মুসলমানদেরকে সাথে করে নিয়ে ত্বুর পাহাড়ে আশ্রয় নিবেন। ওদিকে তাদের মুসলমানদের খানাপিনার রসদপত্র সবই শেষ হয়ে যাবে, এমনকি একটা গরুর মাথা শত দিনার অপেক্ষা অনেক মূল্যবান হয়ে দাঁড়াবে। তখন হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম ও অন্যান্য সাথীগণ সকলেই এ সকল ফেৎনা হতে আল্লাহ্র কাছে পানাহ চাইবেন। আল্লাহ্ পাক ইয়াজুজ—মাজুজের উপর এক কঠিন আজাব পাঠাবেন যা ওদের ধ্বংসের কারণ হবে। অর্থাৎ তাদের ঘাড়ের উপর একটা পক্ষাঘাত পয়দা করে দিবেন যার কারণে ওরা সকলেই মুহুর্তের মধ্যেই মারা যাবে। যেমন এক জন লোক মারা যায়। তারপর হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম এবং তাঁর সাথীগণ ত্বুর পাহাড় হতে নিচে নেমে আসবেন; কিন্তু জমিনে ঐ সময় এক বিঘাত জায়গাও ওদের লাশ হতে খালি থাকবে না। আর ওদের পচা লাশের দূর্গন্ধের কারণে এই জমিনে বিচরণ ক্ষমতা থাকবে না। তখন হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম ও তার সাথীগণ আল্লাহ্ পাকের নিকট প্রাণ মন নি:শেষ হয়ে দুয়া করবেন। আল্লাহ্ পাক এক প্রকারের পাখি সৃষ্টি করে দিবেন যাদের গর্দান গুলো হবে উটের ন্যায়। ঐ পাখিরা তাদের লাশ গুলোকে উঠিয়ে নিয়ে আল্লাহ্র নির্দেশে কোন অজানা স্থানে নিয়ে ফেলে দিয়ে আসবে। তারপর আল্লাহ্ তায়ালা এমন বৃষ্টি বর্ষন করবেন যা সমস্ত ঘরে বাইরে পেঁৗছে যাবে এবং পুরা জমিন ধূয়ে পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাগানের ন্যায় দূর্গন্ধ মুক্ত হয়ে উঠবে।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) রেওয়ায়েত করেন: রসুলুল্লাহ্ স. ইরশাদ করেন: তিনটি জিনিস যখন বের হবে তখন যে পূর্বে ঈমান না এনেছে এরপর আর ঈমান আনার দ্বারা তার লাভ হবে না। এর পূর্বে যে নেক আমল না করেছে ঐ তিন জিনিসের পর নেক আমাল করলে আর তার লাভ হবে না। ক) পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদয় হওয়া, খ) দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ, গ) মাটি হতে সেই অদ্ভূত জন্তু বের হওয়া।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) অন্য রেওয়ায়েতে বর্ণনা করেন: রসুল কারীম স. ইরশাদ করেন: যখন আল্লাহ্র জমিনে আল্লাহ্র নাফরমানি সীমাতীতভাবে বাড়তে থাকবে, সৎ কাজের আদেশ করা প্রায় একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে, মন্দ ও অন্যায় কাজ বাড়তে থাকবে, অন্যায় কাজ হতে দেখেও নিষেধ করবে না, তখন এমনি এক মুহুর্ত আসবে যেখানে সূর্য প্রতি দিন আল্লাহ্ পাকের আরশের সামনে সিজদারত অবস্থায় আল্লাহ্র কাছ থেকে অনুমতি নেয় যে, কোন্ পথে সে উদয় হবে? এভাবে চন্দ্রও প্রতি দিন আল্লাহ্র কাছে সিজদারত অবস্থায় অনুমতি গ্রহণ করে উদয়ের জন্য; কিন্তু ঐ রকম সীমাতীত নাফরমানি ও গুনাহের সময় তারা উভয়েই উদয়ের জন্য আল্লাহ্র কাছে অনুমতি চাবে; কিন্তু ঐ রাতে আল্লাহ্ পাক তাদেরকে অনুমতি দিবেন না উদয় হবার জন্য। এ অবস্থায় ঐ একটি রাত্রটা তিন রাত পরিমাণ সময় অতিবাহিত হয়ে যাবে সূর্যোদয় না হয়েই। অর্থাৎ সূর্যের উদয় স্থগিত থাকবে তিন রাত পরিমান আর চন্দ্রের উদয় স্থগিত থাকবে দুই রাত পরিমাণ। আবার রাতের এ দীর্ঘতা এক মাত্র তাহাজ্জুদ গুজার লোকেরা ব্যতিত অন্য কেউ আর অনুভবও করতে পারবে না। তবে সে সব তাহাজ্জুদ গুজারদের সংখ্যা মুসলিম জাহানের মধ্যে একেবারেই নগন্য পরিমান হবেন। অত:পর যখন তিন রাত্র পরিমাণ সময় অতিবাহিত হয়ে যাবে তখন আল্লাহ্ পাক হযরত জিবরাঈল আ. কে সূর্যের কাছে পাঠিয়ে খবর বলবেন যে, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তোমাদেরকে (চন্দ্র—সূর্যকে) পশ্চিম দিক হতে উদয় হবার নির্দেশ করেছেন; কিন্তু সে দিন চন্দ্র, সূর্য কোনটার মধ্যেই জ্যোতি থাকবে না। অত:পর উভয়েই জ্যোতি বিহীন অবস্থায় কালো হয়ে উদয় হবে। অর্থাৎ চন্দ্র—সূর্যের গ্রহণের ন্যায় জ্যোতি বিহীন অবস্থায় উদয় হবে। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন: চন্দ্র—সূর্যকে একত্রিত করবেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন: ***** ***** অর্থ: যখন সূর্য নিস্তেজ হয়ে যাবে তখন সূর্য উদয় হবে, দু’টো উট ও ঘোড়ার ন্যায় উঠবে। তারপর সূর্য ও চন্দ্র উল্টো দিক হতে চলতে চলতে আকাশের অর্ধ পরিমাণ অতিক্রম করবে তখন জিব্রাঈল আ. এসে চন্দ্র—সূর্যের মাথার শিং ধরে পূণরায় পশ্চিম দিকে নিয়ে যাবে। তখন আর পশ্চিমা উদয়ের স্থান হতে অস্ত যাবে না; কিন্তু তখন অস্ত যাবে তো তওবার দরজা দিয়ে। এর পর তওবা কবুল হওয়ার দরজার কপাট (পাল্লা) বন্ধ করে দেয়া হবে। তারপর মনে হবে যেন এ দিকে কোন ফাটা / খোলা কিছুই ছিল না। যখন তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে তখন থেকে আর কারোর কোন তওবা কবুল হবে না। এখন থেকে ঈমান আনলে নতুনভাবে নেক আমাল করলে যারা পূর্বে করত না, তা কবুল হবে না। হ্যঁা যারা নেক আমাল পূর্ব হতে করত তাদের নেক আমল কবুল হবে, অন্যথায় নয়।
শেষে রসুলুল্লাহ্ স. বলেন: সূর্য পশ্চিম দিক হতে উদয় হবার পর লোক দুনিয়াতে বসবাস করবে আর মাত্র ১২০ (এক শত বিশ) বছর পর্যন্ত।
(******)
অত:পর যখন দুনিয়ার ধ্বংস ও ই¯্রাফিল আ. এর শিংগায় ফুৎকার একেবারেই নিকটবর্তী ও ঘনীভূত হয়ে আসবে তখন আদন শহরের গর্ত হতে অগ্নিগিরি বের হয়ে আসবে, যা মানুষকে চালিয়ে চালিয়ে হাশরের ময়দানের দিকে একত্রিত করতে থাকবে। মানুষ এদিক ওদিক দিক—দিগন্ত না পেয়ে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে সমবেত হয়ে চলবে। শুধু মানুষ নয়; বরং মানব, দানব, চতুষ্পদ জীবজন্তু, পশু—পখি, কীট—পতঙ্গ এক কথায় সকল প্রকার প্রাণী একত্রিত হবার চেষ্টা করবে। ইত্যবসরে লোক জন বাজারে কেনা বেচার কাজে মগ্ন অবস্থায় হঠাৎ করে বিকট আকারের বজ্র কণ্ঠ আসমান থেকে ধেয়ে আসবে। এতে করে অর্ধেক লোক বেহুশ অবস্থায় তিন দিন সময় কাটিয়ে ফেলবে। বাকী অর্ধেক লোক মাতাল অবস্থায় নিজের পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকবে। আল্লাহ্ পাক বলেন:
********** ********** **************
এর মধ্য দিয়ে হঠাৎ করে আবার একটি কঠিন বজ্র কণ্ঠ শোনা যাবে, যা পূর্বের থেকেও আরো ভয়ানক। এ ভয়ানক আওয়াজে তামাম দুনিয়ার সকল প্রাণী সবই মারা যাবে। আল্লাহ্র এই জমিনে কোন এক জন জ্বিন, ইনছান, শয়তান, চতুষ্পদ জীব—জন্তু বা প্রাণি জগত বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। এর পর আল্লাহ্ পাক সবই শেষ করে দিবেন:
(*********** ********* *******) (********* ***)